এক ইনিংসে ১০ উইকেট। ইতিহাসে প্রথম নয়। তবে বিরল! ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর দিনটা তাই বিশেষই হয়ে থাকল টেস্ট ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন হিসেবে। চলতি শতাব্দীতে প্রথমবার যে ক্রিকেটের কুলীন ফরম্যাট দেখা পেল ইংল্যান্ডের জিম লেকার ও ভারতের অনিল কুম্বলের সঙ্গীর। এদিন তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ইনিংসে ১০ উইকেট নেয়ার বিরল কীর্তি গড়েছেন নিউজিল্যান্ডের বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার আজাজ প্যাটেল।
১৯৫৬ সালে, ম্যানচেস্টার টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫৩ রানে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন অফস্পিনার লেকার। পরে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে পারফেক্ট টেনের রেকর্ডে নাম লেখান কিংবদন্তি লেগ স্পিনার অনিল কুম্বলে। ১৯৯৯ সালে, দিল্লি টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭৪ রানে নেন প্রতিপক্ষ ইনিংসের সবকটি উইকেট। সেই এলিট ক্লাবের সদস্য হলেন প্যাটেল। সৌজন্যে ক্রিকেট বিশ্ব দেখল আরেকটি দারুণ বোলিং ফিগার: ৪৭.৫-১২-১১৯-১০।
মুম্বাই টেস্টের দ্বিতীয় দিন, শনিবার দুপুরে বিরল মুহূর্তের সাক্ষী হন গ্যালারি থেকে শুরু করে টিভি সেটের সামনে বস থাকা হাজারো ক্রিকেটপ্রেমী। শুক্রবার টেস্টের প্রথমদিনে শুভম গিলকে তালুবন্দি করেছিলেন টেলরের। সেই শুরু। দ্বিতীয় দিনে শেষজন হিসেবে মোহাম্মদ সিরাজকে তালুবন্দি করিয়েছেন রাভিন্দ্রের। তাতে হয় চক্রপূরণ। ভারতের ১০ উইকেটের সবকটি লেখা হয়ে যায় তার নামের পাশে।
ভারত প্রথম ইনিংসে ৩২৫ রানে অলআউট হয়। যার সবকটি উইকেট দখলে নেন মুম্বাইয়ে জন্ম দেয়া ৩৩ বছর বয়সী প্যাটেল।
৪ উইকেটে ২২১ রানে দ্বিতীয় দিন শুরু করা ভারত আর ১০৪ রান যোগ করতে শেষ ৪ উইকেট খোয়ায়। দিনের খেলা শুরুর খানিক পর ২৭ রান করা ঋদ্ধিমান সাহাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন প্যাটেল। পরের বলেই রবীচন্দ্রন অশ্বিনকে বোল্ড করে বিশেষ অর্জনের দিকে আরেকধাপ পা বাড়ান।
একের পর এক সঙ্গী হারানোর দৃশ্যের সামনেও অবিচল ছিলেন ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়াল। আগের দিনই পেয়েছিলেন সেঞ্চুরি। সেই ইনিংস লম্বা করে দেড়শ রান পর্যন্ত টেনে নিয়েছেন। সপ্তম ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে অক্ষর প্যাটেলের সঙ্গে ৬৭ রানের কার্যকর জুটি গড়েছেন।
যে জুটি ভারতের ৩০০ রানের গণ্ডি পেরোতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। টম ব্লান্ডেলের গ্লাভসে জমা পড়ার আগে মায়াঙ্ক ৩১১ বলে ১৭ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কার মারে ১৫০ রানের ধৈর্যশীল ইনিংস উপহার দেন।
অক্ষর প্যাটেলের ১২৮ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কার মারে সাজানো ৫২ রানের ইনিংসটির গুরুত্বও কোনো অংশে কম নয়। প্যাটেলের বলে এলবিডব্লিউয়ে কাটা পড়ে তার ইনিংস থামে।
জয়ন্ত যাদবের উইকেট তুলে নেয়ার পর বিশ্ব ক্রিকেট প্যাটেলের উপর দৃষ্টি রাখতে বাধ্য হয়। পারফেক্ট টেনের রেকর্ড গড়তে তখন আর মাত্র এক উইকেট চাই তার। স্লগ করতে যাওয়া মোহাম্মদ সিরাজ ঠিকমতো বল ব্যাটে নিতে পারেননি, ব্যাটের উপরের কানায় লেগে মিডঅনে চলে যায়। রাচিন রাভিন্দ্র বল তালুবন্দি করার সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস গড়ার আনন্দে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে শূন্যে ঘুষি ছুঁড়ে গর্জন-হুঙ্কারে উদযাপনে মাতেন প্যাটেল।
এমন পারফরম্যান্সও অবশ্য প্যাটেলকে আনন্দে শেষ করতে দেয়নি দিনটি। কিউইরা ব্যাটিং ব্যর্থতায় ২৮.১ ওভারে মাত্র ৬২ রানে অলআউট হয়ে যায়। কাইল জেমিসন (১৭) এবং ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক টম ল্যাথাম (১০) ছাড়া কেউ দুঅঙ্কের ঘরে যেতে পারেননি।
চোটের কারণে খেলতে না পারা কেন উইলিয়ামসনের অনুপস্থিতির মাঝে ব্যাটিংয়ের কঙ্কাল বেরিয়ে পড়ে সফরকারীদের।
ভারতের হয়ে ৮ ওভারে মাত্র ৮ রানে ৪ উইকেট নেন অশ্বিন। ৩ ওভারে ১৯ রানে সিরাজ পান ৩ উইকেট। অক্ষর দুটি ও জয়ন্ত নেন একটি করে উইকেট।
নিউজিল্যান্ডকে ফলোঅন করান কোহলি। পান বিপক্ষে ২৬৩ রানের লিড। দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে স্বাগতিকরা দারুণ করছে। চোটে পড়া শুভমন গিলের বদলে মায়াঙ্কের সঙ্গে ওপেন করেছেন চেতেশ্বর পূজারা। দুই ব্যাটার সাবলীলভাবে ৬৯ রানের জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন আছেন।
দিনের খেলা শেষে ভারত চালকের আসনে। মায়াঙ্ক ৩৫ ও পূজারা ২৯ রানে রোববারের খেলা শুরু করবেন। এরমধ্যেই ৩৩২ রানের লিডে জমানো ভারতের সামনে পড়ে আছে পুরো তিনটি দিন।