বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের গোপন সম্পদের তথ্য ফাঁস করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে প্যারাডাইস পেপারস। ফাঁস হওয়া নথিতে ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নাম আছে। আলোচিত প্যারাডাইস পেপারস সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে তার আদ্যোপান্ত প্রকাশ করেছে বিবিসি।
প্যারাডাইস পেপারস কী?
প্যারাডাইস পেপারস বিশ্বের ২৫ হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক লেনদেন ও মালিকানা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যভাণ্ডার বা ডাটাবেজ, যে প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক পৃথিবীর ১৮০টি দেশের ধনী, সুপরিচিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ১ কোটি ৩৪ লাখ গোপন নথির সমন্বয়ে গঠিত এই ডাটাবেসে রয়েছে ১৪শ’ গিগাবাইটেরও বেশি ডাটা।
প্যারাডাইস পেপারসে যাদের নাম আসছে
বিশ্বের ২৫ হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক লেনদেন ও মালিকানা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য ফাঁস করেছে প্যারাডাইস পেপারস। এসব প্রতিষ্ঠানর মালিক পৃথিবীর ১৮০টি দেশের ধনী, সুপরিচিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
ফাঁস হওয়া নথিতে ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নাম আছে। এছাড়া ৭১৪ জন ভারতীয়র নামও রয়েছে। এদের মধ্যে আছেন দেশটির মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিবিদ, শীর্ষ ব্যবসায়ী, বলিউড তারকাসহ বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি।
কোথা থেকে এলো প্যারাডাইস পেপারস?
প্যারাডাইস পেপারসের নথিগুলোর প্রায় ৬৮ লাখ এসেছে অফশোর আইনি সেবা সংস্থা অ্যাপলবাই এবং কর্পোরেট সেবা সংস্থা এস্টেরা থেকে। ২০১৬ সালে এস্টেরা আলাদা হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান দু’টি একসঙ্গে অ্যাপলবাই নামে কর্মকাণ্ড চালাত।
আরও ৬০ লাখ নথি প্রায় ১৯টি আদালতের কর্পোরেট রেজিস্ট্রি থেকে বের করা। আদালতগুলোর বেশিরভাগই ক্যারিবীয় অঞ্চলের। বাকি অল্প কিছু নথি পাওয়া গেছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক আন্তর্জাতিক ট্রাস্ট এবং কর্পোরেট সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান এশিয়াসিটি ট্রাস্ট থেকে। প্যারাডাইস পেপারসে ফাঁস করা নথিতে রয়েছে ১৯৫০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত প্রায় ৭০ বছরের তথ্য।
অ্যাপলবাই কী?
অ্যাপলবাই একটি আইনি সংস্থা যার সদর দপ্তর বারমুডায়। ১৮৯০-এর দশক থেকে বিশ্বব্যাপী কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এই কোম্পানি বিদেশের বিচারব্যবস্থায় কম বা শূণ্য করহারে কাজ করতে তাদের গ্রাহকদের সাহায্য করে থাকে। তাই বর্তমানে এটি হয়ে উঠেছে অফশোর আইনি সেবা দানকারী বিশ্বের সবচেয়ে বড় দশ প্রতিষ্ঠানের একটি।
ফাঁস করা তথ্যে দেখা যায়, অ্যাপলবাইয়ের সবচেয়ে বেশি ক্লায়েন্টের ঠিকানা যুক্তরাষ্ট্রের, ৩১ হাজারের বেশি। এরপর প্রায় ১৪ হাজার রয়েছে যুক্তরাজ্যের ঠিকানা এবং ১২ হাজারেরও বেশি বারমুডার।
প্যারাডাইস পেপারস ফাঁস করেছে কে?
গত বছরের এপ্রিলে কর ফাঁকির তথ্য ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন ফেলেছিল পানামা পেপারস। পানামা পেপারসের মতো এবারও প্যারাডাইস পেপারস নামে অর্থ কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস করেছে সুজডয়েচে জাইতুঙ্গ নামের জার্মানির এক সংবাদপত্র।
এক্ষেত্রে বলা যায়, পানামা পেপারসই প্যারাডাইস পেপারসের পথ প্রদর্শক। এছাড়া এক বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, নিজেদের সুরক্ষায় তথ্যের উৎস সম্পর্কে কোন মন্তব্য না করার সাধারণ নীতি মেনে চলে সুজডয়েচে জাইতুঙ্গ।
নথি ফাঁসের পেছনে কাজ করছে কারা?
পানামা পেপারসের মতই অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বিশ্বব্যাপী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসকে (আইসিআইজে) এই প্রকল্পে কাজ করতে বলা হয়। এছাড়াও এই প্রকল্পে বিবিসির প্যানারোমা প্রোগ্রাম, গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিশ্বের ৬৭টি দেশের প্রায় ১০০টি মিডিয়া পার্টনার যুক্ত।
এই তথ্য ফাঁস করার কারণ
প্রকাশিত তথ্যগুলো জনস্বার্থে করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মিডিয়া পার্টনারগুলো। কারণ এসব তথ্যের মাধ্যমে অন্যায় কাজ প্রকাশিত হয়েছে। এর আগেও এ ধরণের তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত করার কারণে রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন।
প্যারাডাইস পেপারস কেন ব্যতিক্রম?
পানামা পেপারসে ফাঁস হওয়া নথির সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ। এদিক দিয়ে প্যারাডাইস পেপারসের আকার বড়। কেননা এতে নথি আছে ১ কোটি ৩৪ লাখের বেশি। কিন্তু ডাটাবেসের আকারের হিসেবে প্যারাডাইস পেপারসের (১৪শ’ গিগাবাইট) তুলনায় পানামা পেপারস (২৬শ’ গিগাবাইট) অনেক বড়।
প্যারাডাইস পেপারসের তথ্য অনুসন্ধান ও ফাঁসের কাজে যুক্ত সাংবাদিকের সংখ্যা (৩৮১) পানামা পেপারসের (৩৭৬) চেয়ে বেশি। তবে মিডিয়া পার্টনার ও সংশ্লিষ্ট দেশের হিসেবের দিকে তাকালে দেখা যায়, পানামা পেপারসের সঙ্গে যুক্ত ছিল ৭৬টি দেশের একশ’রও বেশি মিডিয়া পার্টনার। আর প্যারাডাইস পেপারসে আইসিআইজে এখন পর্যন্ত ৬৭টি দেশের প্রায় ১০০টি মিডিয়া পার্টনারকে যুক্ত করেছে।