বাংলাদেশের উচিৎ কথায় আবারো নাখোশ হুজুগে পাকিস্তান। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে-ছদ্মবেশে এদেশে থাকা পাকি দোসরদের জন্য তাদের কান্না অবশ্য নতুন কিছু নয়। একাত্তরে চরম পরাজয়ের পর বার বার সেই দোসরদের লালন-পালন আর বংশ বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের রক্ষা করতে নানা রকম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থেকেছে পাকিস্তান, এবং এখনও আছে। এবার ২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু কথা বেহায়া দেশটির বুকে যেন শূল হয়ে আঘাত হেনেছে। সেই আঘাতের তীব্রতা এতটাই ছিল; তা হজম না করতে পেরে বিবৃতি দিয়ে রক্তাক্ত ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা করেছে তারা। প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেন, ‘দেশে এক সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বলাটাও যেন অপরাধ ছিল। কারণ সে সময় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি ক্ষমতায় ছিল। তখন পাকি (পাকিস্তান) প্রেমে যারা হাবুডুবু খেয়েছে, তাদেরও উপযুক্ত জবাব বাংলার মানুষকে দিতে হবে। তাদেরও শাস্তি দিতে হবে। তাদের ওই পাকি প্রেম ভুলিয়ে দিতে হবে। এই বাঙালি যদি এটা না পারে তাহলে নিজেদের অস্তিত্ব থাকবে না।’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র একে ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির (সিমলা চুক্তি) মূলনীতির বিরোধী বলে মন্তব্য করেন। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী ভুল কিছু বলেননি। আমরা লক্ষ্য করেছি, এদেশে যখনই পাকিস্তানকেন্দ্রিক কোনো ঘটনা ঘটেছে; তখনই পেয়ারে পাকিদের সরব অস্তিত্ব প্রকাশ্যে এসেছে। বাংলাদেশকে বুকে ধারণ করে এমন কোনো ব্যক্তিকেই তারা ছাড় দেয় না। সর্বশেষ উদাহারণ- শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবালের ঘটনা। আমরা দেখেছি; তাকে হত্যাচেষ্টার খবরে কতটা উল্লাস প্রকাশ করেছে সেইসব হায়েনার দল। তার মৃত্যু না হওয়ায় আফসোসও করতে দেখেছি তাদের। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার পর থেকে বছরের পর বছর ধরে স্বাধীনতা বিরোধীরা পাকিস্তানি ভাবাদর্শে বহু প্রতিষ্ঠান এদেশে তৈরি করেছে। সেইসব প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়া পাকিস্তান প্রেমীরা রাষ্ট্রযন্ত্রের অনেক জায়গায় এখনও অবস্থান করছে। আমরা আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করেছি; নিজের সুবিধার জন্য কথায় কথায় সিমলা চুক্তি টেনে আনে পাকিস্তান। অথচ সেই চুক্তি বরখেলাপ করা একমাত্র দেশ এই পাকিস্তানই। কেননা চুক্তিবদ্ধ হয়েও তারা বাংলাদেশ থেকে ফেরত নেওয়া ১৯৫ যুদ্ধাপরাধী সেনার বিচার করেনি। ফেরত নেয়নি বাংলাদেশে আটকে পড়া কয়েক লাখ পাকিস্তানিকেও। এমন আরো অনেক বিষয় আছে যা এখনো বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেয়নি পাকিস্তান। অথচ আমরা দেখেছি, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে সারাবিশ্বে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছে। তাদের দোসরদের ফাঁসি বন্ধে জাতিসংঘে যাওয়ারও ঘোষণা দেয় তারা। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পরও থেমে থাকেনি পাকিরা। ‘গভীর উদ্বেগ অার ক্ষোভ’ প্রকাশ করে পার্লামেন্টে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পর্যন্ত পাস করেছে। এসব ঘটনা বার বার প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশকে কোনোভাবেই মেনে নেয়নি পাকিস্তান। এখনো বাংলাদেশের ক্ষতি করাই তাদের একমাত্র চাওয়া। তাই প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় আমরাও বলতে চাই, সেইসব দোসরদের পাকি প্রেম ভুলিয়ে দিতে হবে।