২০১৮ সালে এস এম আকবরের হাত ধরে শুরু হয় ফেসবুক ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবামূলক গ্রুপ ‘উই আর বাংলাদেশ (ওয়াব)’ এর যাত্রা। তিনি বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত আছেন।
এর আগে পুলিশের একটি ফেসবুক পেজ চালাতেন তিনি। এরপর চালু করেন ‘উই আর বাংলাদেশ’ (ওয়াব)।
তিনি বলেন, ‘পুলিশের ফেসবুক পেইজ চালানোর সময় উপলব্ধি করতে পারি যে মানুষের উপকারে ফেসবুক একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম। সমাজের বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন মতের ও পেশার মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করাতে পারলেই এটা সম্ভব। সেই পরিকল্পনা থেকেই শুরু করেছিলাম গ্রুপটির কার্যক্রম। আমরা চাই বাংলাদেশের সব ফেসবুক ব্যবহারকারী একদিন আমাদের গ্রুপটিতে যুক্ত হবেন। সবাই মিলে আলোকিত বাংলাদেশ গড়ে তুলব। যার জন্য গ্রুপটির স্লোগান রেখেছি ‘আলো আসবেই’।
এস এম আকবর বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ থানায় ১৯৯২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমানে পুলিশ সুপারের কার্যালয়, খুলনা কর্মরত আছেন।
যেকোন সমস্যায় পরামর্শ, সহায়তা মেলে ‘উই আর বাংলাদেশ’ (ওয়াব) গ্রুপের ফেইসবুক পেইজে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও গ্রুপটির সঙ্গে যুক্ত।
ওয়াবের সফলতা:
সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিবের চট্টগ্রামের বাসায় এসে হাজির হয় এক কিশোরী। শুধু নাম ছাড়া আর কিছুই বলতে পারে না সে। মেয়েটির ছবি প্রকাশ করা হয় গ্রুপের পেইজে। নোয়াখালী থেকে গ্রুপটির একজন সদস্য মেয়েটির পরিবারের খোঁজ দেন। সন্ধান মিলে পরিবারের।
খুলনার রাশেদা নামের এক নারী দীর্ঘ ১৮-২০ বছর আগে পরিবার হারিয়ে ফেলেন। ওয়াবের মাধ্যমে পরিবারের সন্ধান পান। যাত্রাবাড়ীতে এক বাসায় প্রতিনিয়ত নির্যাতন করা হতো একটি কাজের মেয়েকে। গোপনে মেয়েটির ভিডিও ধারণ করে গ্রুপটিতে প্রকাশ করেন একজন সদস্য। পোস্টটি পুলিশের নজরে দিলে স্থানীয় থানার কর্মকর্তারা উদ্ধার করেন মেয়েটিকে। আটক করা হয় নির্যাতনকারীদেরও।
এরকম সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ ও রক্তদাতা পাওয়ার নিশ্চয়তা কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেকোনোভাবে হওয়া হয়রানিমূলক বিষয়গুলোতে সাহায্য করা, আইনি সহায়তা ও পরামর্শ এবং চিকিৎসা সাহায্যও পাওয়া যায় ওয়াব গ্রুপে। এ ছাড়া যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যার সমাধানও দেওয়ার চেষ্টা করেন গ্রুপটির সদস্যরা। কোনো বিষয়ে সমাধান পেতে দেরি হলে সে বিষয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নজরে দেওয়ারও চেষ্টা করেন তারা। এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার ব্যাগ ব্লাড ম্যানেজ করে দিয়েছে ওয়াব।
এমনকি করোনাকালে প্রায় দুই হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত খুলনা, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম সহ কয়েকটি জেলায় ১০০ জনকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে ওয়াব। সেই সাথে আশ্রয়হীনদের ঘর করে দিচ্ছেন তারা। ওয়াব প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ শুরু করেছে। গত একমাসে প্রায় ৪০টি হুইলচেয়ার উপহার দিয়েছে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী মানুষদের।
এস এম আকবর বলেন ‘গ্রুপে সরকারের সব দপ্তরের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, আইনজীবী, সাইবার অভিজ্ঞসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষই আছেন। আমরা সবার মধ্যে একটা সমন্বয় আনতে চাই। গ্রুপে কেউ কোনো পরামর্শ চাইলে সে বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাই সমাধান দিতে চেষ্টা করেন।’
গ্রুপটির নাম ‘উই আর বাংলাদেশ’ কেন? ‘আমরা সবাই মিলেই বাংলাদেশ। দেশ এবং দেশের মানুষকে এগিয়ে নিতে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। গ্রুপে যাতে যে কেউ যেকোনো বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা বলতে পারেন, সে কারণেই গ্রুপটির এমন নামকরণ।’
‘সারা দেশেই ছড়িয়ে আছেন আমাদের মেম্বাররা। এ জন্য নোয়াখালীর কেউ রংপুর অথবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কোনো সহায়তা চেয়ে পোস্ট করলেও সেখান থেকেও সাড়া পাই আমরা।’
এস এম আকবর বলেন, ‘সদস্যদের নিয়ে বিভাগীয় আলাদা আলাদা দল আছে। এখন আমরা জেলাভিত্তিক দল গঠন করতে চাই। যাতে গ্রুপটির সদস্যরা যেকোনো সমস্যায় একে অপরের পাশে দাঁড়াতে পারেন।’