পার্বত্য জেলাগুলোতে পাহাড় ধসে যে ব্যাপক প্রাণহানি, ক্ষয়ক্ষতি এবং পরিবেশ বিপর্যয় ঘটেছে, সেজন্য অপরিকল্পিত আবাসন এবং অবৈধভাবে পাহাড় কাটার দায় থাকলেও মূলত অতিবৃষ্টি তথা প্রাকৃতিক কারণকেই দায়ী করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অতিবৃষ্টির ফলে পাহাড়ে যে ফাটল তা বড় হয়ে ধসে পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে অধিদপ্তর।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, পাহাড় ধসের কারণ অনুসন্ধানে অধিদপ্তরের লোকজন কাজ করছে। তবে প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে যে তথ্য এসেছে তাতে জানা গেছে, মূলত দুই পাহাড়ের মাঝে ফাটল ছিল। অতিবৃষ্টির ফলে তা বৃহৎ আকার ধারণ করে ধসে পড়ে পাহাড়।
তবে অফিশিয়ালি অধিদপ্তরের হাতে এখনও আমাদের কাছে রিপোর্ট এসে পৌঁছেনি বলে জানান তিনি।
মূল কারণ প্রাকৃতিক হলেও এর পেছনে মানুষ সৃ্ষ্ট কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক। পাহাড় থেকে যে কোন পরিমানে মাটি কাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ করার পরও প্রভাবশালী লোকজন স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে নিয়মিতই পাহাড় থেকে মাটি কাটছে এবং অবৈধ বসতি স্থাপন করে চলেছে।
‘আমাদের স্থানীয় অফিসের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড় কাটার কারণে বিভিন্ন সময়ে জেল জরিমানা করছে। যন্ত্রপাতিও বাজেয়াপ্ত করছে। কিন্তু কিছুদিন পরেই দেখা যায় স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে আবার তারা পাহাড় কাটা শুরু করে।’
তিনি বলেন: বড় বা ছোট যে কোন পরিসরে পাহাড় থেকে মাটি কাটাই পাহারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর ফলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এ জন্য আমরা পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড় থেকে মাটি কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছি।
পাহাড় রক্ষায় কোন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না নেওয়াকে পাহাড় ধসের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক বলেন: নরম মাটির পাহাড় রক্ষায় অন্যান্য দেশে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা(প্রটেকশন) নেওয়া হলেও বাংলাদেশের পাহাড়গুলোতে সেরকম কোন ব্যবস্থা নেই। যেমন পাহাড়ের চারপাশ ঘিরে দেয়াল তৈরি বা নেট দিয়ে ঘেরা। আমাদের সে ধরনের কোন প্রটেকশন নেই। তাই কোন কারণে ফাটল ধরলে অতিবৃষ্টি বা অন্য কারণে সেখান থেকে সহজেই মাটি ধসে পড়ে।
এ ধরনের বিপর্যয় মোকাবেলায় ভবিষ্যতের পদক্ষেপ সর্ম্পকে চ্যানেল আই অনলাইনকে কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী বলেন: মূলত তিনটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রথমত পাহাড়ে নজরদারি বাড়াতে হবে যে কোথাও কোন প্রাকৃতিক ফাটল রয়েছে কিনা। থাকলে সেগুলো ঠিক করার ব্যবস্থা গ্রহণ। দ্বিতীয়ত আমাদের পাহাড়গুলো যেহেতু নরম মাটির তৈরি তাই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তৃতীয়ত ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, স্থানীয় জনগণকে বোঝাতে হবে যে পাহাড় পরিবেশের জন্য কতটা উপকারী।
প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা ব্যুরোর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা পাহাড় কাটার ক্ষতিকর দিক নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: বাংলাদেশের পাহাড়গুলো কঠিন শীলা দ্বারা তৈরি নয়। এগুলো মাটি ও বালির সমন্বয়ে গঠিত। তাই সেখান থেকে যে কোন মাটি কাটলে পুরো পাহাড়ের জন্যই তা মারাত্মক ক্ষতিকর।
শেষ খবর পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় মঙ্গলবার পাহাড় ধসে ৬ সেনা সদস্যসহ কমপক্ষে ১৩৮ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের ধোপাছড়ি এলাকাতে ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সেখানে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের চন্দনাইশে বান্দরবান সীমান্তে ধোপাছড়িতে ৪ জন ও রাঙ্গুনীয়া উপজেলার রাজানগর ও ইসলামপুরে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাঙ্গামাটিতে সোমবার রাতে পাহাড় ধসে কমপক্ষে ৪১ জন মারা গেছে। এর মধ্যে রাঙ্গামাটি শহরে ১১জন ও কাপ্তাই উপজেলায় ৩জনের মৃত্যু হয়েছে। বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানেও পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৩ শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।