ক. সড়ক নিরাপত্তা সমকালীন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। এ আলোচনাকে কয়েকটি মোটা দাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত. পাবলিক পরিবহনের ব্যবস্থাপনাগত দিক; দ্বিতীয়ত. আইনগত দিক (বিশেষত নতুন আইনের প্রয়োজনীয়তা বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ ও সংস্কার); তৃতীয়ত. সড়ক নিরাপত্তায় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, সুশাসন ও দায়বদ্ধতা; চতুর্থত. সড়ক নির্মাণে প্রকৌশলগত ক্রটি-বিচ্যুতি; পঞ্চমত. জরুরি সেবা; ষষ্ঠত. সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে শিক্ষা-জনসচেতনা।
খ. এ প্রবন্ধে পাবলিক পরিবহনে যাত্রী, বাস চালক, হেলপার এবং কনডাক্টরদের মধ্যে যে মনোআচরণগত মিথস্ক্রিয়া ঘটে তার প্রকৃতি বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হবে। অধিকন্তু, পাবলিক পরিবহনে প্রায়শই যে অশ্রদ্ধা, অসহযোগিতা এবং দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্ট হয় তার কারণ খুঁজে দেখা হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না এ ধরনের পরিস্থিতি সড়ক নিরাপত্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলে। মহানগরে, মহাসড়কে ও উপজেলা সড়কে পাবলিক পরিবহনে চলাচলের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ থেকে এ বিশ্লেষণটি দাঁড় করানো হয়েছে।
গ. পাবলিক বাস হলো ক্ষমতা ও পেশীশক্তি প্রদর্শনের এক বিশেষ জায়গা। এখানে একজন অন্যজনকে প্রায়শই ক্ষমতা দেখায় এবং আক্রশের শিকার হয়। পাবলিক পরিবহন বৃহৎঅর্থে হলো এক চলন্ত অগ্নিপিণ্ড। পাবলিক পরিবহনে সর্বদায় আত্মমর্যাদা খোয়া হাওয়ার একটা আশংকা থাকে। না চাইলেও হেয় অবস্থার ভেতর পড়তে হয়। কারণ বাসের সিংহভাগ যাত্রী একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। এই যে শ্রদ্ধাহীনতা তা গড়ে উঠছে ব্যক্তির দৈনন্দিন পরাজয়ের মধ্য দিয়ে। নিপীড়ন বা নির্যাতন উপজাত ক্ষোভ প্রসবনের এক যুতসই জায়গা হলো পাবলিক পরিবহন। কারণ, এখানে কেও কাউকে চিনে না। ব্যক্তি পরিচয় যেহেতু অচেনা থাকে তাই সহজেই নিজেকে ক্ষমতাশালী হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো সামাজিক বা রাজনৈতিক ক্ষমতাশালী ব্যক্তি পাবলিক পরিবহন ব্যবহার করে না। যেসব পাবলিক সারাদিন কোথাও না কোথাও ভয় পায় বা প্রত্যাখ্যাত হয়, তারাই ভয় দেখায় এবং প্রত্যাখান করে। পাবলিক স্পেসে নাগরিকের আচরণ কেমন হওয়া উচিত সেই সম্পর্কে শিক্ষার অভাব সহজেই চোখে পড়ে। এ ক্ষেত্রে কেবল বাসের ফিটনেসের মতো ব্যক্তির সামাজিক ফিটনেস খুব প্রণিধানযোগ্য বিষয় যা ছাড়াই ব্যক্তি পাবলিক স্পেসে সচরাচর চলাফেলা করে। অন্যের অধিকার হরণে খড়গহস্ত হয়। তা ঘটায় ভাষা ও অভিব্যক্তির প্রকাশের মাধ্যমে। দখল ও আধিপত্যের যে বন্য মানসিকতা নিয়ে সংখ্যাগুরু জনগণ নগরে প্রবেশ করে এবং যাত্রীবেশে পথে-পরিবহনে চলাফেরা করে তাদের মনোপরিচয়ের বিশ্লেষণ খুব জরুরি। পাবলিক পরিবহন অধস্তনদের ক্ষমতাচর্চা-সম্পর্কবিন্যাস ও জেন্ডারসম্পর্ক বোঝার জন্য এক শক্তিশালী গবেষণা অনুসঙ্গ। পাবলিক বাস বাংলাদেশের সার্বিক সমাজ বাস্তবতার এক জটিল প্রতীকী রসায়ন।
