চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

পরিবারের সবাইকে খুন করে অনলাইন গেমস চ্যাটে জানায় বাংলাদেশি তরুণ

কানাডার অন্টারিওর মারখামে মা-বাবাসহ পরিবারের চার সদস্যকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ হত্যাকাণ্ডের কিছুক্ষণ পরই কয়েকজন বন্ধুকে হত্যার কথা জানিয়ে টেক্সট মেসেজ ও ছবি পাঠিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মিনহাজ জামান নামের ২৩ বছর বয়সী ওই তরুণের কাছ থেকে অন্তত দু’জন এই মেসেজ পাওয়ার কথা পুলিশকে জানিয়েছে।

সিবিসি নিউজ জানায়, হত্যাকাণ্ডের খবর জানিয়ে ‘মিনহাজ’ নামের একটি আইডি থেকে অনলাইন গেমারদের নেটওয়ার্কিং সফটওয়্যার ‘ডিসকর্ড’-এ পোস্ট দেয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে দেয়া বার্তার সঙ্গে নিহতদের ছবিও সেখানে পোস্ট করা হয় বলে জানান মেসেজটি পাওয়া অন্তত দু’জন গেমার।

‘মিনহাজ’ নামের আইডিটি যে মিনহাজ জামানেরই, তা আম্মারা রিয়াজ নামে তার এক আত্মীয় আাইডিতে বসানো প্রোফাইল ছবি দেখে নিশ্চিত করেছেন। তিনি আগে টানা ৫ বছর তাদের বাসাতেই ভাড়া ছিলেন।

টেক্সট মেসেজে মিনহাজ লিখেছেন, ‘আমি একটু আগে আমার পুরো পরিবারকে হত্যা করেছি, এবং সম্ভবত বাকি জীবনটা আমাকে জেলেই কাটাতে হবে যদি আমি বেঁচে থাকি।’

‘আমি চেয়েছিলাম তারা মরে যাক, যেন আমি কতটা হতাশাজনক অমানুষ, সেটা জেনে তাদের যন্ত্রণা পেতে না হয়। কাজটা খুবই স্বার্থপরের মতো হয়ে যেত।’

মিনহাজের বার্তায় বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ড্রপ আউট’ হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন। এক সময় নাস্তিকতায় পেয়ে বসে তাকে। নিজের লজ্জা ও হতাশার কথা পরিবারের কাছে গোপন রাখতে তিনি তখন থেকেই তাদেরকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন।

হত্যার পর সেখানকার ছবি পোস্ট করে মিনহাজ সেখানে লিখেছেন, ‘প্রথমে আমি আম্মু, তারপর নানী, তারপর বোন এবং সবশেষে আব্বুকে খুন করি।’

এর আগেও মিনহাজ এ ধরনের হতাশাজনক পোস্ট দিতেন বলে তার এই কথাবার্তাকে কেউ গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে অপর প্রান্তে তার সঙ্গে খেলতে থাকা বন্ধুটি বিষয়টি সত্য সন্দেহ করে পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ বাড়ির ভেতর থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে মিনহাজকে আটক করে।

ইয়র্ক রিজিওনাল পুলিশ জানিয়েছে, ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ যাওয়ার অন্তত ১২ ঘণ্টা আগে, অর্থাৎ রোববার মধ্যরাতের দিকে মেসেজগুলো পাঠানো হয়েছিল।

প্রবাসী বাংলাদেশি-মরদেহ উদ্ধার-তরুণ-মেসেজ
এই বাসা থেকেই উদ্ধার করা হয় মরদেহ

ইয়র্ক পুলিশের মুখপাত্র অ্যান্ডি প্যাটেনডেন জানান, এর কিছু সময় পর তাদের কাছে অজ্ঞাত একটি ফোনকল আসে যে, রোববার বিকেল ৩টার দিকে মারখাম উপশহরে ক্যাসেলমোর এভিনিউয়ের একটি বাসায় চারজন আহত হয়ে পড়ে আছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহগুলো পড়ে থাকতে দেখে এবং বাসা থেকে মিনহাজকে আটক করে।

ময়নাতদন্ত শেষে সর্বশেষ ব্রিফিংয়ে পুলিশ জানায়, ওই সময়ই মিনহাজ পরিবারের সবাইকে হত্যার কথা স্বীকার করেছিলেন।

এরপর সোমবার তাকে টরন্টোর নিউমার্কেট আদালতে হাজির করা হলে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে পুলিশি হেফাজতে পাঠান আদালত।

মিনহাজের বিরুদ্ধে চারটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। শুক্রবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মিনহাজকে আবার আদালতে উপস্থাপন করা হবে।

ইয়র্ক রিজিওনাল পুলিশের কর্মকর্তা লোরা নিকোল বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডে আর কেউ জড়িত আছে বলে মনে হচ্ছে না। মিনহাজই এমন নৃশংসতা চালিয়েছে। তাই এলাকাবাসীর ভয় পাওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না।’প্রবাসী বাংলাদেশি-মরদেহ উদ্ধার-তরুণ-মেসেজ

মিনহাজ জামানের বাবা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বাংলাদেশের টাঙ্গাইল থেকে কয়েক দশক আগে কানাডায় পাড়ি জমান। মা মমতাজ মুক্তা জামান, মিনহাজের ছোটবোন ম্যালিসা (২১) এবং কানাডায় বেড়াতে যাওয়া মুক্তা জামানের মা ওই সময় ঘরেই ছিলেন।

প্রতিবেশীদের উদ্ধৃত করে কানাডার গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, স্বল্পভাষী ও শান্তশিষ্ট স্বভাবের মিনহাজ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে ঝরে পড়ার পর ধীরে ধীরে নিভৃতচারী হয়ে যেতে থাকেন। শুধু বাসার কাছে অবস্থিত শপিং মল এবং জিমে সময় কাটাতেন তিনি।