বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েও যেসব ব্যাংক ঋণের সুদ ৯ ও আমানতের সুদ ৬ শতাংশ হারে নির্ধারণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেনি, সেগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের আবারও চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চিঠিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঋণ ও আমানতের সুদহার কমিয়ে আনতে পুনরায় নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ’ থেকে সোমবার এ চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠির বিষয়ে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান চ্যানেল আই অনলাইন-কে বলেন: এ রকম কিছু শুনেছি আমরা। তবে আমানতের সুদ হার কমানো ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই। কারণ ঋণের সুদ হার আমরা কালকেই কমাতে পারি। কিন্তু আমানতের সুদ হার না কমলে এটা কিভাবে বাস্তবায়ন করবো। এ বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে কথা বলবো।
তিনি বলেন: ব্যাংকার হিসেবে আমরাও ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার পক্ষে ছিলাম। এখনও আছি। কিন্তু কম সুদে আমানত না পেলে ব্যাংকের পক্ষে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ বিতরণ করা সম্ভব নয়।
সুদ হার এক অংকে নামিয়ে আনতে সবার সহায়তা কামনা করে মাহবুবুর রহমান বলেন: ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নের জন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সহায়তা চাই। যারা আমানত রাখেন তাদের যদি মানসিকতায় পরিবর্তন আসে তাহলে, আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নেমে আসবে।
দেশের প্রায় সব বেসরকারি ব্যাংকের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে: ‘২০১৮ সালের ২ আগস্ট সাবেক অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক সভায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (বিএবি) ঘোষিত ঋণ বা বিনিয়োগের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ এবং ৩ মাস বা তার বেশি কিন্তু ৬ মাসের কম মেয়াদি আমানতের সুদহার সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ বাস্তবায়নের বিষয়ে মতৈক্য হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর এক পত্রের মাধ্যমে বিএবির ঘোষণা অনুযায়ী ঋণ বা বিনিয়োগের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্ধারণের জন্য ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেয়া হয়।
কিন্তু চলতি বছরের জুনের সুদ বা মুনাফার হার বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায়, আপনাদের (চিঠি প্রাপকের) ব্যাংকের ঋণ বা বিনিয়োগের সুদ এবং ৩ মাস বা তার বেশি কিন্তু ৬ মাসের কম মেয়াদি আমানতের সর্বোচ্চ সুদ বা মুনাফার হার যথাক্রমে ৯ ও ৬ শতাংশের বেশি নির্ধারিত রয়েছে, যা কাঙ্ক্ষিত নয়।’
চিঠিতে সুদহার কমানোর তাগিদ দিয়ে বলা হয়, বিএবির ঘোষণা অনুযায়ী ঋণ বা বিনিয়োগ এবং আমানতের সুদ বা মুনাফার হার হ্রাস করার জন্য আপনাদের পুনরায় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’
এর আগে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী নিজেও একাধিকবার ব্যাংকগুলোকে সুদের হার এক অংকে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও সেই নির্দেশ মানেনি এবিবি। এমনকি এ জন্য সরকারের কাছ থেকে নানা সুবিধা নিয়েও শেষ পর্যন্ত কথা রাখেনি ব্যাংক মালিকদের এ সংগঠন।