বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক মো. শাহ আলমগীরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়েছে সরকার। এই নিয়ে চতুর্থবারের মতো এক্সটেনশন পেলেন তিনি।
২০১৩ সালেই ৭ জুলাই পিআইবির মহাপরিচালক পদে যোগ দেন শাহ আলমগীর। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ শেষ হওয়ার পরে প্রথমবার ১ বছরের জন্য, পরে ২ বছর এবং পরে আরো ২ বছরের জন্য পুনরায় নিয়োগ দেয়া হয় তাকে। গত সাত তারিখ পাঁচবছর পূরণ করার পরে এবার আরো একবার তাকে নিয়োগ দেয়া হলো ১ বছরের জন্য।
নতুন করে আরো এক বছরের দায়িত্ব নেওয়ার পরে বিগত বছরের প্রাপ্তি ও আগামী বছরের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বললেন শাহ আলমগীর।
বিগত বছরের অর্জন
শাহ আলমগীর জানান, ‘সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম আমি। কিন্তু পিআইবিতে জয়েন করে দেখলাম সেটা সাংবাদিক সংশ্লিষ্ট খুব কম। আমি চেষ্টা করেছি সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানগুলো ও সাংবাদিকদের আমাদের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে। উপজেলা পর্যায়েও ট্রেনিং করাতে গেছি। ৪২ বছরে সর্বোচ্চ ট্রেনিং সেশন ছিলো ৩০টা। আমরা প্রথম বছরেই ট্রেনিং দিয়েছি ৯৮টা। গত ৫ বছর বছরপ্রতি ৯৮-১০০টা অন্তত ট্রেনিং থাকতো।’
পিআইবিতে ১ বছরের ডিপ্লোমা কোর্স আগে থেকেই চালু আছে। তিনি বলেন, ‘এর বাইরে আশা করছি এই বছরেই দুই বছর মেয়াদি মাস্টার্স কোর্স চালু হবে। নাম হবে মাস্টার্স ইন জার্নালিজম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন হবে। এরই মধ্যে স্বীকৃতি ও অন্যান্য যা ফর্মালিটিজ আছে সম্পূর্ণ হয়েছে। দ্রুতই কাজ শুরু করা হবে।’
তিনি শোনালেন আরো কিছু উন্নয়ন কর্মের কথা, ‘বিগত ৫ বছরে ৫৬টি গণমাধ্যম সংক্রান্ত প্রকাশনা করা হয়েছে। আমি এসে দেখি পিআইবি আখতারা ভবনের প্রকল্পটা বন্ধ হয়ে ছিলো বছর খানেক আগে থেকে। তার কাজ শেষ না করে অফিসের আঙিনায় ইট সুড়কি ফেলা ছিলো। আমি জুলাইতে জয়েন করার পরে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়, ওই বছরের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী এসে ভবনটি উদ্বোধন করেন।
আমরা সাংবাদিকদের জন্য আবাসিক কোর্সেরও ব্যবস্থা করেছি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৩০ জন সাংবাদিক এসে এখানে থেকে ৩ থেকে ৫ দিনের ট্রেনিং করে থাকে। তাছাড়া কোর্স না থাকার সময়ে ঢাকার বাইরের কোনো সাংবাদিক ঢাকায় কোনো ব্যক্তিগত কাজে এসে যেন প্রতিরাতে মাত্র ২০০/৩০০ টাকা দিয়ে থাকতে পারে, সেই ব্যবস্থাও আছে। পিআইবিতে একটা শহীদ সাংবাদিক কর্নার করা হয়েছে। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে নিহত সাংবাদিকদের স্মরণে এই কর্নার।
