কার আগে কে যাবে? কে কত বেশি যাত্রী উঠাতে পারবে, সেই অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে রাজপথে বা সড়ক-মহাসড়কে। কোনো প্রকার নির্দিষ্ট বাস স্টপেজ নেই। যেখানেই যাত্রী দাঁড়িয়ে আছেন সেখানেই যাত্রীবাহী বাস থেমে যায়, পাশাপাশি যাত্রীও নামানো হচ্ছে।
যত বেশি যাত্রী ওঠানো যাবে তত আয়। সুতরাং সেই প্রতিযোগিতায় নেমে দু’একজন যাত্রী আহত বা নিহত হলে তার দায় কার? বাংলাদেশের পরিবহন খাতের এই চিত্র বর্তমানে সবাইকে ভাবিয়ে তুললেও সরকারের যেন কোনো মাথা ব্যথাই নেই।
মাথাব্যথা না থাকার কারণেই দুর্ঘটনায় হতাহতের মিছিল যেন ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। সরকার কাদেরকে সচেতন করবে, কাদের ওপর চোখ গরম করবে? সবই তো তাদের লোক। যদি কোনো কারণে পরিবহন খাতের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়ে যাবে। সরকার ডাকবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে। মন্ত্রী বলবে আমার কথা শুনছে না। আমি কি করবো? দেশ অচল করে দেবার হুমকি আসবে। সরকার জেনেশুনে কেন নির্বাচনের আগ মুহুর্তে এ রকম নিজের পায়ে কুড়াল মারার সিদ্ধান্ত নেবে? এটা তো বোকাও বোঝে।
ঢাকাসহ সারাদেশে পরিবহন মালিকেরা কারা? মন্ত্রীসহ সাংসদ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্রভাবশালী নেতারা কোনো না কোনোভাবে জড়িত। কেন বর্তমানে সরকারের অঙ্গ সংগঠনের নেতারা এই পরিবহন ব্যবসায়? সেটারও চমৎকার ব্যাখ্যা রয়েছে। হরতালে বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা তাদের মালিকানার গাড়িগুলো রাজপথে নামায় না। তখন পরিবহন খাত অচল হয়ে পড়ে। মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। তাই এই খাতকে সক্রিয় রাখতে সরকারের লোকজন এই খাতে এসেছেন।
চমৎকার যুক্তি। খণ্ডানোর কোনো রাস্তা নেই। আর এই সুযোগ নিয়ে নিজেদের খেয়াল খুশি মতো ভাড়া নেয়া থেকে শুরু করে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমেছে তারা।
সাধারণ মানুষের কোনো কথা বলার সুযোগ নেই পরিবহন মালিকদের দাপটের কারণে। কত মধুর কথা শুনল সাধারণ মানুষ। ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য থেকে শুরু করে যাত্রী হয়রানি, কোনোটারই সুরাহা করতে পারেনি সরকার। সাধারণ মানুষ গিনিপিগ হয়ে যেন চলাফেরা করছে। কি করবে? চলতে তো হবে। কে কথা বলবে? কোন বিপদ আবার ডেকে আনবে। রাতে বাসায় ঘুমানো যাবে না ঠিকমত। রাস্তায় টিকটিকি ফলো করবে। অযথা হয়রানির শিকার হওয়ার চেয়ে চুপ থাকাই যেন শ্রেয় – এই মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে উঠছে সবাই।
প্রশ্নটা অন্যখানে – সরকার কি পরিবহন খাতের লোকজনের ওপর ভর করে আগামী নির্বাচনী বৈতরণী পার হবার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফেলেছে?
আমজনতার চুপ থাকার মানে যদি এই ভেবে থাকে সরকার তা হলে তা হবে বোকার স্বর্গে বসবাস। একবার যদি বেঁকে বসে আমজনতা তা হলে আর গদি ঠেকানোর উপায় থাকবে না। সম্প্রতি কোটা নিয়ে যে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল, তা থেকে কিছুটা শিক্ষা নেয়া দরকার সরকারের। আন্দোলনে কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিল একবার ভেবে দেখা দরকার।
সাধারণ মানুষের আবেগকে বুঝতে হবে সরকারকে। তাদের কষ্টের কথা ভাবতে হবে। দলীয় লোকজনের হিসাব করলে চলবে না। পরিবহন খাতের চাঁদাবাজির টাকায় যারা জোর গলায় কথা বলে তারা সময় মতো পালাবে। থাকবে তখন আমজনতা। যাদের একটি ভোটের অনেক মূল্য। যাদের সুচিন্তিত মতামতের অনেক দাম। বঙ্গবন্ধুকে কারা চাঁদাবাজি করতে পারবে বলেই ভালোবাসে আর কারা মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসে তার হিসাব পাওয়া যায় ভোটের সময় ব্যালট বাক্সে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)