ঘ. পাবলিক বাসের যাত্রীদের রয়েছে এক বিশেষ মনোভঙ্গি। এই মনোভঙ্গির প্রকাশ ঘটে ভাষা প্রয়োগ, শব্দচয়ন এবং শারীরিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে। যাত্রীগণ সহজেই বুঝাতে চান সে একজন কেউকেটা। অথচ এ প্রর্দশন খুব অপ্রয়োজনীয়। যেমন. ধরুন কনডাক্টর বা ভাড়া আদায়কারীকে বা হেলপারকে তুই-তোকারি করা বা অসাবধানতাবশত দ্বিতীয়বার ভাড়া চাইলে উত্তেজিত হয়ে পড়া। এর পেছনে রয়েছে কনডাক্টর বা হেলপাদের কাজকে পেশা হিসেবে না দেখার মানসিকতা। যাত্রীরা তাদের পেশার গুরুত্ব দেয় না। কনডাক্টরি বা হেলপারিও যে একটি পেশা হতে পারে যাত্রীগণ মানতে পারে না। ভাবতে পারেন কাজটি পেশা এবং তাদের জীবনজীবিকার প্রধান অবলম্বন। কনডাক্টর ও হেলপারদের পেশা নগন্য ভাবার মনোবৃত্তির পেছনে রয়েছে পেশা নির্বাচনে বা ঔপনিবেশিকতার প্রভাব। দীর্ঘদিন ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে থাকার কারণে এদেশের জনগণের মধ্যে পেশা নির্বাচনে ক্ষমতাকে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করার অভ্যাস গড়ে উঠেছে। যারা ক্ষমতা দেখাতে পারেন কিংবা বেকায়দায় ফেলতে পারেন বা বিশেষ সুবিধা দিতে পারেন এমন সব পেশাকে এদেশে মূল্যবান জ্ঞান করা হয়। পেশার প্রতি এটিই প্রচলিত সামাজিক মনোভঙ্গি। হেলপার বা কনডাক্টরের চাকরিকে যত সহজে তুচ্ছ-তাছিল্য ভাবা যায় অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ অন্য পেশার প্রতি এমন মনোভঙ্গি দেখানো যায় না।
ঙ. মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত নিজেই এক অস্বীকৃতি আর বঞ্চনার সংস্কৃতির মধ্যে বাস করে। এ শ্রেণিটি মূলত পাবলিক পরিবহন ব্যবহার করে। এ শ্রেণি যে নিগৃহের নিষ্পেষনের এবং বঞ্চনার শিকার হয় তা তাদের ভেতরে প্রতিশোধ পরায়নতার জন্ম দেয়। এ প্রতিশোধ নিতে হবে; নিজেকে মুক্ত করতে হবে। কিন্তু কার প্রতি প্রতিশোধ নেবে বা কাকে ঘৃণা বা অশ্রদ্ধা করে নিজেকে মুক্ত করবে? এ ক্ষোভ প্রধানত বিস্ফোরিত হয় গৃহে, অধনস্তের ওপর এবং পাবলিক পরিবহনে। পাবলিক পরিবহনে চলাচলের সময় এ সুযোগ অনেকে হাতছাড়া করতে চায় না। প্রতিদিনের দানা বাধা নিগ্রহ বড় আকার নেয় এবং বিষ্ফোরণের অপেক্ষায় থাকে। সুযোগ পেলেই তা প্রকাশিত হয়।
চ. ধরুন. এক ব্যক্তি সরকারি অফিসে সেবা নিতে গিয়ে প্রত্যাখিত হলেন বা সহযোগিতা পেলেন না । এতে মনে ক্ষোভ দানা বাঁধলো। অফিস থেকে বিক্ষুদ্ধ মনে বাড়িতে ফেরার উদ্দেশ্যে পাবলিক বাসে ঠেলাঠেলি করে উঠলেন। বাসের মধ্যে এমন ঠাসা-ঠাসি অবস্থা যে পকেট থেকে সহজে ভাড়া বের করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, কনডাক্টর বারবার ভাড়া চাচ্ছেন। একদিকে ক্ষোভ অন্যদিকে বিরক্তি সব মিলিয়ে এক বিষ্ফোরণ মুখ পরিস্থিতি তৈরি হলো। অবশেষে সংঘাত বেঁধে গেল। এমন পরিস্থিতি তো প্রায়ই আমাদের চোখে পড়ে। সার্বিক সমাজ বাস্তবতার এক অব্যবস্থাপনাগত দিক আর বঞ্চনার বড় চাপ পড়ে পাবলিক পরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে। তৈরি হয় এক জটিল মনোদৈহিক পরিস্থিতির। একজন সুহৃদ পাবলিক বাসে উঠতে গিয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জানালো, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ক্লাস ছিল; ওই সময়টা বাস ধরাটা ছিল খুব জরুরি। কিন্তু বাসের কনডাক্টর আমাকে কিছুতেই বাসে নিতে চায় না। আমি যখন তার ঘাড়ে হাত দিয়ে বাসে উঠার চেষ্টা করলাম তার জামাটা দুর্বল ছিল; পেছনের অংশ ছিড়ে আমার হাতে লেগে গেলো; সে খালি পিঠ নিয়ে ঔই বাসে সামনের দিকে এগুতো থাকলো।’ আমার হাতে তার ছেঁড়া জামার অংশ। ভাবুন! বিষয়টি কত অস্বস্তিদায়ক।’
