চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

নয়াপল্টনে বিষাদের সুর

নির্বাচন পরবর্তী বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়

চিরচেনা ভঙ্গিতে বসে আছেন। উত্তরমুখী চেয়ারটি তার নিজস্ব! পরণে লুঙ্গি। শরীরে শাল মোড়ানো। স্মার্টফোনে কী যেন দেখছিলেন। সামনে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে হালচাল জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘এইতো যেমন থাকা উচিত’!

তিনি বিএনপির কণ্ঠস্বর, যার স্বভাবসিদ্ধ কথায় প্রতিপক্ষ জবাব দিতে প্রস্তুত থাকে। সংবাদ সম্মেলনে যার জুড়ি নেই, বিএনপির মুখপাত্র ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একান্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। কারাবন্দি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অন্ধ অনুগত। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মতো একাদশ নির্বাচনে তিনিও অংশগ্রহণ করেননি!

মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার সময় দেখা গেলো চিরচেনা রাজধানীর নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কাযালয়ে অচেনা চিত্র। দেখা গেল বিষাদের সুর! গেটে একজন প্রহরী বসে ঝুমোচ্ছেন। তৃতীয় তলায় রুহুল কবির রিজভীর পাশের সিটে চুপচাপ বসে আছেন সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রদল নেতা এবং নেত্রকোনা ২ আসনের বিএনপি প্রার্থী ও জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ডা. আনোয়ারুল হকসহ আরো দুয়েকজন নেতাকর্মী।

তাদের আলোচনার বিষয় নির্বাচন। নিজেদের মধ্যকার হতাশাজনক কথাবার্তা চলছিলো। রিজভী আহমেদের কাছে নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে ‘না’ বললেন।

জানালেন, কোনো মিডিয়ায় কথা বলিনি। তোমাকেও বলতে চাই না এখন। সময় আসুক তখন জানাবো। তবে অনানুষ্ঠানিক কথা চললো। আড্ডার এক ফাঁকে বললেন, ‘এই সরকারের স্বরূপ আমরা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছি। তাদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়েছি’।

নতুন বছরে নতুন উদ্যমে ক্ষমতার পাটাতনে বসার একগুচ্ছ স্বপ্ন ছিলো জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া রাজনৈতিক দল বিএনপির। দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনরায় আসবে ধানের শীষের পক্ষে। জয়ী হবে বিপুল ভোটে। পতন হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। কারাগারে থাকা দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মুক্তি হবেন। দেশে ফিরে আসবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান!

কিন্তু সব স্বপ্ন ধূলোয় মিশে গেছে একদিনেই! কোনো সমীকরণ কাজে দেয়নি বিএনপির। সব আশা-স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে ৩০ ডিসেম্বর! নজিরবিহীনভাবে হেরে গেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্ট।

নির্বাচনে ড. কামাল হোসেন ঐক্যফ্রন্টসহ সব দল মিলে আসন পেয়েছে মোটে ৭টি। ক্ষমতা তো দূরের কথা, বিরোধী দল হওয়ার যোগ্যতাও অর্জন করতে পারেনি বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট।

ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপি ও ২০ দল এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে অবিলম্বে নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। কিন্তু কেন প্রত্যাখ্যান, কিভাবে এমন ফলাফল আসলো নিজেরাও বুঝতে পারছে না।

ঐক্যফ্রন্ট আগামী ৩ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনে নির্বাচন বাতিল ও নতুন নির্বাচনের দাবি নিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করবে। এসময় নিজের ৩শ প্রার্থী সহ অন্যান্য দলের প্রার্থীদেরও সঙ্গে নেওয়ার কথা রয়েছে। এরপর নতুন আন্দোলনের কথা ঘোষণা করবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। ৩শ আসনের মধ্যে মহাজোট একাই পেয়েছে ২৮৮ আসন। আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র ৭টি আসন।