চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

পুলিশে নতুন পদ ডিএসপি

বাংলাদেশ পুলিশের জনবল কাঠামোতে (অর্গানোগ্রাম) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদের সমান পদমর্যাদায় নতুন আরেকটি পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই পদের নাম দেয়া হচ্ছে ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ (ডিএসপি)।

পুলিশের বিশেষ একটি সূত্র জানিয়েছে, পদোন্নতি পাওয়া পুলিশ ইন্সপেক্টরদের যোগ্যতা বিবেচনায় ডিএসপি পদে পদায়ন করা হবে।

জাতীয় বেতন স্কেলের নবম গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে এই পদের অনুমোদন দেয়ার জন্য ইতোমধ্যেই সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স।

ওই সূত্রটি আরো জানায়, ইন্সপেক্টরদের ডিএসপি পদবীতে সাময়িকভাবে এএসপি পদের দায়িত্ব পালন করলেও এএসপি পদে ক্যাডারভুক্ত হওয়ার সময় কোনো ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা পাবেন না তারা। ডিএসপির দায়িত্ব জ্যেষ্ঠতা এবং সার্ভিস রেকর্ড এর ভিত্তিতে প্রদান করা হবে। একজন অফিসার ডিএসপি পদ হতে জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী অন্যান্য সকল শর্ত পূরণ করলে ক্যাডারভুক্ত হবেন।

তবে ডিএসপির দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টরদের বেতন গ্রেড এর কোনো পরিবর্তন হবে না। তারা কোনো প্রকার অন্যান্য আর্থিক সুবিধাও পাবেন না। যে কোনো সময় প্রয়োজনীয় সংখ্যক এএসপি পাওয়া গেলে ডিএসপি অফিসারদের তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হবে।

সরকারের কাছে পাঠানো ওই  প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মৌলিক প্রশিক্ষণকালে সহকারি পুলিশ সুপাররা দুটি পিপস এবং প্রশিক্ষণ শেষে তিনটি টিপস রেঙ্ক ব্যাজ পড়বেন। তবে ডিএসপি অফিসাররা সবসময়ই দুটি পিপস পরবেন।

বাংলাদেশ পুলিশে বর্তমানে ইন্সপেক্টর পদের সংখ্যা ৬ হাজার ৪শ ৬৯টি এবং সহকারি পুলিশ সুপার পদে সংখ্যা ১ হাজার ৩শ ৮০টি। সহকারি পুলিশ সুপার পদে এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৪শ ৪১টি পদ ইন্সপেক্টরদের মধ্যে থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা হয় না। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে সিনিয়র ইন্সপেক্টর দের মধ্যে।

যদিও ইন্সপেক্টর পদের মোট সংখ্যার মাত্র ৬ দশমিক ৪ ভাগ। ফলে ইন্সপেক্টরদের প্রায় ৯৩ শতাংশ কর্মকর্তা ওই পদ থেকে অবসরে যাচ্ছেন। যে সব কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর পদে অবসর গ্রহণ করেন তাদের একটি বড় অংশ সরাসরি এসআই পদে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন এবং গড়ে ৮ বছর ইন্সপেক্টর হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন।

কিন্তু এএসপি পদে পদোন্নতির সুযোগ সীমিত হওয়ায় চাকরি জীবনের বাকি সময় বেশিরভাগ ইন্সপেক্টর পঁচিশ থেকে ত্রিশ বছর একই পদে চাকরি করে থাকেন। পদোন্নতি না হওয়া কিংবা পদোন্নতির সুযোগ সীমিত হওয়ায় ইন্সপেক্টরদের একই পদে দীর্ঘদিন চাকরি একঘেয়েমির জন্ম দিচ্ছে। তাদের বৃহত্তর অংশ বাংলাদেশ পুলিশের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত থাকেন। ফলে পদোন্নতি সংক্রান্ত প্রণোদনা না থাকায় তাদের কর্মস্পৃহা হ্রাস পাচ্ছে যা বাংলাদেশ পুলিশের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ পুলিশের সরাসরি ৬৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভিত্তি পদের তুলনায় উচ্চতর স্তরে পদ সংখ্যা সীমিত হওয়ায় সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত এএসপিরা পদোন্নতির শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট সময়ে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। এই পদোন্নতি সংকট বিগত কয়েক বছর ধরে পিএসসির মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগের সংখ্যা কমিয়ে একশর মধ্যে রেখে বিসিএস অফিসারদের পদোন্নতি কাঠামোতে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে করে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত এএসপিদের উচ্চতর স্তরে পদোন্নতি সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেলেও ভিত্তি পদে কিছু শূন্যতা তৈরি হয়েছে।

যেহেতু এএসপিরা পুলিশের মাঠ পর্যায়ে প্রথম স্তরের তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করে থাকেন, সেহেতু এর শূন্যতা মাঠ পর্যায়ে পুলিশের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করছে। একই সঙ্গে সঠিক তদারকির অভাবে পুলিশের সর্বিক কার্যক্রমে গতিশীলতা বিঘ্নিত হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে পুলিশের কার্যক্রমকে গতিশীল ও সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য এএসপি পদের শূন্যতা পূরণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

পিএসসির মাধ্যমে একসাথে সকল এএসপির শূন্যপদ পূরণ করা হলে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত এএসপিদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার ও পদোন্নতি তীব্র সংকট তৈরি হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে ক্যারিয়ার প্রণোদনা হিসেবে এবং বিদ্যমান সংকট নিরসনে সার্বিক বিবেচনায় ইন্সপেক্টরদের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে এবং সন্তোষজনক কর্মকাল অতিক্রান্ত ডিএসপি পদবীতে এসপির দায়িত্ব পালন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে,  ডিএসপি পদটি পদোন্নতি নয় বরং এটা ইন্সপেক্টরের উচ্চতর পদে সাময়িক দায়িত্ব পালনকালীন পদবী মাত্র। বাংলাদেশ পুলিশের প্রশাসনিক কাজে গতিশীলতা আনতে ডিএসপি অফিসারদের জ্যেষ্ঠতা মেধা দক্ষতাও সার্বিক রেকর্ড বিবেচনা করে অস্থায়ীভাবে পদ শুন্য থাকা সাপেক্ষে এবং প্রয়োজনীয়তার নিরিখে দায়িত্ব অর্পণ করা হবে।