বিসিক আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পাটের মত চামড়া শিল্পকেও ধ্বংস করতে চায় বলে অভিযোগ করেছে চামড়া শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন। একই সঙ্গে মিথ্যাচারের জন্য রাষ্ট্রায়াত্ব এ সংস্থাটির বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে সংগঠনটি।
রোববার ধানমণ্ডির একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি শাহীন আহমেদ এ অভিযোগ করেন।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ৬ এপ্রিলের মধ্যে হাজারীবাগ থেকে সব ট্যানারী সরাতে হবে মালিকদের। এ উপলক্ষ্যে ‘বিপন্ন চামড়া সেক্টরের অস্তিত্ব রক্ষার দাবি’তে করণীয় বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প করপোরেশন (বিসিক) আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে-এমন অভিযোগ করে শাহীন বলেন, সাভার চামড়া শিল্প নগরী বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিসিককে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটির চরম ব্যর্থতা ও অব্যবস্থাপনার শিকার দেশের চামড়া শিল্প। তারা পাট শিল্পের মতো চামড়া শিল্পকে ধ্বংস করতে চায়।
বিটিএর সভাপতি বলেন, বিসিক আদালতে বলেছে, তারা সাভার ট্যানারি শিল্প নগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইসিপি) দুইটি মডিউল প্রস্তুত করেছে। ট্যানারি মালিকরা সাভারে যাচ্ছে না বলে তাদের এই মেশিনগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সেখানে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সাভারের ৫০টি কারখানার শোধনও সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি তারা অপরিশোধিত তরল বর্জ্যগুলো ধলেশ্বরী নদীতে ফেলছে। অথচ ২০০৩ সালে প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও ২০১২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণের কার্যাদেশ দিতে পারেনি বিসিক।
ট্যানারি মালিকরা বলেন, সাভারে যেসব কারখানা স্থানান্তর করা হয়েছে সেগুলোতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য আবেদন এবং ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও সেগুলোতে সংযোগ দেয়া হয়নি। এছাড়া চামড়া শিল্প নগরীর প্লটগুলোর মালিকানা হস্তান্তরের দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশন, এমনকি বরাদ্দ জমির মূল্যও চূড়ান্ত করা হয়নি। অথচ শিল্পোদ্যোক্তারা সেখানে প্রায় ২২শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। মালিকানা দলিল না থাকায় প্লট বন্ধক দিয়ে ব্যাংক ঋণ নিতে পারছেন না তারা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী বৃহস্পতিবারে তারা সাভারে চলে যাবে। তবে এই সময়ের মধ্যে সেখানে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে। যারা শিল্প নগরীতে প্লট পাননি তাদের প্লট নিশ্চিত করতে হবে। তবে এ শিল্প সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আগামি ৮ এপ্রিল হাজারীবাগে সমাবেশ করা হবে।
৬ এপ্রিলের পর হাজারিবাগের ট্যানারিগুলোতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করার বিষয়ে শাহীন বলেন, হাজারিবাগের গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে চামড়া শিল্প বড় সংকটে পড়বে। কারণ এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ৫০ লাখ লোক।
এর আগে রাজধানীর হাজারীবাগে থাকার জন্য অনেক চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ ট্যানারি মালিকরা পরিবেশের ক্ষতিপূরণ বাবদ বকেয়া ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা পরিশোধের আদেশ স্থগিত এবং প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে জরিমানার রায় পুনর্বিবেচনায় আবেদন করেছিলেন।
ওই আবেদন এখনি গ্রহণ না করে আপিল বিভাগ গত বৃহস্পতিবার এক রায়ে ৬ এপ্রিলের মধ্যে হাজারীবাগের সব ট্যানারি বন্ধের নির্দেশ দেয়। এরই পরিপেক্ষিতে তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেখানে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।