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নয়নের নানা বিষয় নিয়ে পিআইবি মহাপরিচালক বলেন, ‘সারাদেশে বছরে ১০০ ট্রেনিং করলেও অন্তত ৩০০০ জনকে সংক্ষিপ্ত কোর্সে অন্তর্ভূক্ত করা যায়। তাহলেও সব সাংবাদিককে সম্পৃক্ত করা সম্ভব না। সেজন্য আমরা একটা অনলাইন কোর্স চালু করেছি। বেসিক ও টেলিভিশন জার্নালিজম। সেখানে দেখবেন একজন টিচার ভিডিও রেকর্ড করা হয়। সেগুলোর আবার লিখিত স্ক্রিপ্টও আছে। চাইলে সেটা প্রিন্ট করতে পাবেন। ৭ দিনের মাথায় একটা কুইজ হবে। সেই পরীক্ষাতে সময় দেয়া হবে ১০ মিনিট। একবার দিয়ে দিলে আর দ্বিতীয়বার দিতে পারবেন না। পরে কম্পিউটার থেকেই সে সার্টিফিকেট নিয়ে নিতে পারবে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে বসেই এই কোর্সে অংশ নেয়া যাবে। এখনো দুইটা চলছে। একটা ডেভেলপমেন্ট জার্নালিজম আর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম। আমরা ভাবছি এই কোর্সটা যত মানুষের কাছে যাওয়া যাচ্ছে সেটার পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে। আমাদের পরিকল্পনায় আছে কিভাবে আরো কোর্সের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। কোর্সগুলোকে আরো মডিফাই করার ভাবনা রয়েছে। এর আগে কখনো টেলিভিশন বা অনলাইন সাংবাদিকদের জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা ছিলো না। আমরা তাদের জন্যও কোর্সের ব্যবস্থা চালু করেছি।’
চ্যালেঞ্জ
কাজ করতে গিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কাজের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা ছিলো এটি ৪২ বছরের প্রতিষ্ঠান কিন্তু এর কোনো আইনী ভিত্তি ছিলো না। ৭৬ সালের রেজুলেশনের মাধ্যমে চলতো। ১৩ সালে এসে খসড়া তৈরি করি। এখন একটি আইন পাস হবে আগামী পার্লামেন্টেই। এটা হলে পিআইবি একটা অর্গানাইজেশন হবে, লোকবল বাড়বে, নতুন কর্মপরিকল্পনা আসবে।’
‘তাছাড়া পিআইবি স্বায়ত্বশাসিত হলেও সরকার তার পুরো অর্থ ব্যয় করে। ফলে কাজের ক্ষেত্রে গতি ছিলো অনেক ধীর। সেটা কোনো সিস্টেমে ছিলো না। সেটা প্রথম চ্যালেঞ্চ ছিলো। আরেকটা ছিলো সাংবাদিকদের সম্পৃক্ততা কম ছিলো।’
আগামীর কর্মপরিকল্পনা
আগামীর কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে শাহ আলমগীর জানালেন, জার্নালিস্ট সিকিউরিটি ও সেফটি নিয়ে একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সাংবাদিকদের আরো সচেতন করা এবং যেসব প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকরা কাজ করেন তারা যেন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া। এজন্য আমরা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে সঙ্গে কথা বলবো। দুর্গম এলাকায় কোনো সাংবাদিককে পাঠালে ভ্যাকসিন দিয়ে পাঠাতে হবে, নদীতে রিপোর্ট করতে গেলে লাইফ জ্যাকেট দিতে হবে, হরতালের নিউজ করতে গেলে হেলমেট ও লাইফ জ্যাকেট দিতে হবে এসব নিশ্চিত করতে চাই আমরা।।
সাংবাদিকরা নির্যাতিত হন, বিভিন্ন মহলের হাতে হামলা মামলার শিকার হন। আমরা ভাবছি একটা সেল তৈরি করবো। সেখানে আইনজীবীসহ অনেকে থাকবে। তারা সাংবাদিকদের অবস্থা মনিটর করবে ও তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছাবে। যেটা সারাদেশে সাংবাদিকদের আইনীসহ নানান সহায়তা দিবে। প্রায় ১৪-১৫ কোটি টাকার প্রকল্পটি চালু করেছি। আশা করছি আগামী তিন বছর পর্যন্ত প্রকল্পটা চালু থাকবে।
মাস্টার্স কোর্সটা চালু হলে পিআইবি ইন্সটিটিউটটা একটা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে যাবে। সাংবাদিকতায় যেসব অন্য ডিসিপ্লিনের লোক আছে তারা যেন সাংবাদিকতায় পড়তে পারেন সেটাকেই প্রায়োরিটি দেয়া হবে। প্রতিবছর ৫০ জন ভর্তি করা হবে। সার্টিফিকেট দিবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।