শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রথম সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই নানা অভিযোগ আর গুঞ্জণের পরে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে এই পরিবর্তন এসেছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে কথা বলার পরে এই পরিবর্তন অবশ্যাম্ভাবী বলে ধারণা করা হচ্ছিল রাজনৈতিক মহলে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কী করেন, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ যেসব অভিযোগে শোভন-রাব্বানী অভিযুক্ত সেগুলো নতুন নেতৃত্বকেও গ্রাস করে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা-বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গেছে সামাজিক মাধ্যমে। তবে এই বিষয়ে ওবায়দুল কাদের গতকালই তাদের কর্মপরিধি সর্ম্পকে আভাস দিয়েছেন, ‘ভারপ্রাপ্তরা শুধুমাত্র পরবর্তী সম্মেলনের প্রস্তুতি নেবেন। কোন ইউনিটের কমিটি করার কথা তাদেরকে বলা হয়নি বা তারা করতে পারবেন না’। কারণ কমিটি করার ওইসব কাজেই আগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ।
দেশের আন্দোলন, সংগ্রাম ও রাজনীতিতে ছাত্রদের ভূমিকার রয়েছে উজ্জ্বল ইতিহাস। মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগও জড়িয়ে রয়েছে সেইসব ইতিহাসের নানা শাখা-প্রশাখায়। দীর্ঘদিন ধরে দেশের প্রচলিত রাজনীতির বিভিন্ন ধারায় ছাত্র রাজনীতি কলুষিত হয়েছে নানা জানা-অজানা কারণে। ছাত্র রাজনীতিকে সেই ধারা থেকে ফেরাতে কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে বহুবছর দেখা না গেলেও শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপ একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে আমাদের ধারণা।
দায়িত্বপ্রাপ্ত হবার পরে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘পূর্বের ধারাবাহিকতা ও ছাত্রলীগের সোনালি ইতিহাসের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা ছাত্রলীগকে এমন জায়গায় দাঁড় করাতে চাই যেখানে ছাত্রলীগ হবে একটাই ব্যানারে।’ চাঁদাবাজি বা টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধেও নানা কথা বলেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের এই ছাত্রনেতা।
নতুন নেতৃত্বের কথা শুনতে ভাল মনে হলেও সামনের দিনগুলিতে তাদেরকে আসলে কর্মে প্রমাণ করতে হবে তাদের কথা। শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশ রক্ষার্থে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব যে আরও বেশি, সেটিও তাদের স্মরণ রাখতে হবে বলে আমরা মনে করি। আমাদের আশাবাদ, ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সবার কার্যকর সহযোগিতা ও সদিচ্ছায় দেশের শিক্ষাঙ্গনে সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকবে।