মাঠের পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল না হলেও কখনো ‘শাহরুখ খান হতে চাই’, ‘নিজেকে দেখতে পাকিস্তানি লাগে’, ‘কালো মেয়ে বিয়ে করবো না’ ইত্যাদি সব কথা বলে বারবারই বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন বাংলাদেশের পেসার শাহাদত হোসেন। এবার গৃহকর্মীকে নির্যাতন করে স্ত্রীসহ ফেরার শাহাদত।
খামখেয়ালিপনা আর অগোছালো জীবন-যাপনের জন্য জাতীয় দলে অনিয়মিতই ছিলেন শাহাদত হোসেন রাজীব। প্রায় দেড় বছর ধরে একেবারেই জাতীয় দলের বাইরে তিনি। মাঝে পাকিস্তানের বিপক্ষে দলে ফিরলেও ইনজুরির কারণে আবারও বাদ পড়েন।
এখন আর তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নেই। বাদ পড়ার আগে বোর্ডের ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ছিলেন শাহাদত।
এর মধ্যেই নতুন বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি।
শাহাদতের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ২০০৫ সালে লর্ডস টেস্ট দিয়ে। সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছেন ২০১৩ সালে। তার ফর্মের কথা বলতে গেলে, সেটা হঠাৎ আসে হঠাৎ যায় অবস্থা, এই উজ্জ্বল তো এই নিষ্প্রভ।
তার বোলিং থেকে কখনোই তেমন কিছু পায়নি বাংলাদেশ। বরং অনেক সম্ভাবনাময় ম্যাচে দলকে ডুবিয়েছেন তিনি।
একবার নিজেই বলেছিলেন, ‘আমার নিজের কারণে আমি ভালো করে খেলতে পারি না। ঠিকমতো প্র্যাকটিস করি না।’
বোলিংয়ে কখনও নিজের স্বকীয়তা ধরে রাখেননি শাহাদাত। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা, পাকিস্তানের শোয়েব আখতার এবং সাউথ আফ্রিকার ডেল স্টেনকে অনুকরণ করতে গিয়ে ছন্দচ্যুত হয়েছেন বারবার। অতিরিক্ত জোরে বল করতে গিয়ে লাইন লেন্থ কখনোই ঠিক রাখতে পারেননি।
উল্টো অস্বাভাবিক এক আওয়াজ করে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে কুড়িয়েছেন ভর্ৎসনা। বোলিং করার সময় উচ্চস্বরে ‘অ্যা’ শব্দের জন্য আম্পায়ারের কাছে তার বিরুদ্ধে নালিশ করেছিলেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্রাতিরিক্ত আবেদনের জন্য জরিমানাও গুণতে হয়েছিলো শাহাদতকে।
শাহাদাত নিজেই খারাপ খেলে দলছুট হয়েছেন। ৩৮ টেস্ট আর ৫১ ওয়ানডে খেলা এ পেসারকে জাতীয় দলে ফেরার জন্য লড়াই করতে হয়েছে সব সময়। ৩৮ টেস্টের ৭৬ ইনিংসে উইকেট পেয়েছেন ৭২, গড় ৫১ দশমিক ৮১। আর ৪৫-এর বেশি বোলিং গড়ে ওয়ানডেতে উইকেট সংখ্যা ৪৭। ৬টি টি-২০তে উইকেট পেয়েছেন চারটি।
শাহাদাতের বিরুদ্ধে আছে বর্ণবাদের অভিযোগও। বিয়ে করার আগে তিনি প্রায়ই বলতেন, কোনো কালো মেয়ে বিয়ে করবেন না। নায়ক হলে প্রথম সিনেমায় নায়িকা হিসেবে কাকে চাইবেন? এমন এক প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশি নায়িকাদের আমার পছন্দ না। সিরিয়াসলি। যেগুলো আছে সব মোটা মোটা। এগুলোর একটাকেও আমার ভালো লাগে না।’
একবার একটি দৈনিক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে নিজেকে ‘পাকিস্তানি পাকিস্তানি লাগে’ বলেও বিতর্কে পড়েছিলেন শাহাদত। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ির রহস্য জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘রহস্য কিছুই না। দাড়ির ব্যাপারে আসলে আমার শহীদ আফ্রিদিকে বেশি ভালো লাগে। আমার দাড়িও ওরকমই। প্লেয়াররা সবাই বলে দাড়ি থাকলে আমাকে আফ্রিদি আফ্রিদি লাগে। বিদেশে গেলেও দাড়ি থাকলে কেউ বলে না যে আমি বাংলাদেশি। বলে পাকিস্তানি। তো আমার দাড়ি সুন্দর দেখে আমি দাড়িটা রাখি।’
কখনো মনে হয় না ক্রিকেট না খেলে সিনেমার নায়ক হলে ভালো করতেন? এমন প্রশ্নে শাহাদত বলেছিলেন, ‘এতোক্ষণে সত্যি কথা বলছেন।’ নায়ক হওয়ার ইচ্ছার প্রশ্নে বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, ইচ্ছা আছে নায়ক হওয়ার। সত্যি কথা। নাটক-ফাটক-মডেলিং করে লাভ নেই। আমি সব সময় শাহরুখ খানকে পছন্দ করি। আমার ফেবারিট নায়ক। আমি শাহরুখের মতো হতে চাই।’
সর্বশেষ শাহাদতকে মাঠে দেখা গিয়েছিলো গত মে মাসে। পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচে। ওই ম্যাচেই ইনজুরিতে পড়েন পড়েন তিনি। বিসিবি’র খরচে তার চিকিৎসাও চলে। দলে না থাকায় সংবাদের বাইরে থাকলেও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে আবার সংবাদের শিরোনাম হলেন শাহাদত।
ক্রিকেট বোর্ড এরকম ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে।