পশ্চিম জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন শনিবার তার সরকারের এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
তবে স্বীকৃতি দিলেও এখনই তেল আবিব থেকে অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করা হবে না বলে জানিয়েছেন মরিসন। বলেছেন, জেরুজালেম ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ সমঝোতা হওয়ার পরই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
অবশ্য জেরুজালেম বিষয়ে ইসরাইল-ফিলিস্তিন দু’দিককেই শান্ত রাখার চেষ্টা করেছেন স্কট মরিসন। তিনি বলেন, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্ক্ষাকেও অস্ট্রেলিয়া স্বীকৃতি দিচ্ছে।
দেশ এবং দেশের বাইরের বন্ধু দেশগুলোর অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা ও পরামর্শের পর এ ঘোষণা দিলেন অজি প্রধানমন্ত্রী।
শনিবার সিডনিতে এক ভাষণে মরিসন বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া এখন পশ্চিম জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে, যা নেসেতসহ সরকারের বহু প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক আসন।’
‘আমরা পশ্চিম জেরুজালেমে আমাদের দূতাবাস সরানোর অপেক্ষায় আছি। তবে সেটা তখনই হবে যখন কাজটি বাস্তবনির্ভর হবে এবং জেরুজালেম নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে,’ বলেন তিনি।
গত অক্টোবরেই মরিসন জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে এবার অস্ট্রেলিয়াও জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার কথা ভাবছে। এজন্য তেল আবিব থেকে দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার কথাও বিবেচনায় রয়েছে।
ওই সময় স্কট মরিসন বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়া এখনো ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে ‘দুই-দেশ নীতি’র পক্ষে।
কিন্তু একদিকে দুই-দেশ নীতির পক্ষে থেকে অন্যদিকে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেয়ার কথা বলাটাকে আসন্ন জরুরি একটি উপনির্বাচনের আগে মরিসনের একটি ‘ধূর্ত পরিকল্পনা’ বলে তখন অভিযোগ করেছিলেন তার রাজনৈতিক বিরোধীপক্ষ।
অস্ট্রেলিয়ার তৎকালীন পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তনের পরিকল্পনা ইসরায়েলের সমর্থন এনে দিলেও ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে ব্যাপক সমালোচনাও এনেছিল।
তবে বাস্তবে স্বীকৃতি দিতে গিয়ে পুরো জেরুজালেমকে স্বীকৃতি না দিয়ে ‘পশ্চিম জেরুজালেম’ উল্লেখ করে তার সঙ্গে ফিলিস্তিনের পূর্ব জেরুজালেম দাবিকেও স্বীকৃতি দিয়ে অনেকটা দু’কূলই রক্ষার ইচ্ছা প্রকাশ করল অস্ট্রেলিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের পর গুয়াতেমালাই প্রথম সিদ্ধান্ত নেয় তাদের দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার। প্যারাগুয়েও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর দেশটি তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
জেরুজালেমের অধিকার বিশ্বের সবচেয়ে বিরোধপূর্ণ ইস্যুর একটি।
ইসরায়েল সমগ্র জেরুজালেমকে নিজেদের অধিকারভুক্ত বলে দাবি করে। কিন্তু জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের এ দাবি স্বীকার করে না।
জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেম, যেখানে আল-আকসা মসজিদসহ বৃহত্তম হারাম শরিফ অবস্থিত। ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের পর থেকে তা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে।
পুরো জেরুজালেমকেই নিজেদের ‘শাশ্বত ও অখণ্ড’ রাজধানী বলে বিবেচনা করে ইসরায়েল। আর ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে পূর্ব জেরুজালেম দাবি করে।