চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

পরিবহন ধর্মঘটকে কীভাবে দেখছে সাধারণ মানুষ

সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের প্রথম দিনে পুরো রাজধানীতেই ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া রাস্তায় কোনো গণপরিবহন নেই। চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ অধিকাংশ মানুষ হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। ধর্মঘটের ফলে রাজধানীতে এক প্রকারের মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে বলে জানিয়েছে নগরবাসী।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন জানিয়েছে দাবি আদায় না হলে লাগাতার ধর্মঘটের ঘোষণাও আসবে।

রাজধানীজুড়ে কোনো ধরণের গণপরিবহন না চলায় নগরবাসীর ভোগান্তির সুযোগ বুঝে পরিস্থিতি আরো চরম করে তুলছে রিকশা ও সিনএনজি চালিত অটো রিকশা। তিন থেকে চারগুণ বেশি দামে ভাড়া হাঁকছে তারা।

সরেজমিনে ধর্মঘটের প্রথম দিন সকালে রাজধানীর মেহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, ধানমন্ডি, ফার্মগেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া রাস্তায় কোনো গণপরিবহন নেই।

গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেঁটেই অনেকে গন্তব্যস্থলে রওনা হয়েছেন। সিএনজিচালিত অটোরিকশা পাওয়া গেলেও চালকরা কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নিচ্ছে। রিকশাচালকরাও তিন থেকে চারগুণ বেশি ভাড়া নিচ্ছে।

মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির অপেক্ষায় থাকা সেলিম আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘পল্টনে অফিস, ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় দাঁড়িয়ে আছি, রিকশাওয়ালার কাছে জানতে চাইলাম পল্টন কত নিবা তার উত্তর; পল্টন চারশ’ টাকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভাই বেতন আর কতই পাই। ঢাকা শহরে সংসার করাই আমাদের মত মানুষের জন্য কষ্টকর। তারপর যদি দু’দিন পরপর এমন পরিবহন ধর্মঘট হয় তাহলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। জনগণের এসব ভোগান্তি সরকারের কঠোরভাবে দমন করা উচিত।’

কল্যাণপুরের বিআরটিসি কাউন্টারে কয়েকশ মানুষের ভিড়, রূমানা নাজনীন নামের এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি বনানী যাবো, মিড টার্ম পরীক্ষা চলছে, আধাঘণ্টার মধ্যে পৌঁছাতে না পারলে পরীক্ষা দিতে পারব না, ঘণ্টা দু’য়েকের বেশি হলো অপেক্ষা করছি। পরীক্ষা দিতে না পারলে আমার পরীক্ষার টাকা আবার দিতে হবে, এই টাকা কি শ্রমিক ফেডারেশন দিবে?’

ধানমন্ডির ১৯ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষামান অালভী কায়সার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আমার দাদী অসুস্থ তাকে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে নিতে হবে, ধর্মঘটের বিষয়টি জানা ছিল না, বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি কোন পরিবহন নেই।’

ফার্মগেট তেজগাঁও কলেজের সামনে থাকা রোকেয়া জাহান বলেন, ‘মতিঝিলে অফিস কিন্তু যাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই, পুরুষরাতো তাও হেঁটেই গন্তব্যে রওনা হয়েছে কিন্ত মহিলা ও বয়স্কদের বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। হঠাৎ করে শ্রমিকদের ডাকা পরিবহন ধর্মঘটে মানবিক বিপর্যয় ঘটছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায় পুরো রাজধানী গণপরিবহনশূন্য। যেটুকু মিলছে তা হলো বেশি ভাড়ার রিকশা, অ্যাপস চালিত মোটরসাইকেল ও কার, সিএনজি অটোরিকশা ও বিআরটিসির হাতেগোনা কয়েকটি গাড়ি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কেউ কেউ পিকআপে চেপে বসেছে গন্তব্যে যেতে। কেউ মোটরসাইকেল, আবার কেউ রিকশায় চেপে বসেছে। রোগীদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ যাত্রীই পায়ে হেঁটে রওনা দিয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা আট দফা দাবি উত্থাপন করেছি। সরকারের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমাদের দাবি মানা হয়নি। যে কারণে আমরা পাস হওয়া আইনের কিছু ধারার সংশোধন ও উত্থাপন করা আট দফা দাবি বাস্তবায়নে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি ঘোষণা করেছি। এই কর্মসূচি সারাদেশে একযোগে শুরু হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই কর্মসূচিতে বিক্ষোভ মিছিল হবে, তবে পিকেটিং করা হচ্ছে না। আমাদের কর্মবিরতির সুযোগ নিয়ে থার্ডপার্টি, পুলিশ কিংবা অন্য কোনো পক্ষ যদি বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে তবে তা রুখে দেয়া হবে। সেজন্য আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিবহন শ্রমিকরা সড়কে রয়েছি।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে রোববার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘট পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে। এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে লাগাতার ধর্মঘটের ঘোষণাও দিয়েছে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।

শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কয়েক হাজার পরিবহন শ্রমিক সমাবেশে অংশ নেন।

সেখানে সংসদে পাস হওয়া ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর কয়েকটি ধারা সংশোধন এবং আট দফা দাবি পূরণের আহ্বান জানানো হয়।