পাকিস্তানের ভোটাররা এখন অপেক্ষা করছে বুধবারের নির্বাচনের জন্য; যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই লেগে গেছে রক্ত আর নানামুখি রাজনৈতিক বিতর্কের কালির দাগ।
এবারের নির্বাচনকে বলা হচ্ছে পাকিস্তানের ইতিহাসের সবচেয়ে নোংরা নির্বাচন। তবুও দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ২০ কোটি মানুষের এই দেশের জাতীয় নির্বাচনের দিকে বিশ্বশক্তিসহ প্রায় সবার নজর।
কেন এ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই পাকিস্তানে একবার বেসামরিক, একবার সামরিক- এভাবেই শাসনের পালা চলছে। পাকিস্তানের ইতিহাসে এবার দ্বিতীয়বারের মতো এক বেসামরিক সরকার পূর্ণ মেয়াদ শেষে আরেক বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে যাচ্ছে।
কিন্তু এই গণতন্ত্রকে সবাই স্বাগত জানাতে পারছেন না। কেননা ভোটের আগেই ঘটল সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে মেয়েসহ গ্রেপ্তারের ঘটনা। এর ফলে তার দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও সেনাবাহিনীর মধ্যে টানাপোড়েন চলছে।
পিএমএল-এনের অভিযোগ, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী আদালতের সাহায্য নিয়ে তাদের পরিকল্পিতভাবে আঘাত করছে। বর্তমান নির্বাচনে অস্পষ্টভাবে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দলটির প্রায় ১৭ হাজার সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলছে।
এছাড়া অন্য সময় অভিযোগ উঠলেও চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গণমাধ্যমের ওপর সরকারের সেন্সরশিপ অনেকটাই বেড়ে গেছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় মারাত্মক সন্ত্রাসী হামলা।
এবারের নির্বাচনী মাঠের প্রধান খেলোয়াড় যারা
নওয়াজ শরীফ (পিএমএল-এন), ৬৮
বিশ্বজুড়ে বড় বড় সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের গোপন সম্পদের তালিকা পানামা পেপারস ফাঁস হয়ে যাওয়ার সূত্র ধরে শুরু তদন্তে দুর্নীতি মামলায় ফেঁসে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। আদালতের রায়ে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজকে।
অসুস্থ স্ত্রীকে সঙ্গ দিতে লন্ডন গেলেও নির্বাচনের মাসেই নাটকীয়ভাবে দেশে ফিরে মেয়েসহ আইনের হাতে নিজেকে তুলে দেন তিনি।
তার বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনী ষড়যন্ত্র করছে বলে নওয়াজের অভিযোগ। নওয়াজ শরীফের দাবি, সেনাবাহিনীকে জনসম্মুখে সমালোচনা করা আর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে চাওয়ায় সেনাবাহিনী তার ওপর নারাজ।
এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও নওয়াজের জায়গায় লড়বেন তার ছোট ভাই শেহবাজ শরীফ। তবে শেহবাজকে যারা ভোট দেবেন তারাও আসলে দেবেন নওয়াজ শরীফের দিকে তাকিয়েই।
বর্তমান সংসদে পিএমএল-এন এর আসন সংখ্যা ১৮২।
ইমরান খান (পিটিআই), ৬৫
সাবেক এই আন্তর্জাতিক তারকা ক্রিকেটার প্রায় দুই দশক আগে পাকিস্তানি রাজনীতিতে ঢুকেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কখনো সরকার চালানোর সৌভাগ্য হয়নি তার। তাই দেশের সেনাবাহিনী এবার পিটিআইয়েরই পক্ষে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। ইমরান খানকে জেতাতে এবং তার প্রতিপক্ষদের জয়ের সম্ভাবনা ম্লান করতে সেনাবাহিনী সাহায্য করছে বলে অনেক দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকের ধারণা।
পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান গণমাধ্যম ‘ডন’-এর প্রধান নির্বাহী হামিদ হারুন ১৬ জুলাই বিবিসি’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলে চরম বিতর্কের মুখে পড়েন।
ইমরান খান ও সেনাবাহিনী এমন পারস্পরিক সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন। তবে বিবিসি’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইমরান নিজেই একবার বলেছিলেন, বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়া ‘সম্ভবত আমাদের দেখা সবচেয়ে বেশি গণতন্ত্রপন্থি মানুষ’।
পিটিআইয়ের প্রতি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদাসহ বেশ কিছু বিতর্কিত সংস্থার সমর্থন রয়েছে বলে প্রচলিত আছে।
বর্তমান সংসদে পিটিআই’র আসন সংখ্যা ৩২
বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি (পিপিপি), ২৯
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বিলাওয়াল জারদারির রাজনীতিতে পারিবারিক ভিত্তি বেশ জাঁকজমক। তার মা বেনজির ভুট্টো ও নানা জুলফিকার আলী ভুট্টো দু’জনেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং দু’জনকেই হত্যা করা হয়েছে।
তরুণ বিলাওয়াল প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টের ঘোড়দৌড়ে অংশ নিচ্ছেন। মায়ের স্বপ্নের ‘শান্তিপূর্ণ, অগ্রগতিশীল, সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক পাকিস্তান’ গড়তে চান বলে জানিয়েছেন বিলাওয়াল।
বর্তমান সংসদে তাদের আসন সংখ্যা ৪৬।