চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

পবিত্র রমজান মাস কেন শ্রেষ্ঠ?

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: ‘শাহরু রমাদ্বা-নাল্লাযী উনযিলা ফি-হিল কুরআন’। অর্থাৎ, ‘রমজান ওই মাস, যে মাসে আমি পবিত্র কুরআন নাযিল করেছি’। আল্লাহ তায়ালার এ বাণী দ্বারা বুঝা যায়, রমজান কেন অন্য মাসের চেয়ে মহিমান্বিত, শ্রেষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ। সমস্ত আসমানীগ্রন্থের শ্রেষ্ঠগ্রন্থ ‘আল কুরআন’ যে পবিত্র মাসে নাযিল হয়েছে, নিঃসন্দেহে সে মাস অন্যমাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তাৎপর্যপূর্ণ ও বরকতময়।

রমজানের নামকরণ
বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) ‘গুণীয়াতুত ত্বালেবীন’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন: ‘রমজ্বী’ শব্দের অর্থ বর্ষার বৃষ্টি। বৃষ্টি যেরূপ যাবতীয় ময়লা-আবর্জনা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দেয়, তদ্রুপ রমজান মাসও বান্দার যাবতীয় পাপ মুছে দিয়ে পবিত্র করে দেয়। যার দরুন এ মাসের নাম রাখা হয়েছে ‘রমজান’।

পবিত্র রমজান মাস কেন শ্রেষ্ঠ?
অসংখ্য কারণে পবিত্র মাহে রমজান অন্যান্য মাসসমূহের উপর শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। তন্মধ্যে কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো-

(১) রমজান কুরআন নাযিলের মাস
নবীদের শ্রেষ্ঠনবী আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (দ.), আসমানী গ্রন্থসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠগ্রন্থ পবিত্র কুরআনুল কারিম, আর শ্রেষ্ঠনবীর উপর শ্রেষ্ঠগ্রন্থ যে মাসে নাযিল হয়েছে, সেটি মাহে রমজান। অতএব, শ্রেষ্ঠনবীর উপর শ্রেষ্ঠগ্রন্থ নাযিলের মাস রমজানও অন্যান্য মাসসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

(২) কেবল রমজান মাসের নামই কুরআনে স্পষ্টাকারে উল্লেখ রয়েছে
পবিত্র মহাগ্রন্থ আল কুরআনে অন্য কোন মাসের নাম উল্লেখ করা হয়নি। শুধুমাত্র রমজান মাসের নামই আল কুরআনে উল্লেখ রয়েছে। তাই এ মাস শ্রেষ্ঠ হওয়ার এটিও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।

(৩) হাদীস পাকের ভাষ্যে রমজান আল্লাহর মাস
নবী করিম (দ.) ইরশাদ করেছেন: শা’বান আমার মাস, আর রমজান হলো আল্লাহর মাস’ (মা’সাবাতা বিস্সুন্নাহ)। রমজান মাসে রোজা পালন করলে আল্লাহ তায়ালা প্রতিদান ঘোষণা করেছেন এভাবে: ‘মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকীর সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোজার ব্যাপারটা ভিন্ন। কেননা তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করব। বান্দা একমাত্র আমার জন্যই নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে। (সহীহ মুসলিম-১১৫১)।

হাদীসে কুদসীতেও অনুরূপ বর্ণনা এসেছে। নবীজির ইরশাদ: ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, রোজা আমারই জন্য রাখা হয় এবং আমিই এর প্রতিদান দেবো’। (সুনানে বায়হাকি)

(৪) রহমত, মাগফেরাত, নাজাতের মাস
পবিত্র মাহে রমজান একাধারে রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের সুসংবাদ প্রদান করে। এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (দ.) ইরশাদ করেন: ‘রমজান এমন মাস, যার প্রথমাংশে আল্লাহ তাআলার রহমত বর্ষিত হয়। যার ফলে মানুষের জন্য গুনাহের গভীর অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসার এবং ইবাদত করে পবিত্র হবার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই মোবারক মাসের মধ্যভাগে পাপ থেকে মুক্তি লাভ হয় এবং শেষাংশে জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক স্থায়ী আজাব থেকে রেহাই হয়’।

