চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

পরীক্ষার নম্বরের অদৃশ্য হুমকি ভেঙ্গে দিতে হবে

বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় নম্বর কাটা যাওয়ার ভয়ে কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস দেখায় না।  আবহমান কাল ধরে চলে আসা এ প্রথাটি এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। যার কারণে অনেক অপকর্মের পরও শিক্ষকরা পার পেয়ে যাচ্ছেন।

এই প্রথার অন্যতম বলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করে রুশাদ ফরিদী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যেখানে তিনি এরকম একটা অন্যায়ের সাথে আপোষ না করায় ধিক্কার জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। তাদের কাছে দেশ-সমাজ কী পাবে তা নিয়েও  প্রকাশ করেছেন সন্দেহ। শিক্ষক কর্তৃক নম্বর কর্তনের বিষয়টিকে অদৃশ্য হুমকির সঙ্গে তুলনা করে তিনি তা যে কোন মূল্যে ভেঙ্গে দেয়ারও আহ্বান জানান।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে রুশাদ ফরিদী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন,

২০০৮-০৯ সালের দিকের কথা মনে হয়। একটা ব্যাচের সাথে স্টাডি ট্যুরে যাচ্ছি। আমার সাথে আরেকজন শিক্ষক আছেন। একটি ব্যাচে ছেলেপিলে স্বাভাবিকভাবেই বেশ হই হল্লা করছে। ঐ শিক্ষকটি ভাবলেন শুরু থেকেই তাঁদের একটু সাবধান করে না দিলে পরে ঝামেলা হতে পারে। তাই তিনি একটি সৎ উদ্দেশ্য নিয়েই বাসে উঠে কিছু কথা বললেন। আপাতত নিরীহ বক্তব্য কিন্তু তাৎপর্য বেশ গভীর।

অনেক কিছুই বললেন, কিন্তু আসল কথাটা হলো যে ” শোনো, আমাদের এই দুই শিক্ষকের হাতে তোমাদের ২০০ নম্বর আছে। যদি এই ট্রিপে উল্টা পাল্টা কোন ঝামেলা কর তাহলে বুঝতেই পারছো। ”

আবারও বলছি, তিনি কিন্তু ছাত্র ছাত্রীরা যাতে নিরাপদের ঝামেলা মুক্ত ভাবে ট্রিপ শেষ করে ফিরে আসতে পারে, সেই জন্য এই কথা বলে সাবধান করেছেন। অন্য কিছু না।

কিন্তু এই নিরীহ বক্তব্যে কি বোঝা গেল?

বোঝা গেল যে ছাত্র ছাত্রীদের টাইট দিতে গেলে নম্বর, পরীক্ষা, ডিগ্রীর থ্রেট খুব কাজে আসে। তার চেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হলো অন্য কোন অপরাধ যেটির সাথে একজন ছাত্র বা ছাত্রীর পড়াশোনার কোন সম্পর্ক নাই, সেটির শাস্তি পরীক্ষার খাতার উপর দিয়ে যেতে পারে।

এবং এই ব্যাপারটা এতো স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে তিনি শ’খানেক ছাত্র-ছাত্রীর সামনে নির্বিকার ভাবে বলে ফেললেন।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র ছাত্রীদের নীরব নিশ্চুপ থাকার একটা বড় কারণ এই ঘটনায় লুকিয়ে আছে। তারা জানে যে তাদের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কারো কাছে কোন কাজের জন্য জবাবদিহিতা করতে হয় না। তাই কোন ছাত্র ছাত্রীর উপরে কোন ব্যাপারে রাগ উঠলে তাকে পরীক্ষার খাতায় ধ্বসিয়ে দেয়া মুড়ি মুড়কির মতন ব্যাপার।

এখন কিছু কিছু বিভাগে অবশ্য রিভিউ করার একটা প্রক্রিয়া আছে। কিন্তু সেটি এতো ব্যুরোক্রেটিক যে খুব বেশী ছাত্র ছাত্রী সেটাতে যেতে চায় না। এবং অনেক ছাত্র ছাত্রী মনে করে এই রিভিউ করে খুব লাভ নেই, কারণ একজন শিক্ষক আরেকজন শিক্ষকের ভুল ধরতে খুব একটা চাইবেন না।

এখন প্রশ্ন হলো যে এই ভয়াবহ পরীক্ষার নম্বরের হুমকি, যেটি দিয়ে আমরা কিছু কিছু শিক্ষক শিক্ষিকারা ছাত্র ছাত্রীদের সাথে সামন্ত প্রভুর মতন আচরণ করি, এটি কিভাবে অতিক্রম ছাত্র ছাত্রীরা করতে পারে?

একটা হতে পারে স্রেফ চ্যালেঞ্জ করা। রিভিউয়ের সিস্টেম থাকলে সেখানে যাওয়া, না থাকলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে জানানো। তাতে কাজ না হলে রিভিউয়ের ফল আনফেয়ার মনে হলে চেয়ারম্যান, ডীন ভিসি পর্যন্ত যাওয়া । যাওয়া মানে যেয়ে কথা বলা না। প্রত্যেক স্টেজে ফর্মাল চিঠি লিখতে হবে বিস্তারিত কি ঘটেছে সেটি জানিয়ে। এতেও কাজ নাও হতে পারে। সময় নষ্ট হবে। টিচার রা বিভিন্ন ভাবে হ্যারাস করতে পারে। কিন্তু কাজ যেটা হবে, সেটা হলো যে শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাছে একটা মেসেজ যাবে। সেটা হলো যে পরীক্ষায় উল্টা পাল্টা নম্বর দিলে প্রতিবাদ আসতে পারে।

শুধু তাই নয়, দরকার হলে কোন আইনী প্রক্রিয়াও যাওয়া যেতে পারে। আমি নিশ্চিত এই ধরনের কেইসে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য বিনা ফিতে অনেক লইয়ার কাজ করে দিবে।

আপনারা হয়তো ভাবছেন এই সামান্য একটা পরীক্ষার নম্বরের জন্য কে যাবে কোর্টে ঝাপাঝাপি করতে?

সেটা ঠিকই, কিন্তু কাউকে না কাউকে এই নিয়ে ঝাপাঝাপি করতে হবে। কারণ এই পরীক্ষার নম্বর কম দেয়ার হুমকির কারণেই আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের বিরাট অংশ কোন কথা বলে না, বলতে পারেই না।

আমার স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা এক একটা জলজ্যান্ত , প্রানবন্ত মানুষ, যারা অন্যায়ের সাথে আপোষ করে না। ছাত্র বয়স থেকেই যদি আপোষ করতে শিখে যায়, সব কিছু থেকে চোখ সরিয়ে নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কিছু না বোঝে, তাহলে বাকী জীবন কি করবে? এই ছাত্র বা ছাত্রীর কাছ থেকে সমাজ, দেশ কি পাবে?

তাই সবার এই পরীক্ষার নম্বরের যে অদৃশ্য হুমকি সেটা যে কোন মূল্যে ভেঙ্গে দিতে হবে। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে কেউ না কেউ সেটা পারবেই!