চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

প্রণব মুখার্জীর বই নিয়ে বাংলাদেশে কেন এত আলোচনা?

বাংলাদেশে এখন আলোচনার বড় বিষয় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর আত্মজীবনী ‘বাই দ্য কোয়ালিশন ইয়ারস ১৯৯৬-২০১২’। হোক প্রতিবেশী দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, তারপরও অন্য একটি দেশের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানের লেখা বইয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কেন আলোচনার ঝড়?

গত ১৩ অক্টোবর প্রকাশিত বইটিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি বড় অংশ উঠে আসাতেই মূলত এত আলোচনা-সমালোচনা।

সেখানে উঠে এসেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের কিছু সময় পরিক্রমা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার কিছু বিষয়। সে সময়ে আটক হয়ে বিশেষ কারাগারে থাকা শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে তিনি ভূমিকা নিয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেছেন প্রণব মুখার্জী।

তিনি দুজনকে মুক্ত করার জন্য হস্তক্ষেপ করতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকেও অনুরোধ করেন।

তখন সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল মইন উ আহমেদ। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর তাকে সরিয়ে দেওয়া হবে এমন আশঙ্কা ছিলো তার। তবে হাসিনা ফিরলেও তেমনটা হবে না বলে নিজে দায়িত্ব নেন প্রণব।

এরপর ২০০৯ সালের পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন মইন উ আহমেদ।

প্রণব মুখার্জীর বইটিতে উঠে এসেছে আরো নানান কথা: ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ জরুরি অবস্থা জারি করেন। ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা করে তিনি একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন। প্রথম সারির বেশির ভাগ রাজনৈতিক নেতা ছিলেন কারাগারে। জেলে ছিলেন শেখ হাসিনাও।

এ সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে অব্যাহতভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে ভারত। এমনটা জানিয়ে প্রণব মুখার্জী তার বইতে লিখেছেন, এর মধ্য দিয়ে আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে, বিশ্বাসযোগ্য, মুক্ত ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরি।

বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ তুলে ধরা হয়েছে ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি সাময়িকী ইন্ডিয়া টুডের চলতি সংখ্যায়।

বাই দি কোয়ালিশনের প্রকাশনা অনুষ্ঠান

প্রণব মুখার্জীর বইতে উল্লেখ আছে, ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ ছয় দিনের ভারত সফরে যান। এ সময় প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় মইনের। প্রণব মুখার্জী তার বইতে লিখেছেন, অনানুষ্ঠানিক আলোচনার সময়, আমি তাকে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির গুরুত্ব বোঝাই। তিনি এই ভয় পাচ্ছিলেন যে শেখ হাসিনা বের হয়ে আসার পর তাকে (জেনারেল মইন) চাকরিচ্যুত করতে পারেন। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্ব নিই এবং শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলেও তার বহাল থাকার ব্যাপারে তাকে আশ্বস্ত করি।

আত্মজীবনীতে প্রণব মুখার্জী আরো জানান, আমি খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা উভয়ের মুক্তির ব্যাপারে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউর বুশের অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাই। তৎকালীন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এম কে নারায়ণের মাধ্যমে আমার হস্তক্ষেপে আমি সব রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি এবং দেশটির স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করেছিলাম।

এর কয়েক বছর পরের ঘটনা জানিয়ে প্রণব মুখার্জী তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন, বেশ কয়েক বছর পর, জেনারেল মইনের যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসার পথ সহজ করে দিই, তখন তিনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন।

প্রণব মুখার্জী লিখেছেন, শেখ হাসিনা আমাদের ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধু। আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির মাধ্যমে ভারত তার দাবি পূরণে সহায়তা করার চেষ্টা করেছে। শেখ হাসিনা কারাগারে থাকার সময় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা তাকে পরিত্যাগ করলে আমি তাদের ভর্ৎসনা করে বলি, কেউ যখন এমন বিপদে থাকে, তখন তাকে ত্যাগ করা অনৈতিক। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হয়। শেখ হাসিনা বিপুল বিজয় পান।

এই বই প্রকাশিত হওয়ার পরে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে প্রণব মুখার্জী বলেন, ১৯৭১ সালে জন্ম নেয়া ১২ বা ১৩ কোটি মানুষের এই দেশ। আমি এখনও স্মরণ করি তখনকার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পার্লামেন্টের উভয়কক্ষে একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এই হাউজকে জানিয়ে আনন্দিত হচ্ছি যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এখন ঢাকা হলো মুক্ত বাংলাদেশের মুক্ত রাজধানী।’