সাউথ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশের পেসারদের অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছিল। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা সিরিজেও একই অবস্থা। পেস বোলিংয়ের দুর্দশা নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা শুনিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। এবার দৈন্যদশা থেকে বের হওয়ার উপায় বাতলে দিলেন জালাল ইউনুস। ব্যাটসম্যানের শক্তি ও দুর্বলতা বুঝে বোলিং করার কৌশল অবলম্বনের পাশাপাশি তরুণ পেসারদের আগ্রাসী হতে বললেন বিসিবি পরিচালক ও সাবেক এই পেসার।
বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের মাটি পেসারদের জন্য সহায়ক নয়। এটি অন্তরায় কীনা?
জালাল ইউনুস: কেবল উইকেটের জন্য পেসাররা পেস বল করতে পারছে না এটাতে একমত নই। যে উইকেটকে আমরা ফ্ল্যাট বলছি, বিদেশি বোলাররা ওই উইকেটেই বাউন্স আদায় করে নিয়েছে। আমরা পারিনি। সেজন্য স্কিলফুল হতে হবে। ভাল উইকেট পেল, কিন্তু ফাস্ট বল করার মতো স্কিল নেই, কোন লাইনে বল করতে হবে জানা নেই, তাতে হবে না। ফাস্ট বোলারকে অবশ্যই আগ্রাসী হতে হবে। দেখেছি, তাদের মধ্যে না সুইং আছে, না আগ্রাসন! খুব সামান্য সুইং, এতটুকু দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফাস্ট বোলাররা ডমিনেট করতে পারবে না।
মোস্তাফিজের মধ্যে স্কিল আছে, বোলিংয়ে বৈচিত্র্য আছে। এ ধরনের জিনিস থাকলে টিকে থাকতে পারবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। শুধু জোরে বোলিং করতে পারলেই ফাস্ট বোলিং হয় না। সঠিক লাইন, লেন্থ এবং ব্যাটসম্যানকে আতঙ্কিত করার জন্য বল করতে হয়। সাউথ আফ্রিকায় তো ভাল উইকেট ছিল। ফাস্ট বোলারদের জন্য বাড়তি কিছু তো ছিল না। কিন্তু ওদের বোলাররা কি করেছে, আর আমাদের ফাস্ট বোলাররা যা করেছে সেটা দেখতে হবে। এজন্যই বলছি, স্কিল বোলিং করতে হবে।
প্রতিটি সিরিজের আগে পেসারদের নিয়ে বিশেষ ক্যাম্প হচ্ছে। তারপরও উন্নতি চোখে পড়ছে না কেন?
জালাল ইউনুস: ক্যাম্পে যেটা হয়, ভুলগুলোকে ধরিয়ে দিয়ে নতুন কিছু শেখানো হয়। এখন ক্যাম্পে ঠিকঠাক মতো শিখল, কিন্তু মূল জায়গায় গিয়ে দিয়ে প্রয়োগ করতে পারল না, সেই দোষটা কি ক্যাম্পের? শেখাটা জায়গা মতো প্রয়োগ করতে হবে। সেটা না পারলে হবে না।
কিংবদন্তি কোর্টনি ওয়ালশের মত পেস বোলিং কোচ পেয়েও হতাশাই উপহার দিচ্ছেন পেসাররা…
জালাল ইউনুস: ওয়ালশ খুব ভাল একজন মেন্টর। অভিজ্ঞতা অনেক। এতো বড় বড় খেলা খেলেছে, যেগুলোর অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেও অনেককিছু জানা যায়। খেলোয়াড়দের সেগুলো বলে। ভাল পরামর্শক ও স্কিলের অধিকারী সে। তার কথাগুলো শুনতে হবে। আমার মনে পেসারদের অনেকের বয়স এখন কম। তাদের অনেক অনুশীলন করতে হবে। ফাস্ট বোলার হিসেবে বাইরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যারা, প্রচুর অনুশীলন করে। আমাদের বোলারদের অনুশীলন আরও বাড়াতে হবে। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে আসবে।
অল্প গতিতে বল করেও মাশরাফী ধারাবাহিকভাবে সফল হচ্ছেন। চলতি প্রিমিয়ার লিগে ৭ ম্যাচে ১৯ উইকেট। অন্য পেসাররা কেন এমন পারফরম্যান্স দেখাতে পারছেন না?
জালাল ইউনুস: মাশরাফী সাংঘাতিক মাথা খাটিয়ে বল করে। তার কি আগের মতো পেস আছে? ১২৭ বা ১২৮ কিমি. গতি। কিন্তু প্রত্যেক ব্যাটসম্যানকে বিট করে সাফল্য পাচ্ছে। কারণ সে সঠিক লাইন-লেংথে বল করছে। ব্যাটসম্যানকে রুমই দেয় না, ব্যাটসম্যান খেলবে কীভাবে? মাশরাফী ব্যাটসম্যানকে রিড করেই বোলিং করে। জোরে করছে না, কিন্তু জানে কোথায় ফেললে বল ভাল হবে। সেটাই করছে।
তরুণরা এই জায়গাটাতেই পিছিয়ে। ব্যাটসম্যানকে রিড করে বোলিং করতে হবে। মাঠে কী ধরনের বোলিং করতে হবে সেটা জানতে হবে। ১০ ওভার বল করে ৩০ রানে যদি কোন উইকেটও না পায়, তারপরও তো ভাল বোলিং। তাতে ব্যাটসম্যানরা চাপে থাকবে। অপর প্রান্ত থেকে একজন উইকেট পেয়ে যাবে। এসব ব্যাপার বুঝতে হবে পেসারদের। সেভাবে বল করতে হবে।