বর্ষা এলেই প্রতিবছর দেশের পার্বত্য অঞ্চলে ভূমি ধসের ঘটনায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি হয় এবং বহু সম্পদ নষ্ট হয়। গতকাল ও আজ কক্সবাজারের টেকনাফ ও মহেশখালীতে পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৫ জনসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও ৫ জন। এর আগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে দুই পরিবারের ৫ জন এবং ক্যাম্পে ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়।
সবমিলিয়ে এক আতঙ্কময় পরিবেশ বিরাজ করছে পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী জনগণের মধ্যে। পাহাড়ধস বাংলাদেশে এখন রীতিমতো ভীতির কারণ। প্রতিবছর এ ধরণের ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রতিকার কেনো হচ্ছে না, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে বর্ষাকাল এলেই। আবার শুষ্ক মৌসুমে হারিয়ে যায় প্রশ্ন!
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম এলাকায় সাম্প্রতিক ভূমিধসের পেছনে মানবসৃষ্ট কারণই মূল কারণ। অবৈধভাবে পাহাড় কাটা, গণহারে বৃক্ষনিধন ও অপরিকল্পিত আবাসন এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। নানাসময়ে নানা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব উঠে এসেছে বহুবার। এছাড়াও পাহাড় ধসের পেছনে রাস্তার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, অপরিকল্পিত জুম চাষ, পাহাড় থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় নেয়া ও অতিবৃষ্টি তথা জলাবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
২০১০ সালের বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ সংশোধন করে ৬(খ) ধারায় পাহাড় কাটায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তারপরেও বন্ধ কার যাচ্ছে না পাহাড় ধ্বংসের এই অমানবিক কার্যক্রম। এছাড়া ২০১২ সালের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ২(১১) ধারায় ভূমি বা পাহাড়ধসকে ‘দুর্যোগ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে, ২(১৩)(ই) ধারায় যেকোনো দুর্যোগ বিষয়ে আগাম সতর্কতা গণমাধ্যমে প্রচার, হুশিয়ারি, বিপদ বা মহাবিপদ সংকেত প্রদান ও প্রচারের বাধ্যবাধকতা সংযোজিত করা হয়েছে। এগুলো করা না হলে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা দণ্ডের বিধানও আছে আইনে। এগুলো কি ঠিক মতো হচ্ছে? তা দেখা খুবই জরুরি বলে আমরা মনে করি।
এছাড়া ভূমিধস প্রতিরোধে পাহাড় উপযোগী গৃহ নির্মাণ নীতিমালা প্রণয়ন, পর্যাপ্ত আশ্রায়ন ব্যবস্থা, ভূমি ব্যবহারের নীতিমালাসহ ও সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে এ ব্যাপারে ব্যাপক জনসচেতনা তৈরির উপর জোর দেয়া উচিত। তাহলেই হয়তো ধীরে ধীরে কমে আসবে পাহাড়ে প্রাণহানির ঘটনা।