পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে ‘পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ (পিসিআইসি) নামে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের অর্ধশতাধিক আইনজীবীর পক্ষে এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বৃহস্পতিবার আইনসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।
এই লিগ্যাল নোটিশে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য, ইতিহাস ও গৌরবময় অর্জন এবং তাদের শৃঙ্খলা বিধানের আইনি কাঠামো সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে পুলিশ সদস্যগণ কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ ও অসদাচরণের বিবরণ দেয়া হয়েছে। যেখানে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ৫০০টি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়া এই লিগ্যাল নোটিশে বিদ্যমান আইনি কাঠামোর দুর্বলতা এবং পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন তদন্ত কমিশনের অভাবকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এক্ষেত্রে নোটিশে বলা হয়েছে বর্তমান আইনি কাঠামোতে পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্তভার পুলিশের উপরেই ন্যস্ত থাকে। ফলে বিচারের প্রাথমিক ধাপ ‘তদন্ত’ সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয় না। প্রস্তাবিত পুলিশ অধ্যাদেশ ২০০৭ এর ৭১ দফায় ‘পুলিশ কমপ্লেইন্ট কমিশন’ গঠনের বিধান ছিল। কিন্তু সেই অধ্যাদেশ আজও আলোর মুখ দেখেনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইনে পুলিশ কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ তদন্ত করতে আলাদা কর্তৃপক্ষ বা কমিশন গঠনের জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ডেনমার্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, কেনিয়া, ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগো, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, গ্রীস, সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ফিনল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, হাঙ্গেরি, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস ও মাল্টাসহ বিশ্বের অনেক দেশেই স্বাধীন ও স্বতন্ত্র তদন্ত কমিশন কার্যকর আছে।
লিগ্যাল নোটিশে আরো বলা হয়েছে যে, ‘২০০৬ সালে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট বিখ্যাত প্রকাশ সিং বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া মামলায় পুলিশ ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য সাত দফা নির্দেশনা প্রদান করেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল একজন বিচারপতির নেতৃত্বে ‘পুলিশ কমপ্লেইন্ট অথরিটি’ গঠন। যে নির্দেশনা মেনে ইতোমধ্যে ভারতের ২৭ টি অঙ্গরাজ্যে ‘পুলিশ কমপ্লেইন্ট অথরিটি’ গঠন করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এই ধরণের কমিশন বা কর্তৃপক্ষ গঠনের পদক্ষেপ নেয়নি। ক্ষেত্রবিশেষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার, পুলিশ রিমান্ড ও পুলিশের পেশাদারিত্বের উন্নয়নে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। যদিও সুষ্ঠু তদন্ত আমাদের সংবিধানের ৩৫ (৩) ও ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যক্তির মৌলিক অধিকার। সে অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই লিগ্যাল নোটিশ প্রাপ্তির ৪ (চার) সপ্তাহের মধ্যে ‘পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ (পিসিআইসি) নামে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় নোটিশদাতাগন এবিষয়ে উচ্চ আদালতে শরণাপন্ন হবেন।