যে করোনাভাইরাসের প্রভাবে বর্তমান পৃথিবীর জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থা, সে ভাইরাসকে পৃথিবীবাসীর জন্য অশুভ, ভয়ংকর অশুভ হিসেবে বিবেচনা করার বিপরীত চিন্তা তেমন কারো ভাবনায় নেই। একটা সূত্র প্রায় সর্বজনবিদিত যে, প্রতিটি বিষয়কে প্রাথমিকভাবে দু’টি মাধ্যমে যাচাই করা যায়: ইতিবাচক ও নেতিবাচক।
পৃথিবীর যে কোনো বিষয়কে চাইলেই যে কোনো একটি ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা যায়, এখন ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে বিষয়ের প্রাথমিক ঠিকানা। বিষয়টি ইতিবাচক গুলিস্তানে ঠাঁই পাবে না নেতিবাচক নর্দমায়।
করোনা যখন তার থাবায় প্রায় পুরো বিশ্ব গ্রাস করে ফেলেছে তখনই আমাদের মুসলমানদের নিকট হাজির হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। আমরা যদি রমজানকে সামনে রেখে করোনার প্রতিরোধকল্পে লক-ডাউন ব্যবস্থার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টি নিক্ষেপ করি তাহলে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক আমরা খুঁজে পাই। তন্মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য এমন পাঁচটি ইতিবাচক দিক আমরা পাঠক মহলে পেশ করছি, যে দিকগুলো আমাদের রমজানকে ‘সফল’ করতে যথেষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।
প্রচুর সময়: করোনার প্রতিরোধে লক-ডাউন ব্যবস্থার কারণে বাহিরের কাজ-কর্ম নেই বললেই চলে। ফলে আমাদের হাতে চলে এসেছে প্রচুর সময়। এ সময়গুলোকে আমরা নষ্ট না করে, ইবাদতের মাধ্যমে ফলপ্রসূ করতে পারি। হতে পারে সেটা নফল নামায, কুরআন তেলাওয়াত, তাসবিহ, দুরূদ শরিফ তেলাওয়াত অথবা অন্য যে কোনো ইবাদতের মাধ্যমে।
তবে, সাওয়াবের দৃষ্টিকোণ থেকে ইবাদতের মধ্যে সর্বোচ্চ ফলপ্রসূ কুরআন তেলাওয়াত; কীভাবে? তিরমিযি শরিফের হাদিসে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘোষণা অনুসারে, কুরআন তেলাওয়াতের একটি হরফে দশ নেকি আবার রমজানের বিশেষ মর্যাদায় সেটা দশ থেকে সত্তর গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি হবে। একবার চিন্তা করুন, ঘণ্টায় যদি আপনি দশ পৃষ্ঠা কুরআন তেলাওয়াত করেন তাহলে কত সাওয়াব আপনার আমলনামায় যোগ হবে?
আতঙ্ক বা ভয় থেকে ইবাদত: অনেকেই এ ভাইরাস থেকে রক্ষা পাবার জন্যে এবং ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মানবজাতির এহেন ভয়ংকর বিপর্যয় দেখে আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করেন, ইবাদতে লিপ্ত হন। আতঙ্কিত বা ভয় থেকেও যিনি ইবাদত
করেন, করবেন রমজান তার জন্যও সোনায় সোহাগা! যে পরিমাণ ইবাদত করবেন তা রমজানের খাতিরে দশ থেকে সত্তর গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি হয়ে আপনার আমলনামায় যোগ হবে।
প্রতিবেশিকে সহযোগিতার মানসিকতা: আমাদের আশপাশে অনেক গরীব, সামর্থ্যহীন পরিবার আছে যাদের ব্যাপারে হয়তো আমরা বে-খবর ছিলাম, কিন্তু করোনার আর্থিক বিপর্যয়ে তাদের দিকে ফিরে তাকাবার সুযোগ আমাদের হয়েছে। আমাদের প্রতিবেশিদের মধ্যে কার কেমন আর্থিক অবস্থা তা খুব ভালোভাবে অবগত হবার একটা সুযোগ আমাদের কাছে এসেছে।
এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে আমরা যদি যে কোনোভাবে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করি তাহলে রমজান তার হাত আমাদের দিকে প্রসারিত করবে দশ থেকে সত্তর গুণ পর্যন্ত সাওয়াব বৃদ্ধির মাধ্যমে।
যাকাতের মূল উদ্দেশ্য হাসিল: ইসলামে ‘যাকাত’ ফরজ হওয়ার অন্যতম প্রধান একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, দারিদ্র্যতা দূর করা। করোনার এ দুর্যোগ পরিস্থিতিতে আমাদের চারপাশে অনেক হতদরিদ্র পরিবার দৃষ্টিগোচর হচ্ছে, যারা বর্তমানে খুবই দুর্দশার মধ্যে পতিত হয়েছে, এমতাবস্থায় আমরা সঠিক জায়গায় যাকাত প্রদানের একটি মহৎ সুযোগ পাচ্ছি। যাকাত দেবার জন্যে প্রাপ্য ব্যক্তি খুঁজতে অন্তত এ বছর ভোগান্তিতে পড়তে হবে না; করোনার কল্যাণে আমরা প্রাপ্য ব্যক্তিকে যাকাত প্রদানের মধ্য দিয়ে যাকাতের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে পারবো।
ঈদের আমেজের অনুপস্থিতিতে রোযার স্বকীয়তা বজায় থাকবে। অন্যান্য বছর আমরা সহজভাবে লক্ষ্য করি যে, ঈদের আমেজে রমজানের শেষাংশের পবিত্রতা, স্বকীয়তা তীব্রভাবে ক্ষুণ্ণ হয়; ঈদের কেনাকাটার অনাবশ্যক ব্যস্ততার দরুন আমরা রমজান যেভাবে শুরু করি সেভাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে শেষ করতে পারি না। বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই বিব্রতকর ও অশোভনীয়।
কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি আমাদের প্রতিকূলে থাকায় ঈদের কেনাকাটার প্রতি আমাদের ঝোঁক তেমন থাকবে না, থাকলেও তা হবে অত্যন্ত সীমিত আকারে। ফলে অন্যান্য বছরের ন্যায় এ বছর ঈদের আমেজে রমযানের শেষাংশ পর্যবসিত হবার সুযোগ খুবই কম।
রমজান মাসকে সামনে রেখে উপর্যুক্ত পাঁচটি ইতিবাচক দিক তখনই যথার্থ ‘ইতিবাচক’ হবে যখন তা আমাদের কর্মে ইতিবাচকভাবে বাস্তবায়িত হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে এ ইতিবাচক দিকগুলোর সদ্ব্যবহার করার তৌফিক দান করুক, আমিন।