চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

পাকিস্তানে ধর্ষণের সাজা এতো দ্রুত হলে বাংলাদেশে কেন নয়?

পাকিস্তানে ৬ বছরের শিশু জয়নাব আনসারিকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে প্রধান আসামি ইমরান আলীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন দেশটির সন্ত্রাসবিরোধী আদালত। ইমরানের বিরুদ্ধে অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যাসহ চারটি অভিযোগে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, নাবালক শিশুর সাথে অস্বাভাবিক আচরণের জন্য ইমরানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ লাখ রুপি জরিমানাও করেছে পাকিস্তানের আদালত।

৯ জানুয়ারি লাহোরের কাসুর শহরে আবর্জনার স্তূপ থেকে শিশু জয়নাবের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পাকিস্তান। ধর্ষকের শাস্তি দাবিতে চলে সভা-সমাবেশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যাশট্যাগ দিয়ে প্রচার হয় জাস্টিস ফর জয়নাব। অবশেষে, বিক্ষোভের মুখে পড়ে হলেও ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ১৪ দিন পর গ্রেফতার হয় প্রধান অভিযুক্ত ২৪ বছর বয়সী ইমরান। যে জয়নাবের বাড়ির পাশেই থাকতো।

জয়নাব হত্যাকাণ্ডের মাত্র ১ মাস নয়দিন পর প্রধান আসামি ইমরান আলী দুনিয়ার জঘন্য ও নৃশংসতম অপরাধের বিচারের মুখোমুখি হয়ে সর্বোচ্চ সাজা পেলো। আদালতে ডিএনএ এবং পলিগ্রাফ টেস্টসহ রিপোর্ট পেশ করা হয়। দেয়া হয় সিসিটিভির ফুটেজও।

বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের সাজার বিরুদ্ধে থাকা পাকিস্তান সেদেশের শিশু ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে দোষীকে সাজা দিতে পেরেছে। কিন্তু, প্রতিদিন-প্রতি মাস-প্রতি বছর বাংলাদেশে অনেক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। যেগুলো গণমাধ্যমের সামনে আসছে সেগুলো আমরা জানতে পারছি। রায়ও হচ্ছে গুটিকয়েক মামলার। কিন্তু, সমাজে লজ্জা বা ভয়ের কারণে এখনো ধর্ষণের শিকার হওয়া অনেকেই বিষয়টি চেপে যাচ্ছে, কিংবা আত্মহত্যা করে মিলিয়ে যাচ্ছে কালের অতল গহ্বরে।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম-বিএসএএফ এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালের চেয়ে ২০১৭-তে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। আর, ২০১৭-তেই ধর্ষণ মামলার বেশি রায় ঘোষণা করা হয়েছে। আবার শিশু হত্যার রায়ও ২০১৭ সালেই বেশি ঘোষণা করা হয়েছে।

কিন্তু, ২০১৭ সালেও এসে কেন ধর্ষণের সংবাদে গা শিউরে উঠবে, কেন বাবা-মা তার মেয়ে সন্তানকে নিজের ঘনিষ্ট আত্মীয়র কাছে রেখে যেতেও ভরসা পাবে না। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে কিনা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলা হয়, সেখানেও একটি মেয়ে শিশু নিরাপদ নয়।

আমাদের ছেলেবেলাতেই যেমন ছেলে বন্ধু নয় বরং বন্ধু হিসেবেই ক্লাসের অন্য শিশুদের সাথে খেলতে অনুমতি দেয়া হতো। প্রতিবেশীর বাড়িতেও একাই অবলীলায় যাওয়া যেত। পাশের বাড়ির কাকুও ছিলো আপন চাচার মতোই। কিন্তু, পৃথিবী এগিয়ে গেলেও মানুষের রূপ ধরে থাকা কিছু পশুর নোংরামির কারণেই পিছিয়ে পড়ছে সমাজ, হারিয়ে যাচ্ছে সুন্দর সংস্কৃতি।

এখন কি আর জন্মের পরে কারো সন্তানকে বাবা-মা সামাজিক হয়ে ওঠার উপদেশ দেন না? না-কি বিশ্বের সাথে তাল মেলাতেই পারিবারিক শিক্ষাকে আনস্মার্ট ভাবা হয়। এমনটিই যদি হয় তবে, শিশুদের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে দেয়ার ভূমিকা কার….এটিই প্রশ্ন।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)