মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারে আন্তর্জাতিক চক্রের সাথে থাইল্যান্ডের উপকূলবর্তী প্রশাসন, সেনা কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠি জড়িত বলে বিবিসি’র অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে। ৬ মাস ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে আধুনিক যুগে দাসপ্রথার ভয়াবহ নতুন চিত্র তুলে ধরেছে বিবিসি।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা অভিবাসীদের বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় আশ্রয়ের বিষয়টি গত এক দশকের। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করায় নির্যাতনের মুখে তারা আরও ব্যাপকভাবে অভিবাসী হয়ে উঠছে। কিন্তু এর পেছনে বিপুল অর্থের বিনিময় আর দাসপ্রথা যুগের মানব কেনাবেচার মতো বিষয়টা আড়ালেই ঢাকা পড়েছিলো এতোদিন।
অক্টোবরে থাইল্যান্ডের তাকুয়া পা জেলার গভীর জঙ্গল থেকে পাচারের শিকার ৮১ জনকে উদ্ধার করে জেলা প্রধান মানিত পিয়ানথঙ। এখানেই কাদামাটির গর্তে খুঁজে পাওয়া যায় এক নারীর কংকাল। উদ্ধার মানুষদের সবাই রোহিঙ্গা নয়, অনেকে বাংলাদেশীও। পাচার করে তাদের সেখানে রাখা হয়েছিলো। ফিরে যেতে চাইলে মারধর, নির্যাতন, খাবার বন্ধ এমনকি হত্যাও করা হতো। নারীরা ধর্ষণ ও অমানবিক নির্যাতনের মুখে মৃত্যুবরণ করলে থাই জঙ্গলেই তাদের কবর দেয়া হতো।
মানবপাচার লোভনীয় আর লাভজনক এক ব্যবসা থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া সীমান্তে। ৩শ লোক বোঝাই একটি নৌকা থাই সীমান্তে বিক্রি হয় ১৬ থেকে ২০ লাখ টাকায়। নামানোর পর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ আদায় করা হয় জনপ্রতি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। তারপর মালয়েশিয়ায় পাচার করে তারা পায় আরও অর্থ। পাচার হয়ে ধরা পড়ার পর তাদের জীবনে আবার পুলিশি নির্যাতন, কম মজুরির কাজ।
বিবিসির জোনাথন হেডের রিপোর্টে বলা হয়েছে, অর্থের লোভে থাই সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সেনা কর্মকর্তা এবং স্থানীয় গ্রামবাসী অনেকেই জড়িয়ে পড়ে ঘৃণ্য এই কর্মকাণ্ডে। থাই-মালয়েশিয়া সীমান্তে পাচারের জন্য ১ হাজার লোকের এক ক্যাম্পের সন্ধানও পাওয়া গেছে। সামরিক এলাকায় অবস্থিত কথিত ওই ক্যাম্প। এরই কাছাকাছি গণকবরে খুঁজে পাওয়া যায় ২৬ জনের মরদেহ।
এ যাবত পাচারের দায়ে থাই শীর্ষ ব্যবসায়ী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা গ্রেফতার হলেও কোনো সেনা সদস্য গ্রেফতার হয়নি।