এক.
জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট-জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এমসিকিউ থাকবে না বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রধান কর্মকর্তা শিক্ষাসচিব মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন সম্প্রতি বেশ গুরুত্বসহকারেই বলেছেন। তাছাড়া, বাংলা ও ইংরেজির মত দ্বিপত্রযুক্ত বিষয়কে একীভূত করে পরীক্ষার বিষয়ের সংখ্যা ও মোট নম্বর কমানোর কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি ইতিমধ্যে জুনিয়র পরীক্ষার্থীরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছে। এবং সে অনুযায়ীই তারা আগামী পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সমস্যা হল, সরকার এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোন প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। কিংবা করতে পারেনি। অথচ, এই ছেলেমেয়েদের চূড়ান্ত পরীক্ষার বাকি আর মাত্র পাঁচ মাস।
আগামী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাতেও এমসিকিউ তুলে দেওয়া হবে মর্মে শিক্ষাসচিব মিডিয়ার সামনে একাধিকবার কথা বলেছেন। কিন্তু, এবারেও কোন অগ্রগতি কিংবা চূড়ান্ত আপডেট কারো জানা নেই।
দুই.
বিভিন্ন দাবীতে বেসরকারি শিক্ষকদের সাম্প্রতিক আন্দোলনের এক পর্যায়ে শিক্ষা ও অর্থমন্ত্রণালয়ের দু’জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসে আন্দোলনরত শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় মেনে নেওয়ার ওয়াদা করেন। বিষয়টি এ পর্যন্তই। অফিসিয়ালি কোন সিদ্ধান্তের খবর কেউ বলতে পারেনি।
তিন.
সবশেষে যে বিষয়ে আলোকপাত করব তা হল, সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত অভাবিত বিপুল আন্দোলনের এক পর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকারি চাকরিতে সব ধরণের কোটা বাতিলের কথা জাতীয় সংসদে জানিয়ে দেন। একই সাথে তিনি আন্দোলনরত ছাত্রদের রাজপথ ছেড়ে ক্লাসরুমে ফিরে যাওয়ার আহবান জানান।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে ছাত্ররা আন্দোলন স্থগিত রেখে ক্লাসে ফিরেন। এদিকে পর্দার আড়ালে নানান নাটকীয়তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেননি। সদ্য রাষ্ট্রীয় সফর শেষে নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে কোটা বাতিলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর পূর্বের অবস্থানের কথা উপস্থিত সবাইকে জানিয়ে দেন।
এদিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবদ্বয়ের সাম্প্রতিক বক্তব্যে পুরো বিষয়টি নিয়ে এক ধরণের অস্পষ্টতা, দ্বিধাদ্বন্দ্ব তথা সময় ক্ষেপণের লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠে। যদিও সরকারের মন্ত্রীদের কেউ কেউ ছাত্রদের ধৈর্য ধরতে বলেন।
আন্দোলনরত ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মোতাবেক ‘কোটা সংস্কার’ বিষয়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের একটা নির্দিষ্ট সময়ের আল্টিমেটাম দেন। তাদের দেয়া ঘোষণা মতে, এই সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে তারা আবারো আন্দোলন কর্মসূচির দিকে যাবেন। সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে
প্রজ্ঞাপন জারিতে বিলম্ব করার কারণে ছাত্ররা আবারো আন্দোলনের ডাক দিয়েছে এবং বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আন্দোলনকারীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের মত কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে দুঃখজনক।
চার.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন কোটা সংস্কার/বাতিল করার বিষের তার স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করেছেন, সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উচিত ছিল তা বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। বাতিল হবে না সংস্কার হবে তা নীতিনির্ধারকদের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। পুরো বিষয়টি এখন টালবাহানার মত মনে হচ্ছে। সরকারের ‘শত্রুপক্ষ’ এ ধরণের সময় ক্ষেপণ কিংবা টালবাহানায় ভিন্ন সুযোগ নিবে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায়না। আর এমন কিছু হলে, তার দায় সরকারের উপরই বর্তায়।
উপসংহার.
সরকারের বিভিন্ন বিভাগ বিভিন্ন বিষয়ে যখন কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় এবং তা পাবলিকলি প্রকাশ করে, এ ধরণের সিদ্ধান্তগুলো সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করার মত বিষয় হলে, তা জারি করতে সরকারের কিসের এত দ্বিধাদ্বন্ধ?
সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারার অস্থিরতায় একমাত্র অসুস্থরাই ভোগে।
প্রশ্ন হলো, সবদিক থেকে এত সফলতার দাবি যারা করছে, সেই সরকার কি এখন অস্থিরতায় ভুগছে ?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)