‘পেঁয়াজ এবং চালের মূল্য এবার ভোটের বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।’
একজন রাজনৈতিক বোদ্ধা কথাটা বলছিলেন। প্রগতিশীল মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষ। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁর সম্পর্কে আমার এটাই মূল্যায়ন। তাঁকে সম্মান করি। তিনি আমাকে খেপান আওয়ামী লীগার বলে। আমি মেনে নিই। কারণ বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি।
কথাটা আমাকে অনেক আগেই ভাবিয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ নেই। যা হবার তাই হচ্ছে। কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই চাল আর পেঁয়াজের মূল্য নির্ধারনে। বড় বড় কথা শুনছি গণমাধ্যমে মন্ত্রীদের। হুমকি-ধামকি-হুশিয়ারি সবকিছুকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে মুনাফাখোররা তাদের কাজটি করে গেছেন। হাজার হাজার কোটি টাকা গুছিয়ে নিচ্ছেন।
কতটা ক্ষমতাধর হলে এভাবে মাসের পর মাস ধরে চালের মূল্য আর পেঁয়াজের মূল্য বাড়াতে পারেন! সুনামগঞ্জে অকাল বন্যা আর আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে নাকি এই অবস্থা, মানছি কথাটা সত্য। কিন্তু সেটা কি মাসের পর মাস ধরে? আর আমাদের দেশের কর্তাব্যক্তিরা শুধু বক্তৃতাবাজি করে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন।
প্রশ্ন হল, এই যে কর্তাব্যক্তি তারা কি সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন? যারা শুধু ভোটের সময় কর্তা ব্যক্তিদের নজরে আসেন। তাদের ক্ষমতা একটামাত্র ভোট। যে ভোটের কারণে কর্তা ব্যক্তিরা ক্ষমতায় বসেন। মন্ত্রী হন। আর মন্ত্রী হবার পর ভুলে যান সেই ভোটারদের।
অভিযোগ আছে, মুনাফাখোরদের হাত এতটাই প্রশস্ত যে, ওইসব মন্ত্রীকে বশে নেওয়া তাদের কাছে কোনো ব্যাপারই না। টাকায় কি না হয়? টাকায় কেনা যায় ভোট, টাকায় কেনা যায় ক্ষমতা, টাকায় কেনা যায় সম্মান, টাকায় কেনা যায়…আরও অনেক কিছুই। সুতরাং অভিযোগ আর সন্দেহ কখনো কখনো সত্য হয়েও যায়।
আসছে ফেব্রুয়ারি ২৬ তারিখ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচন। এই ভোট দিয়ে বর্তমান সরকারের গ্রহনযোগ্যতার মাপকাঠি পরীক্ষিত হয়ে যাবে। তবে ওই যে আমার প্রিয় মানুষটির কথার শেষের শব্দ চারটি- ‘যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়’। ওই চারটি শব্দ আমাদের ভাবায়। আমাদের মনে বর্তমান সরকারের প্রতি সন্দেহ ঘনিভুত করে।
মানুষের ভেতরে সাম্প্রতিক সময়ে এক ধরনের বোধ তৈরি হয়েছে, বোধটা হচ্ছে সরকারের ভেতরে কোনো নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠি নেই। কেউ কারো কথা গায়ে মাখেন না। যে যার মত চলছে। কোনো অভিযোগ দিয়ে কোনো লাভ হয় না। সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা সরকার ভাবে না।
এখন কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন সরকার কি নন এমপিও ভুক্ত শিক্ষকদের দাবি মেনে নেননি? প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিয়ে দাবি কি মেনে নেননি? মেনে নিয়েছেন, মানছি। কারণ তারা প্রেসক্লাবের মত জায়গায় বসে দিনরাত থেকে আমরণ অনশনের হুমকি দিয়েছিলেন। আর সেই হুমকি কারণে সরকার বেকায়দায় পড়ে দাবি মেনে নিয়েছিলেন। এখন মাদ্রাসা শিক্ষকরাও তাল মিলিয়ে দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরবেন না। সবার দাবি মেনে নেওয়ার বিপক্ষে নই।
কিন্তু প্রশ্ন হল যারা প্রান্তিক মানুষ। যাদের কোনো সুযোগ নেই প্রেসক্লাবের মত জায়গায় এসে চালের মূল্য কমানোর জন্য বা পেঁয়াজের মূল্য কমানোর জন্য আমরণ অনশন করার। যারা একবেলা ভরপেট খেয়ে দুইবেলা আধপেট খেয়ে দিনাতিপাত করে তারা কোথায় যাবে? তাদেরকে যদি বিরোধীরা ঠিকমত বোঝাতে পারে এই সরকারকে আরেকবার ক্ষমতায় আনলে চালের মূল্য এক শ টাকা হবে। পেঁয়াজের মূল্য দেড় শ টাকা হবে, তা হলে?
প্রান্তিক মানুষ, যারা রাজনীতি বোঝে না, সমাজনীতি বোঝে না, অর্থনীতি বোঝে না, তারা টিভির টক শো দেখে না, পত্রিকা পড়ে না, তারা ওই কথায় বিশ্বাস করে ভোটের বাক্সে উচিত জবাবটা ঠিকই দেবেন। কারণ তাদের দরকার বাঁচা। পোলাও মাংস খাবারের কথা ভাবে না। তারা সকালবেলা মরিচ পোড়া দিয়ে ভাত খাবে, দুপুরে একটু শাকপাতা আর ডাল দিয়ে ভাত খাবে, রাতে কোনো মতে একটু তরকারি হলেই হল, ভাত খেয়ে নিবে। সরকার কেন এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠির কথা ভাবছেন না?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)