রাঙামাটি থেকে: ঈদের দিন নামায পড়ে বাসায় ফিরনি সেমাই না খেয়ে আগে রাঙামাটি সরকারি কলেজের আশ্রয়কেন্দ্রে হাজির ইমরান। ঈদে বাড়িতে আসা অতিথিদের মতই আশ্রয় নেয়া মানুষদের হাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন রূপা। হলুদ-সবুজ সালোয়ার কামিজে ঈদের সাজ থাকলেও এবার তিনি বান্ধবীদের সঙ্গে শহরে ঘুরছেন না, তুলছেন না সেলফি। এবারে তার ঈদ আনন্দের কারণ ভালো খাবার পাওয়া মানুষদের মুখের হাসি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ইমরান, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রূপার মতো এবারের ঈদকে আর্তের সেবায় উৎসর্গ করেছেন রাফিন, জোবায়েরের মতো ৬৫ জন তরুণ।
রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসের পর খোলা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ৯ দিন ধরে সেনা সদস্যদের সহায়তা করেছেন তারা। প্রায় সবার বাড়িই রাঙামাটিতে। অথচ এই ঈদের দিনেও তারা বাড়িতে পরিবার-পরিজন রেখে চলে এসেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে, সহায়-সম্বল আর স্বজন হারা মানুষদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে।
নিজেদের এলাকায় এযাবৎ কালের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ে আক্রান্ত মানুষের থালা, বাটিতে পোলাও-কোরমা তুলে দিয়েছেন তারা। সবাই ঠিকমতো খাবার পেয়েছে কিনা এই তদারকি, এতো লোককে লাইনে দাড় করিয়ে হট্টগোল ছাড়া খাবার বিতরণ করেন তারা। সবাই খাবার পেয়েছে নিশ্চিত হয়ে নিজেরাও বসে যান একই কাতারে, একই খাবার খেতে। অথচ তাদের সবার বাড়িতেই যে আজ ভালো রান্না হয়েছে এটা তাদের পোশাক দেখলেই বোঝা যায়।
পাঞ্জাবি পরে মোটরসাইকেল চালানো, নতুন জামায় বান্ধবীদের তাক লাগাতে না পেরে তাদের আফসোস নেই এতটুকু।
“এবারের ঈদ আমার জীবনের এখন পর্যন্ত পাওয়া শ্রেষ্ঠ ঈদ,” বন্ধু, সঙ্গী স্বেচ্ছাসেবকদের সবার মনের কথাই যেনো বলে দিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড আর্টের শিক্ষার্থী রাফিন।
ঈদের পুরো দিনটিই এভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকায় মা-বাবার আপত্তি, বকাঝকা কিভাবে সামাল দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ইমরান বলেন,’ আমি আগে থেকেই নানা সংগঠনে কাজ করে আসছি। বাবা- মা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আজ আমাকে বললেও যে আমি বাড়িতে থাকবো না তারা সেটা জানেন।’
রূপা বললেন, ‘রাঙামাটির মানুষের এই দু:সময়ে ঘরে বসে থাকা যায় না। আমার মা-বাবা তাই আপত্তি করেননি।’
রোজায়- ঈদে সকাল থেকে বিকাল সেনাবাহিনীর সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করাটাও একটা বড় অর্জন বলে জানান তিনি।
রাঙামাটির চরম দুর্যোগ মুহুর্তে এলাকার তরুণদের এমন আন্তরিকতায় গর্বিত বলে জানান এই স্বেচ্ছাসেবীদের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা পারভেজ সুমন।
সুমনের সংগঠন ‘ইউথ’ ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে দুস্থ মানুষদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে ‘জীবন’, রাঙামাটি রোটার্যাক্টের মত সংগঠনগুলো।
তাদের পাশে পেয়ে সেনা সদস্যরাও সন্তুষ্ট। খাবার বিতরণের বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষে বিদায় নেয়ার সময় সেনা সদস্য আলমের সঙ্গে ইমরানের কোলাকুলি যেনো স্পষ্টতই জানান দিলো ‘মানুষ মানুষের জন্য।’
ছবি: নাসিমুল শুভ