পার্বত্য জেলাগুলোতে পাহাড় ধসের কারণ হিসেবে অপরিকল্পিত আবাসন এবং অবৈধভাবে পাহাড় কাটার দায় থাকলেও মূলত: অতিবৃষ্টি তথা প্রাকৃতিক কারণকেই দায়ী করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অতিবৃষ্টির ফলে পাহাড়ে যে ফাটল তা বড় হয়ে ধসে পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে তারা। দুই পাহাড়ের মাঝে ফাটল আগে থেকেই ছিল, অতিবৃষ্টির ফলে তা বৃহৎ আকার ধারণ করে ধসে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধান করেনি অধিদপ্তর। পরিবেশ অধিদপ্তর আরেকটি বিষয় তাদের প্রাথমিক তদন্তে পেয়েছে, পাহাড় থেকে যে কোন পরিমাণে মাটি কাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ করার পরও প্রভাবশালী লোকজন স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে নিয়মিতই পাহাড় থেকে মাটি কাটছে এবং অবৈধ বসতি স্থাপন করে চলেছে। পাহাড় কাটার কারণে বিভিন্ন সময়ে জেল জরিমানা করছে পরিবেশ আদালত, যন্ত্রপাতিও বাজেয়াপ্ত করছে। কিন্তু কিছুদিন পরই দেখা যায়, স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে আবার তারা পাহাড় কাটা শুরু করে। এছাড়া পাহাড় কেটে স্থাপনা ও রাস্তা করা হলে ওই পাহাড়ের চারপাশে কোন দেয়াল বা নেট দিয়ে ঘিরে রাখার যে আন্তর্জাতিক নিয়ম আছে, তাও মানা হয় না দেশের পার্বত্য এলাকায়। দুই সেনা কর্মকর্তা, দুই সেনা সদস্যসহ মোট ১৩৮ জনের যে প্রাণহানি, তা দুঃখজনক। সামনের দিনগুলিতে আরও বৃষ্টি হলে আরও নতুন নতুন পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছে পার্বত্য জেলাগুলোর প্রশাসন। এই অবস্থায় পাহাড়গুলোতে নজরদারি বৃদ্ধি, নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও পাহাড়ের পাদদেশে বাস না করতে জনগণকে বোঝানোর ব্যবস্থা করলে পাহাড় ধসের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যেতে পারে বলে আমরা মনে করি। দেশে প্রচলিত পরিবেশ আইনে অনেক ধারা-উপধারা ও শাস্তির ব্যবস্থা থাকলেও তার বাস্তবায়ন কতটুকু, তাও খতিয়ে দেখা সময়ের দাবি। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে অসাধু স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ভূমিদস্যু ও পাহাড়খেকোদের যে জোটবন্ধন তা শক্তহাতে দমন করতে হবে। বৃহত্তর কল্যাণে প্রাকৃতিক পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় দেশের দায়িত্বশীল সকল কর্তৃপক্ষ সঠিক-কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে আমাদের আশাবাদ।