ছ. ভাড়ার পরিমাণ নিয়ে বাক-বিতণ্ডা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। প্রায় ২০-২৫ জন কনডাক্টরের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে তাদের সঙ্গে যাত্রীদের ভাড়া সংক্রান্ত বিরোধের পরিমাণ ৫-১৫ টাকা মধ্যে সীমাবদ্ধ। একজন দুঃখ করে বলেছিলেন, ভাড়াকেন্দ্রীক বাকবিতণ্ডার কেবল বাচনিক রুঢ় আচরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না অনেকসময় তা শারীরিক নির্যাতনে পরিণত হয়। এমন চিল্লাচিল্লি ও হইচইয়ের মধ্যেই পাবলিক পরিবহনে ভ্রমণ করতে হয়। বাঙালীর পরিশীলিত সংঘবদ্ধ ভ্রমণঅভ্যাস আজও গড়ে উঠেনি। মনে রাখতে হবে, আনন্দময় ও উপভোগ্য ভ্রমণআচরণ এক পরিশীলিত সাংস্কৃতিক অভ্যাস।
জ. অন্যদিকে, কনডাক্টরদের সার্বিক আচরণ, ভাড়া সংগ্রহ ও যাত্রী ম্যানেজমেন্ট কৌশলে পেশাগত দক্ষতা ও সৌজন্যতার ঘাটতি সহজেই লক্ষ্য করা যায়। বলা যায় শারীরিক কসরতের এবং বাচনিক উত্তেজনার সাহায্যে তারা বাসের অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের ম্যানেজমেন্টের কাজ সম্পন্ন করে যা অধিকাংশসময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। বাসে আসনের বাইরে তারা সামান্যতম জায়গা খালি রাখতে চায় না। যাত্রীদের পণ্য হিসেবে বিবেচনা করে গাঁদা-গাদিভাবে বিন্যস্ত করে। অধিকাংশ সময় শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। যাত্রীদের পণ্যকরণ প্রক্রিয়া পারষ্পরিক অশ্রদ্ধা, অস্বস্তিকর ও অসহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বাসের অভ্যন্তরে যাত্রীদের যে ‘ঝাঁক’(ভাষাতাত্ত্বিক কলিম খানের ভাষায়) তা ম্যানেজ করার ক্ষেত্রে গায়ের জোর এবং হুমকি-ধমকি কখনও হাতা-হাতি প্রধান অনুসঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ঝ.বাসের হেলপার হলো বাসের দ্বার রক্ষক। বাসের হেলপারের আচরণ ত্রিমাত্রিক মিষ্টি সর্ম্পক বড় সূচক। ভ্রমণের শুরুতেই ভালো অনুভূতি বা খারাপ অনুভূতির ইউনিট হিসেবে যাত্রীর প্রতি তার আচার-আচরণ ও মনোভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তার যোগাযোগ কৌশলে বিশেষত বাচনিক ও অবাচনিক তৎপরতায় সবসময় তাৎক্ষণিকতার চাপ লক্ষ্য করা যায়। অসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে তাকে সবকিছু ম্যানেজ করতে হয়। মনে রাখতে হবে, ড্রাইভার, কনডাক্টর ও হেলপারদের মধ্যেকার সর্ম্পক সবসময় মিথোজৈবিক নয়। তাদের নিজেদের মধ্যে নানারকম অবিশ্বাস ও আস্থার সংঘট থাকে। বিশেষত বাসের ভাড়া সংগ্রহ ও তার স্বচ্ছতা নিয়ে পারষ্পরিক একটা টানা-পোড়েন লক্ষ্য করা যায়। ড্রাইবারের চেয়ে কনডাক্টর বা হেলপারের চাকরির অনিশ্চয়তা তুলনামূলক বেশি। কনডাক্টর বা হেলপারকে সকল সময় ড্রাইভারের নিকট ভালো পারফরমেন্স দেখাতে হয়। ড্রাইভার, কনডাক্টর ও হেলপারের মধ্যেও না ভালো না মন্দ এমন একটা সম্পর্ক বিরাজ করে। ড্রাইভার, কনডাক্টর ও হেলপারের মধ্যে পারষ্পরিক সমঝোতা ভালো হলে যাত্রী সেবার ওপর তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