(৫) এ মাসে শয়তানকে বেড়ি পড়ানো হয়
রমজান মাস প্রবেশের সাথে আল্লাহর আদেশে শয়তানকে বন্দি করা হয় এবং পুরো মাস তাকে বন্দি রাখা হয়। মহানবী (দ.) ইরশাদ করেন: ‘রমজান মাসের প্রথম রজনীতে শয়তানদের মজবুতভাবে বেঁধে রাখা হয় এবং অবাধ্য জিনদেরও বন্দি করে রাখা হয়। দোযখের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোনো দরজা পুরো রমজান মাসে খোলা হয় না এবং জান্নাতের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়। একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। সঙ্গে সঙ্গে একজন আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকেন, হে সাওয়াব প্রত্যাশীরা! অগ্রসর হও, এটা সাওয়াবের মোক্ষম সময়। হে পাপিষ্ঠরা! পাপ থেকে হাত গুটিয়ে নাও এবং নিজেদের গুনাহ থেকে বিরত রাখো। কেননা, এই পবিত্র সময়টা তাওবা করার ও গুনাহমুক্ত হওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়। এই পবিত্র মাস কেবল আল্লাহ তাআলার জন্য। আল্লাহ তাআলা এই পবিত্র মাসের সম্মানার্থে অনেক পাপিষ্ঠকে ক্ষমা করে দেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। আর তা রমজানের প্রতি রাতেই হয়ে থাকে। (বায়হাকি শু’আবুল ঈমান)

প্রশ্ন হয়ে থাকে যে, তবে মানুষ এ মাসে অপকর্ম, অশ্লীলতা করে কীভাবে? এর উত্তর হলো, যেহেতু বাকি এগার মাস শয়তান মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়, সেহেতু এর প্রভাব মানুষের মাঝে অনেকদিন ধরে বিদ্যমান থেকে যায়। যার ফলে কিছু কিছু মানুষ এ মাসেও নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকে।

(৬) এ মাসের ইবাদাতের সওয়াব বহুগুণ
অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসের ইবাদাতের সওয়াব অনেক বেশি। হাদীসে পাকে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (দ.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ মাসে নফল ইবাদাত করলো, সে যেন অন্যমাসের ফরজ ইবাদাত পালন করলো। আর যে এ মাসে একটি ফরজ পালণ করলো, সে যেন অন্যমাসের ৭০টি ফরজ ইবাদাত করলো’। অর্থাৎ- অন্যমাসে একটি ফরজ ইবাদাতে যে সওয়াব, এ মাসে তা নফল দ্বারাই পাওয়া যায়। আর অন্যমাসের ৭০টি ফরজের সওয়াব এ মাসের একটি ফরজ দ্বারা অর্জন করা যায়। (বায়হাকি শুয়াবুল ঈমান)

রহমত, মাগফিরাত, নাযাত, রোযা, সাহরী, ইফতার, তারাবীহ, লাইলাতুল কদর সহ আরো বহু অনন্য বরকতময় বৈশিষ্টমণ্ডিত এ পবিত্র মাস সন্দেহাতীতভাবে অন্য সকল মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। বৈচিত্রের এত রকমফের, ইবাদাতের এত মোহনা, সংযমের এমন দৃষ্টান্ত সচরাচর অন্যান্য মাসে দেখা যায় না।

তাই বলা চলে রমজান ইবাদতের বসন্ত, অতএব আমাদের উচিৎ হবে এ পবিত্র মাসে মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসুল (দ.) এর সন্তুষ্টি আদায়ের লক্ষ্যে বেশি বেশি ইবাদাত-রিয়াজত করা। অনাহারিদের মুখে খাবার তুলে দেয়া, বস্ত্রহীনের শরীর আবৃত করা, সর্বোপরি অভাবী-দুঃখী লোকেদের সাহায্যে এগিয়ে আসা। আল্লাহ পাক আমাদের সে তাওফিক দান করুন, আমিন!