‘রমজান ঐ মাস; যে মাসে আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি’ (সুরা বাকারা)। পবিত্র মাহে রমজান দরজায় কড়া নাড়ছে। কেবল রমজানের চাঁদটি উদিত হওয়ার অপেক্ষায়। তারপর আল্লাহ তাআলার রহমতের দ্বার বান্দার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে।
পর্যায়ক্রমে রহমত-মাগফিরাত-নাজাতের মতো মহিমাময় উপহারসামগ্রী পরিবেশন করা হবে। শিকলে বাঁধা পড়বে অভিশপ্ত শয়তান। চারিদিকটা আল্লাহ তাআলার রহমতে বেষ্টিত হয়ে যাবে।
অতএব, এ মহান আয়োজনের জন্য প্রস্তুত হওয়া চাই। খোদা তাআলার অগুনতি নেআমত লুফে নেয়ার জন্য পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামা চাই।
‘‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে রজব ও শা’বান মাসের বরতক দান করুন এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’’ রজব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার সাথে সাথেই প্রিয়নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবেই দুআ করতে করতে পবিত্র রমজানের জন্য প্রস্তুতি শুরু করতেন।
নবীদের নবী মুস্তফা সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। কুরআনের ভাষায় ‘উসওয়াতুন হাসানাহ’। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করে রমজানের যাবতীয় ইবাদত যাতে দেহ-মন সুস্থ থাকা অবস্থায় সম্পাদন করতে পারি, সেজন্য মহান আল্লাহ তাআলার নিকট বেশি বেশি দুআ করা উচিত।
রমজানের পূর্বে শা’বান মাস। এ মাসে রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বছরের অন্য কোনো মাসে শা’বান মাসের চেয়ে বেশি রোজা রাখতে দেখিনি।
শা’বান মাসে তিনি প্রায় সারা মাসই রোজা রাখতেন; সামান্য কয়েক দিন ছাড়া (সুনানে তিরমিযি: ৭৩৬)। তাই শা’বান মাসে বেশি বেশি রোজা পালন করলে একদিক থেকে প্রচুর সাওয়ার রয়েছে, অপরদিক থেকে রমজার মাসের প্রস্তুতিও হয়ে যায়।
এক্ষেত্রে সতর্কসংকেত হলো, তা যেন রমজানের সাথে মিশে না-যায়। অর্থাৎ রমজান প্রবেশের দুয়েকদিন পূর্বেই যেন রোজা ছেড়ে দেয়া হয়।
পবিত্র রমজান-কুরআন নাজিলের মাস। ফরজ ইবাদতের পরে সর্বাপেক্ষা উত্তম আমল হলো কুরআনের তিলাওয়াত। তাই যাদের কুরআন তিলাওয়াতে ত্রুটি আছে তাদের উচিত রমজান আসার আগেই যথাযথভাবে কুরআনের তিলাওয়াত শিক্ষা করা।
হাদিস শরিফের ভাষ্যমতে এ মাসের একটি ফরজ ইবাদত অন্য মাসের ৭০টি ফরজ ইবাদতের সমান, আর একটি নফল ইবাদত অন্য মাসের ফরজ ইবাদতের সমান। তাই রমজানের পূর্বে ফরজের পাশাপাশি নফল ইবাদতেরও প্র্যাক্টিস করা দরকার। যাতে করে রমজানের পরিপূর্ণ বরকত হাসিল করা যায়।
এছাড়াও রমজান-রোজা বিষয়ক যাবতীয় মাসআলা শিক্ষা করা একান্ত কর্তব্য। কেননা অনেক সময় মানুষ নিজেও জানে না-কখন তার রোজা নষ্ট হয়ে যায়। সেহরি -ইফতারকেন্দ্রিক নানা সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষেরা। সুতরাং এসব বিষয়ে আমাদের সতর্ক হওয়া একান্তই জরুরি।
সর্বোপরি এ মাস আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি এক বিশেষ নেআমত। আমাদের উচিত হবে যথাযথ প্রস্তুতি ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেই নেআমত পরিপূর্ণভাবে হাসিল করতে সচেষ্ট হওয়া। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সেই তাওফিক দান করুন, আমিন!