ঞ. পাবলিক পরিবহনে ড্রাইভারের ভূমিকা অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল। ড্রাইভারকে একাধারে গাড়ি চালাতে হয় অন্যদিকে বাসের সার্বিক ম্যানেজমেন্টও দেখ-ভাল করতে হয়। যাত্রীদের সঙ্গে কনডাক্টর বা হেলপারের বচসায় প্রায়শ হস্তক্ষেপ করতে হয়। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ ও অন্যান্য রাজনৈতিক এবং সামাজিক দস্যুপনাকে তাকে ম্যানেজ করতে হয়। রাঘববোয়াল মালিকদেরও ম্যানেজ করতে হয়। এ সেক্টরে কাজের অভিজ্ঞতা দিয়ে তাকে তা ম্যানেজ করতে হয়। এ বিষয়ে ড্রাইভারের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো জ্ঞান নেই। আছে কেবল বাস্তব অভীজ্ঞতা ও সাধারণ জ্ঞান-কাণ্ড। ঢাকা শহরের ড্রাইভারের আচরণ ও অসহিষ্ণুতা নিয়ে আলোচনায় তাদের অর্থ-সামাজিক ও মনোদৈহিক অবস্থাটি কম বিবেচনায় নেওয়া হয়। তাছাড়া পাবলিক বাসের অভ্যন্তরীণ আবহাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সাধারণ অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, শীতকালের তুলনায় গ্রীষ্মকালে পাবলিক বাসে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বেশি হয়। গ্রীষ্মকালে গরম আবহাওয়ার কারণে ড্রাইভার ও যাত্রীদের মধ্যে খিটখিটে মেজাজ লক্ষ্য করা যায়। কোনো কিছুর চাপ নেওয়ার মতো সামান্য মানসিক অবস্থা তাদের থাকে না। এরপর রয়েছে অসহনীয় যানজট। মালিককে বাস ভাড়া পরিশোধের চাপ, আইনশৃংখলা বাহিনীর উৎপাত এবং যাত্রীদের অসহযোগিতা ও লাগামহীম কথাবার্তা যা বাসের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে তাতিয়ে তুলে। ড্রাইভার সব ভেঙ্গে এগিয়ে যেতে যান; সবাইকে পেছনে ফেলতে চান। কারণ পরিস্থিতি তাকে শিখিয়েছে পেছনে পড়লে সফল হওয়া যাবে না; দিনের জন্য প্রয়োজনীয় উপার্জন করা যাবে না, পকেট থেকে টাকা গুণতে হবে। এ ধরনের চাপের মুখে ড্রাইভারের নিকট অনেক কিছুই মূল্যহীন হয়ে পড়ে তার মধ্যে অন্যের জীবন ও আইন প্রতি শ্রদ্ধা অন্যতম। সব সরিয়ে সে সামনে এগিয়ে যেতে চায়। এ যে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ও মনস্তত্ত্ব তাই সড়ক নিরাপত্তার অন্ধকারকে আরও ঘন করে।
চ. সড়ক দুর্ঘটনার অনেকগুলো কারণ চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু এর পেছনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো আজকের সামাজিক অসহিষ্ণুতা ও ক্রমশ হালকা হয়ে যাওয়া পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। একে অন্যর প্রতি অশ্রদ্ধার সংস্কৃতি। অশ্রদ্ধা বা অসহিষ্ণুতা সহিংস আচরণ করতে উদ্ধুদ্ধ করে। পাবলিক পরিবহনে কোনো পক্ষই সামান্যতম ছাড় বা সহিষ্ণুতা দেখিয়ে চলতে চান না। সবাই আপন ব্যাপারে খুব সচেতন ও অনড়। সামাজিক অন্যপরিসরে অপেক্ষাকৃত সহনশীল ও যৌক্তিক মানুষও পাবলিক পরিবহণে অন্যরকম হয়ে আর্বিভূত হয়। পাবলিক পরিবহন সত্যি এক অন্যরকম জায়গা।
আইন ও সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে শিক্ষা-সচেতনা দিয়ে হয়ত এ বিষয়ে অনেক সমস্যার সমাধান করা যাবে। কিন্তু দেশের পরিবর্তিত আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যে বঞ্চনা বা অপ্রাপ্তির জনমনস্তত্ত্ব গড়ে উঠছে তা রোধ করতে হবে। কারণ, প্রতিক্ষণে নানারকম ক্ষোভ প্রক্ষলন হয় পাবলিক পরিবহনে। পাবলিক পরিবহনে অভ্যন্তরে অস্থিরতা সড়ক নিরাপত্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। পাবলিক পরিবহনে এ পাবলিক সাইকি কীভাবে ম্যানেজ করা যাবে, কীভাবে স্বস্তিদায়ক ও মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ পাবলিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে তা বেশ জরুরি প্রশ্ন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)