ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসলে ‘ঐতিহাসিক অনুতাপের’ সম্মুখিন হতে হবে।
এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসবেন কিনা আগামী ১২ মে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলোতে এই চুক্তির বিরুদ্ধেই তার দৃঢ় অবস্থান প্রকাশ পেয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটেই রুহানির এ হুঁশিয়ারি।
এই চুক্তিকে ‘পাগলাটে’ অভিহিত করে এর তীব্র সমালোচনা করে আসছেন ট্রাম্প।
২০১৫ সালে ইরানের সাথে এই চুক্তি হয় যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের। এর ফলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে লাগাম টানার বিনিময়ে দেশটির উপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়া হয়।
ইরানের পরমাণু অস্ত্রের উন্নয়ন বন্ধ রাখতে এই চুক্তিকেই সেরা পথ বিবেচনা করছে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং জার্মানি। যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তি থেকে সরে না আসার জন্য প্রভাবিত করারও চেষ্টা করে আসছে তারা।
এই বিষয়ে হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার জন্য রোববার ওয়াশিংটন সফর করছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী বরিস জনসন।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, চুক্তি থেকে সরে না আসতে।
তবে, ১২ মে যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেবে বলে হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প, যদি না কংগ্রেস ও ইউরোপীয় শক্তিরা চুক্তির ‘বিপর্যয়কর ত্রুটিগুলো’ সংশোধন না করে। সেদিনই এই চুক্তির ১২০ দিনের রিভিও মেয়াদ শেষ হবে।
রোববার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক মন্তব্যে প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, এই চুক্তি বেরিয়ে আসলে আমেরিকা ‘ঐতিহাসিক অনুতাপের’ পরিণতি নিয়ে আসবে।
ট্রাম্পের যেকোন সিদ্ধান্ত মোকাবেলার জন্য ইরানের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
ইরান জোড় দিয়ে বলেছে, তার পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং চুক্তির উপর পুনরায় আলোচনা সমর্থন করে না তারা।
গত সপ্তাহে ইসরায়েল একটি ‘গোপন পরমাণু ফাইল’ প্রকাশ করে, যেখানে ইরানের একটি গোপন পরমাণু অস্ত্রের কর্মসূচির তথ্য রয়েছে বলে দাবি করে তারা। ১৫ বছর আগে থেকেই তা ছিল।
এর পরিপ্রেক্ষিতে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ‘মিথ্যাবাদী’ অভিহিত করেছে ইরান। তাদের দাবি, পুরনো অভিযোগ সম্বলিত পুরোনো এক নথি এটি, যা জাতিসংঘের পরমাণু ওয়াচডগ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক এনার্জি অ্যাজেন্সির (আইএইএ) নজরে ছিল।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, এই নথি আসল এবং ইরানের ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি যে ‘মিথ্যার উপর নির্মিত’ তাই প্রকাশ করে।
চুক্তি অনুযায়ী ইরানের পরমাণু কর্মসূচি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সীমাবদ্ধ থাকবে এবং ব্যালেস্টিক মিসাইলের উন্নয়নও তা বন্ধ করে না, চুক্তির এই বিষয় নিয়েও ক্ষুদ্ধ ট্রাম্প।
ট্রাম্প বলেন, এই চুক্তি ইরানকে ১০০ বিলিয়ন ইউএস ডলারের অভাবনীয় লাভ দিচ্ছে। আর এই অর্থ মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে অস্ত্র, সন্ত্রাস ও নিপীড়ণের জন্য অবৈধভাবে ব্যবহার করছে তারা।
ওয়াশিংটনে দুই দিনের সফরে থাকা ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন এবং কংগ্রেসের বিদেশী নিতীনির্ধারণী নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন।
এই মাসের শুরুতে, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ উদ্বেগ নিরসনের মধ্যে দিয়েই চুক্তিটি অব্যাহত রাখা গুরুত্বপূর্ণ।