তৈরি পোশাক শিল্প খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে ৮টি সুপারিশ করেছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সাথে বিভিন্ন সময়ে এ খাতের দুর্ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাগুলো নিস্পত্তিতে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনেরও পরামর্শ দেয় সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে ‘তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন: অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই সময় এসব সুপারিশ তুলে ধরেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, পোশাক খতে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওইসব ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কিন্তি এখনও বিচার হয়নি। তাই ওই মামলাগুলো দ্রুত বিচার আইনের আওতায় আনতে হবে।
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও জড়িতদের বিচার না হওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ওই দুর্ঘটনার জন্য যারা দায়ী শুরু থেকেই তাদের বিচারের ক্ষেত্রে বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্টরা বাধা সৃষ্টি করেছে। ওই দুর্ঘটনায় মূল অপরাধীদের চিহ্নিত করা হলেও বিচার হয়নি। শুধু একটি মামলায় দু’জনের ৩ বছর ও ৬ বছর করে শাস্তি হয়েছে। তাও সেটি তাদের আয়ের সঙ্গে সম্পদের অসামঞ্জস্যতার মামলায়।
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির অ্যাসিসটেন্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মিন।
এতে তিনি বলেন, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পোশাক খাতের অগ্রগতি তথা সার্বিক বিষয়ে নেয়া ১০২ টি উদ্যোগের মধ্যে ৩৯ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে, ৪১ শতাংশ চলমান এবং ধীরগতিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে বা স্থবির রয়েছে ২০ শতাংশ।
এতে আরো বলা হয়, রানা প্লাজার মালিক ও কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও শ্রম আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করা হলেও ২০১৫ সালে সিআইডি ৪১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। কিন্তু আসামি পক্ষের আবেদনের কারণে উচ্চ আদালতে মামলায় স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। তাজরিন ফ্যাশনের মালিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা ফৌজদারি মামলায় ২০১৫ সালে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র দুজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্পেকট্রাম ফ্যাশন মালিকের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে হাইকোর্টে রিট করা মামলায় এখন পর্যন্ত শুনানি হয়নি। এতে আইন প্রয়োগে বাস্তব অগ্রগতির ঘাটতি রয়েছে।
তবে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলেও এতে প্রতিবেদনে করা হয়।
তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন আনতে ৮টি সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
১. তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য একক কর্তৃপক্ষ গঠন করা।
২. শ্রম আইন ২০০৬ এ বিদ্যমান ঘাটতি বিশেষ করে শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ, প্রসূতিকালীন ছুটি, সংগঠন করা ও যৌথ দরকষাকষির অধিকারের ক্ষেত্রে সংশোধন আনা।
৩. দ্রত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দায়েরকৃত মামলগুলো নিষ্পত্তি করা।
৪. মজুরি, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা, ছুটি ইত্যাদি ক্ষেত্রে শ্রমিকের আইনগত অধিকার নিশ্চিত করা ও সরকারি তদারকি বাড়ানো।
৫. সাব কন্ট্রাক্ট নির্ভর ও ছোট কারখানার কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে অংশীজনের অংশগ্রহণে তহবিল গঠন করা।
৬. সব ক্রেতাকে তাদের ওয়েবসাইটে নিজ নিজ বাংলাদেশি ব্যবসায়িক অংশীদার কারখানার নাম প্রকাশ করা। কারখানা বন্ধ করা, শ্রমিক চাকুরিচ্যুতিতে ক্ষতিপূরণ না দেওয়া, পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ না করাসহ অন্যান্য অনৈতিক আচরণ বন্ধ করা।
৭. কেন্দ্রীয় কল্যাণ তহবিল হতে গ্রুপ বীমার প্রিমিয়াম দেওয়ার বিধান রহিত করা।
৮. রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেল কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকার, ক্রেতা ও আইএলওর সমন্বিত উদ্যোগে আরসিসির আর্থিক ও কারিগরি সক্ষমতা বাড়ানো।