‘পত্র পত্রিকায়, সিনেমার পর্দায় আমাকে পাঠক, দর্শকরা যেভাবে দেখেন সেটাতো জয়া আহসান না। আমি মোটেও এতো সিরিয়াস টাইপ মানুষ নই। আমি খুব স্বাভাবিক, সাবলীল এবং ভীষণ আটপৌড়ে। আমার সমস্যা হচ্ছে, আমাকে খুব মাথা ভারি ভারি কাজ দেয়া হয় আর আমি সেটা করি বলে আমার ভক্ত দর্শকরাও আমাকে বেশি সিরিয়াস টাইপ মনে করে, ভাবে আমি খুব গম্ভীর। আমি কিন্তু সেটা নই।’
নিজের সম্পর্কে এভাবেই বলছিলেন বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মেধাবী অভিনেত্রী জয়া আহসান। শনিবার চ্যানেল আইয়ের কার্যালয়ে নিজের প্রযোজনায় প্রথম ছবি ‘দেবী’র প্রমোশনে এসেছিলেন তিনি।
দেবীতে কেন টাকা লগ্নি করতে গেলেন জয়া। জানালেন তার প্রকৃত কারণ। জয়া বললেন, ছোটবেলায় যখন হুমায়ূন আহমেদের ‘দেবী’ উপন্যাসটি পড়েছিলাম তখন রানু চরিত্র আমার মধ্যে গেঁথে গিয়েছিলো। পরবর্তীতে যখন আমি ফিল্মে অভিনয় করতে গেলাম তখন আমার মনে হলো কেন কেউ ‘দেবী’ ছবিটা তৈরি করছে না! কেন কেউ আমাকে রানু চরিত্রে অফার করছে না? আমি অপেক্ষা করছি, কিন্তু দেখি কেউ এই ছবিটি নিয়ে ভাবছেই না। এরপর নিজেরই মনে হলো, তাহলে আমিই কেন সাহস করে ‘দেবী’টা তৈরি করছি না! একটা সময় আমার মনে হলো, যে কোনো আর্টিস্টের একটা পর্যায়ের পর প্রযোজক হওয়াটা সাজে। আসলে রানু চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নিজে থেকে উদ্যোগী হয়ে স্বার্থপরের মতো ‘দেবী’ সিনেমাটি করছি। এছাড়া ‘দেবী’তে আছেন হুমায়ূন আহমেদের অনবদ্ধ চরিত্র মিসির আলি। এসব কারণে নির্মাণের উদ্যোগ নেই।
বিজ্ঞাপন, ছোটপর্দার পর বড় পর্দায়ও সফল জয়া আহসান। এবার প্রথমবারের মতো প্রযোজনায় নাম লেখালেন তিনি। অনুভূতি কেমন? জানতে চাইলে জয়া আহসান বলেন, বলতে গেলে এই ছবি কিন্তু জনগণের টাকায় তৈরি হচ্ছে। কারণ আমি সরকারি অনুদান পেয়েছি। ছবির বেশ খানিক অংশ সরকারি টাকায়। বাকিটা আমি আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করেছি। ফলে আমার কাজটা বেশ সহজ হয়েছে।
মিসির আলির সেট নির্মাণ নিয়েও মুগ্ধতা প্রকাশ করেন জয়া। বিশেষ করে মিসির আলির ঘরের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সিনেমায় মিসির আলির যে ঘরকে আমরা তুলে ধরেছি তার সেটটা দুর্দান্ত ছিলো। বেগুন বাগিড় বস্তিতে ছিলো মিসির আলির একটা ঘর। যে ঘরে চল্লিশ হাজার বই ছিলো। পুরো ঘরটা রিক্রিয়েট করা হয়েছিলো। এই ঘরে যাওয়ার পর যে কারো মিসির আলি হতে ইচ্ছে করবে। আমি নিজে যখন প্রথমবার ঘরের ভেতর গেলাম, দেখেই মনে হলো এমনইতো হওয়া উচিত মিসির আলির ঘর।
‘দেবী’ নিয়ে শুধু বাংলাদেশে নয়, কলকাতার দর্শক ভক্তরাও আগ্রহী হয়ে আছেন বলে জানালেন জয়া। ছবিটি কবে নাগাদ মুক্তি পেতে পারে এমন প্রশ্নে জয়া বলেন, ছবিটি যেহেতু সরকারি অনুদানে নির্মিত, তাই সবার আগে যারা অনুদান দিয়েছেন তারা দেখবেন। অনুদান কমেটি দেখার পর সেন্সর থেকে ছাড়পত্র পেলেই আমরা সিনেমা হলে আনার চেষ্টা করবো। আর এসব অফিশিয়াল কাজ কর্ম সেপ্টেম্বরেই হয়তো সম্পন্ হবে। সেই হিসেবে অক্টোবরের মাঝামাঝিতে আমরা চাইছি সিনেমাটি হলে মুক্তি দিতে।
জয়া আহসান এবং তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘সি-তে সিনেমা’র প্রযোজনায় নির্মিত ছবিতে মিসির আলি চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, রানু চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, রানুর স্বামীর চরিত্রে আছেন অনিমেষ আইচ, নীলু চরিত্রে শবনম ফারিয়া এবং আহমেদ সাবেরের চরিত্রে আছেন ইরেশ যাকের।
ছবি: ওবায়দুল হক তুহিন