চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

পিতার করুণ আকুতিও বাঁচাতে পারলো না রুবেলকে

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বিক্ষুদ্ধ জনতার ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় মাথায় ও বুকে গুলিবিদ্ধ রুবেল হোসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোববার সন্ধ্যায় মারা গেছেন।

এ নিয়ে ওই সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো চার জনে। নিহতের বাবা ফারুক হোসেন তার ছেলের চিকিৎসায় উদাসীনতার অভিযোগ করেছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের ১২ নম্বর বেডে ডা. রেজাউল করিমের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন মাত্রই আঠারো বছরে পা দেওয়া রুবেল।

রুবেলের মৃত্যুর আগে তার বাবা অভিযোগ করেন, শুক্রবার ভর্তির পর থেকে গত ২৪ ঘন্টায়ও ডা. রেজাউলের দেখা মেলেনি। নার্সরা মাঝে মধ্যে স্যালাইন আর ব্যথার ওষুধ দিয়ে চলে যায়। এখন পর্যন্তও অপারেশন করে নাই।”

পিতার প্রাণান্ত চেষ্টা, আকুল আকুতি সবই ব্যর্থ হয়ে যায় রোববার সন্ধ্যায়।

সন্তানের মুমূর্ষু শারীরিক অবস্থার বর্ণনায় ফারুক হোসেন বলেছিলেন, ‘‘শুক্রবার রাতে ভর্তি করেছি। মাথায় ও বুকে গুলি লেগেছে। কষ্টে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতাছে। জ্ঞান ফিরে নাই ওর। চোখের সামনে চিকিৎসার অভাবে ছেলেডা মইরা যাইতাছে।”

সাংবাদিকদের কাছে ছেলেকে বাঁচানোর আকুল আকুতি জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, “আমার আদরের বড় পোলা। এখানে আমারে কেউ একটা ডাক্তারের ব্যবস্থা কইরা দেন। ভিটে-মাটি বেইচ্যা হইলেও চিকিৎসা করামু। চোখরে সামনে পোলাডা মইরা যাইতাছে।”

“শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় রুবেলের অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। বাড়ি থেকে টাকা জোগাড় করে রাস্তায় যানজট থাকায় ঢাকা পৌঁছতে দেরি হওয়ায় ওইদিন আর তার অপারেশন হয়নি। কোনো ডাক্তারও আসছে না তার কাছে। খোঁজখবর নিচ্ছে না কেউ। জ্ঞানহীন ছেলেটা মরার মত পড়ে আছে বেডে।”

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের প্রতিও অভিযোগ ছিলো ফারুক হোসেনের। তিনি বলেন, ডিসি সাহেব আমার স্ত্রীর কাছে শনিবার ১০ হাজার টাকা দিলেও তারপর আর খোঁজ নেননি।

“চিকিৎসার অভাবে বাবার সামনে একটা ছেলে মারা যাচ্ছে এর চেয়ে আর কষ্টের কি থাকতে পারে।” এই বলে তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন।

বাবা ফারুক হোসেন ও মা রুপসী বেগমের ৩ ছেলে এক মেয়ের মধ্যে রুবেল ছিল সবার বড়। পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশ পাঠানোর কথা ছিল। বিদেশ নামক শব্দ শুনলেই ভয় পেত সে। আর এ কারণেই তাকে বিদেশের জন্য চাপ দিতো না কেউ।

দরিদ্র পরিবারের সন্তান রুবেল সংসার ও নিজের পড়াশুনা চালাতে সাড়ে ৩ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতো কালিহাতী বাসস্ট্যান্ডের মীম টেলিকম। তার স্বপ্ন ছিলো পড়াশুনা শেষ করে অনেক বড় চাকরি করবে।

ঘটনার দিন শুক্রবার বিকালে কালিহাতী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশের গুলির শব্দ শুনে দোকান বন্ধ করে ভিতরেই অবস্থান করে দোকান মালিক জিন্নাহ ও রুবেল। গুলির শব্দ থেমে গেলে বাড়ি ফিরছিল রুবেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশের গুলি লাগে রুবেলের মাথায় ও বুকে। এসময় রুবেলসহ ৩ জন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু সেখানে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।

রুবেলের দোকানের মালিক জিন্নাহ জানান, রুবেল সৎ, শান্ত স্বভাবের খুব ভাল ছেলে ছিল। আমার দোকান তার ওপরই ছেড়ে দিয়েছিলাম। ঘটনার দিন হামিদপুরের গোলাগুলির শব্দ শুনে আমরা সাঁটার নামিয়ে দোকানের ভিতরে ছিলাম। গুলি বন্ধ হয়ে গেলে আমরা যে যার মতো বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেই। আমি বাড়ি পৌঁছার আগেই মোবাইলে খবর পাই রুবেলের গুলি লেগেছে।

পুলিশের হয়রানীর ভয়ে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কালিহাতী বাসস্ট্যান্ডের অপর এক দোকানদার জানান, দোকান বন্ধ করে রুবেল বাড়ি ফিরছিল। ও কোন মিছিলে অংশ নেয়নি। পুলিশ অযথা ওইসময় তার ওপর গুলি চালিয়েছে।