রাজধানীতে কোন সমাবেশ বা বড় জনজমায়েত হলেই তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় নগর জুড়ে, কোথাও তীব্র যানজট এবং কোথাও গণপরিবহন সঙ্কট। শনিবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণ করায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হয় সমাবেশ।
শোভাযাত্রার নির্ধারিত রুটে যান চলাচল বন্ধ থাকায় তার প্রভাব পড়ে নগরজুরে। গন্তব্যে পৌঁছতে পথে পথে দেরি হওয়ার কথা জানিয়েছেন অনেকে।
সমাবেশের নির্ধারিত রুট এড়িয়ে চলতে জনসাধারণকে অবশ্য আগেই পরামর্শ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। নির্ধারিত রুট ছিল ৩২ নম্বর থেকে রাসেল স্কয়ার হয়ে মিরপুর রোড ধরে কলাবাগান হয়ে সাইন্সল্যাব পর্যন্ত। এরপর সাইন্সল্যাব থেকে বামে মোড় নিয়ে নিউ এলিফ্যান্ট রোড ধরে কাঁটাবন হয়ে শাহবাগ মোড় দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
দুপুরের আগেই ওইসব রোড বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিড়ম্বনার শিকার হন অনেকে। বিকল্প পথ পলাশী মোড় থেকে নীলক্ষেত মোড়, কাঁটাবন-মোতালিব প্লাজা হয়ে কাওরান বাজারের সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত তীব্র যানজট ছিল বলে জানান বেসরকারি চাকুরিজীবী ইবরাহিম হোসেন।
তিনি বলেন: আমি নিয়মিত শাহবাগ-বাংলামোটর-মগবাজার সাতরাস্তা হয়ে অফিসে যাতায়াত করি। কিন্তু আজকে শাহবাগ মোড় বন্ধ থাকায় নীলক্ষেত মোড় হয়ে কাঁটাবন-মোতালেব প্লাজা হয়ে আসার জন্য বের হওয়ার পর ওই সড়কে তীব্র যানজটের শিকার হই।
‘প্রায় ছয় বছর ধরে এই সড়কে আমার নিয়মিত যাওয়া-আসা। কিন্তু আজকের মত এত যানজট কখনও দেখিনি। পলাশীর মোড় থেকে সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত রাস্তা পুরো ব্লক ছিল।
একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ী মেহেদী আলম। তিনি বলেন, খণ্ড খণ্ড মিছিল যাওয়ার জন্য সিগনালগুলো আটকে রাখা হচ্ছে। কিন্তু একটি মিছিল যেতে না যেতেই আরেকটি চলে আসছে। ফলে দীর্ঘক্ষণ কাঁটাবন মোড়ে আটকে থাকতে হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হল থেকে ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজে একটি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। শাহবাগ থেকে কাওরান বাজার পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকায় এবং কাওরান বাজার থেকে ফার্মগেটের বাস না পাওয়ায় পুরোটা পথ তাকে হেঁটেই আসতে হয়।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: শাহবাগ মোড়ে এসে দেখি কোন বাস চলছে না। হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। এদিকে আমার হাতে সময়ও কম। তাই হাঁটা শুরু করলাম। ভাবছিলাম বাংলামোটর থেকে বাস পাবো। কিন্তু সেখান থেকে কোন বাস না পেয়ে কাওরান পর্যন্ত আসি। কাওরান বাজার থেকেও কোন বাস না পেয়ে তেঁজগাও কলেজ পর্যন্ত হেঁটেই আসতে হয়। তাই পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বের হওয়ার পরও পরীক্ষার হলে পৌঁছতে আমার দেরি হয়ে যায়।
ভিন্নচিত্র দেখা যায় মগবাজার-হাতিলঝিল সাতরাস্তা হয়ে পুরো তাজউদ্দিন আহমেদ সরণীতে। ওই রাস্তায় গণপরিবহনের তীব্র সংকট দেখা যায়।
নাবিস্কো মোড়ে গণপরিবহনের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা যায়। মাঝেমধ্যে দুই একটি পরিবহন আসলেও তাতে ঠেলাঠেলি করে উঠতে হয়। তাতে নারী এবং শিশুরা বিপাকে পড়ে।
নাবিস্কো মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করা শায়লা নাসরিন দুপুর আড়াইটার দিকে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: গাজীপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে পাক্কা দেড় ঘণ্টা যাবত আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি। এই দেড় ঘণ্টায় মাত্র তিনটি বাস এসেছে। অতিরিক্ত যাত্রীদের ভিড়ে আমি তাতে উঠতে পারিনি।