পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগ করার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে এই বিনিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিত ৯টি শর্ত পরিপালন করে বিনিয়োগ করতে হবে। রোববার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে অধিকাংশ ব্যাংকের অগ্রিম ও আমানতের অনুপাত নির্ধারিত মাত্রা অপেক্ষা কম এবং বিধিবদ্ধ তরল অনুপাত (এসএলআর) সংরক্ষণের পর অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। এসব ব্যাংকের জন্য আইনি সীমার মধ্যে থেকে পুঁজিবাজারে মৌল ভিত্তিক ইন্সট্রুমেন্টে বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে।
ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ব্যাংকসমূহের এরূপ বিনিয়োগে অংশগ্রহণ (নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারী কোম্পানীতে ঋণ প্রদানকরতঃ উক্ত কোম্পানীর নিজস্ব পোর্টফোলিওর আকার বৃদ্ধির মাধ্যমে পরোক্ষ বিনিয়োগ) পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি একটি গতিশীল পুঁজিবাজার নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
এসব বিবেচনায় রেখে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারী কোম্পানীতে ঋণ দেয়ার মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নিম্নোক্ত শর্তাধীনে সাময়িক তারল্য সুবিধা দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে:
(ক) তারল্য সুবিধা গ্রহণেচ্ছুক ব্যাংকের একক বা একীভূত উভয় ভিত্তিতে পুঁজিবাজার বিনিয়োগ ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ (২০১৮ পর্যন্ত সংশোধিত) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বর্ণিত সর্বোচ্চ সীমার (একক ভিত্তিতে বিবেচ্য মূলধন উপাদানের ২৫ শতাংশ এবং একীভূত ভিত্তিতে বিবেচ্য মূলধন উপাদানের ৫০ শতাংশ) কম হতে হবে। তারল্য সুবিধা গ্রহণের পরও বর্ণিত বিনিয়োগ সীমা পরিপালন করতে হবে।
(খ) এই সুবিধার অধীনে প্রাপ্ত তারল্য শুধুমাত্র ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারী কোম্পানীর নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট সাবসিডিয়ারী কোম্পানীকে ঋণ দিতে পারবে।
(গ) প্রাপ্ত তারল্য ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বা সাবসিডিয়ারী কোম্পানীর নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগের জন্য নতুনভাবে পৃথক বিও একাউন্ট খুলতে হবে।
(ঘ) ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য হতে ট্রেজারী বন্ড বা বিল রেপোর মাধ্যমে এই তারল্য সুবিধা গ্রহণ করতে হবে। ট্রেজারী বন্ড বা বিলের রেপো মূল্যের ৫ শতাংশ মার্জিন হিসেবে রেখে তারল্য সুবিধা প্রদেয় হবে। নগদে রেপোর অর্থ পরিশোধে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজের বাজারমূল্য আদায়যোগ্য অর্থ অপেক্ষা কম হলে তা ইতোপূর্বে গৃহীত মার্জিন হতে সমন্বয় করা হবে এবং সমন্বয়ের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলে ব্যাংক তা প্রদান করতে বাধ্য থাকবে।
(ঙ) প্রাথমিকভাবে রেপোর মেয়াদ ২৮ দিন হলেও তহবিল ব্যবহারের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে তা সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত ঘূর্ণায়মাণ রাখা যাবে। এরূপ রেপোর জন্য কোন অকশনের প্রয়োজন হবে না এবং সুদের হার হবে ৬ শতাংশ।
(চ) এরূপ তারল্য সুবিধা গ্রহণের জন্য যাচিত অর্থের পরিমাণ উল্লেখপূর্বক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন এবং এই জন্য সদ্য খোলা বিও হিসাবের প্রমাণপত্রসহ মহাব্যবস্থাপক, ডিপার্টমেন্ট অব অব-সাইট সুপারভিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর আবেদন করতে হবে। প্রদানযোগ্য তারল্য সুবিধার পরিমাণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে এবং পুনঃবিবেচনার জন্য কোন আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
(ছ) মেয়াদোত্তীর্ণ রেপো নবায়নের প্রয়োজন হলে তহবিল ব্যবহারের প্রমাণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিও একাউন্ট-এর হিসাবসহ মহাব্যবস্থাপক, ডিপার্টমেন্ট অব অব-সাইট সুপারভিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ৫ কার্যদিবস পূর্বে আবেদন করতে হবে।
(জ) সার্কুলার জারির ৩ মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর আবেদন দাখিল করতে হবে।
(ঝ) এ সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশে প্রচলিত সংশ্লিষ্ট আইন এবং সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত অন্যান্য নির্দেশনার পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।