দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার কথা জানিয়েছে সরকার। ঘোষণা অনুযায়ী সেই পরিবর্তন আসবে মূলত প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে। আরও সহজ করে বললে, প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাক্রমে ব্যাপক পরিবর্তনের পাশাপাশি এসব স্তরের পরীক্ষা পদ্ধতিও বদলে যাবে। যার বাস্তবায়ন হবে ২০২৩ সালে। তবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে আগামী বছর থেকে দুইশো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রণালয় বলছে, প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্য এখনকার পরীক্ষানির্ভর মূল্যায়ন পদ্ধতি থেকে শিক্ষাকে বের করে আনা। সেই সাথে শ্রেণিকক্ষেই দক্ষতাভিত্তিক মূল্যায়ন চালু করা। তাতে কেন্দ্রীয়ভাবে অষ্টম শ্রেণিতে জেএসসি এবং পঞ্চম শ্রেণিতে পিইসি পরীক্ষা নেওয়ার দরকার হবে না। বরং বিদ্যালয়ের অন্যসব শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার মতোই ওই শ্রেণিগুলোর মূল্যায়ন করা হবে। এমনকি প্রাথমিক স্তরে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষাও থাকবে না।
আমরা আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ পরির্বতনের কথা জেনেছি, তা হলো মাধ্যমিক স্তরে মানবিক, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য- এসব গ্রুপ বিভক্তি আর থাকবে না। তার মানে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে সবাইকে অভিন্ন বিষয় পড়তে হবে। আর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে। এ দুটি পরীক্ষার নম্বর সমন্বয় করে উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসির ফল দেওয়া হবে।
এর বাইরে আরও কিছু পরিবর্তনের কথা বলেছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। এটা ঠিক, আধুনিক বিশ্ব প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে, বদলে যাচ্ছে। সেই বদলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদেরকেও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে। আর সেজন্য দেশের শিক্ষাক্রম সময়োপযোগী করতেই হবে।
তবে শিক্ষাক্রম পরিবর্তনে আমাদের আগের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। ২০০৮ সাল থেকে মাধ্যমিক স্তরে এবং ২০১২ সাল থেকে প্রাথমিক স্তরে ধাপে ধাপে ‘সৃজনশীল পদ্ধতি’ শুরু করেছিল সরকার। যার উদ্দেশ্যও ছিল মুখস্থ বিদ্যা থেকে শিক্ষার্থীদের বের করা আনা। সেই পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে নানান সীমাবদ্ধতার কথা আমরা জানি। বহু অভিভাবক ও শিক্ষাবিদ পুরো প্রস্তুতি ছাড়া ‘সৃজনশীল পদ্ধতি’র বিপক্ষে ছিলেন। তখন তারা যুক্তি দেখিয়েছিলেন, ওই পদ্ধতিতে এমন কিছু বিশেষায়িত বিষয় ছিল, তা পড়ানোর মতো পর্যাপ্ত শিক্ষক ছিল না। কিন্তু বড় ধরনের বিরোধীতার মধ্যেও ‘সৃজনশীল পদ্ধতি’ বাস্তবায়ন করেছিল সরকার।
এরই মধ্যে বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে আমরা জেনেছি, দেশে শিক্ষার্থী অনুপাতে বিজ্ঞান এবং গণিতের পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। এমনকি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পড়ানোর মতো শিক্ষকেরও অভাব রয়েছে দেশে। এই অবস্থায় একটা শঙ্কার জায়গা তৈরি হয়, নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন শিক্ষকরা। কেননা প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকাই বড়।
আমরা মনে করি, পাইলট প্রকল্পে এই বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে। সীমাবদ্ধতা বা দুর্বল জায়গাগুলো বের করে তার প্রতিকারও খুঁজতে হবে। এ জন্য চাই ব্যাপক প্রস্তুতি। তা না হলে, শিক্ষার্থী-শিক্ষকের সঙ্গে ভুগতে হবে পুরো জাতিকেই।