অভিযোগ গঠন পর্যায়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে নড়াইলের জেলা ও দায়রা জজ শেখ আব্দুল আহাদ মারাত্মক ভুল করেছেন। যা ন্যায় বিচারের পরিপন্থি বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন হাইকোর্ট।
নড়াইলের এনামুল শেখ হত্যা মামলায় প্রধান আসামি মল্লিক মাঝহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন না করে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া সংক্রান্ত রায়ে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হাইকোর্টের এই রায়ে আরো বলা হয়: ‘নড়াইলের দায়রা জজ আসামির আবেদনে নিষ্পত্তির সময় মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র, সাক্ষীদের জবানবন্দীসমূহ, সুরতহাল ও ময়না তদন্ত প্রতিবেদন অর্থাৎ মামলার নথি ও প্রয়োজনী কাগজাদি আদৌ বিবেচনায় নেন নি। শুধুমাত্র আসামিপক্ষের বক্তব্য এবং আসামির পেশাগত অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে তাকে মামলা হতে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে শুধু বিষ্ময়করই মনে হয়নি বরং দায়রা জজের দায়রা মামলা পরিচালনার যোগ্যতা এবং ফৌজদারী আইন এবং তাঁর জ্ঞান ও ধারনা সম্পর্কে যুক্তিসংগত সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। যা মেনে নেয়া খুবই কষ্টকর।’
এছাড়া হাইকোর্ট তার রায়ে বলেন: ‘এই আদালত (হাইকোর্ট) থেকে কারণ দর্শানোর প্রেক্ষিতে নড়াইলের (সাবেক) দায়রা জজ জনাব শেখ আবদুল আহাদ লিখিতভাবে একটি জবাব প্রদান করেন, যেখানে তিনি ভুল স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। কিন্তু আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, বিজ্ঞ বিচারক আইনগত ভুল করেছেন -এধরনের কোন আত্ম-উপলব্ধি বা অনুশোচনার অবস্থান থেকে ক্ষমা চাননি।
বরং মনে হয়েছে যে, যেহেতু হাইকোর্ট বিভাগ ভুল ধরেছে কেবলমাত্র সে কারনেই তিনি ভুল স্বীকার ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। সুতরাং, সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আমাদের সুচিন্তিত অভিমত এই যে, নড়াইলের বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ শেখ আব্দুল আহাদকে আগামী ১ (এক) বৎসরের জন্য দায়রা মামলা পরিচালনা থেকে বিরত রাখা প্রয়োজন; যাতে এ সময়ের মধ্যে বিজ্ঞ বিচারক দায়রা মামলা পরিচালনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন।’
এর আগে ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের কালিয়ার কলেজ ছাত্র এনামুলকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পরদিন মল্লিক মাঝহারুল ইসলাম ওরফে মাঝাসহ ৬৮জনের নাম উল্লেখ করে নিহতের ভাই নাজমুল হুদা কালিয়া থানায় মামলা করেন। এই মামলায় তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর প্রধান আসামি নড়াইল জেলা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর জামিন দেয় আদালত।
এরপর ওই মামলায় চলতি বছরের ১০ জুন নড়াইলের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মামলার প্রধান আসামি মাঝার নাম বাদ দিয়ে অভিযোগ গঠন করেন। এরপর বিচারিক আদালতের ওই আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন নিহত এনামুলের ভাই নাজমুল হুদা। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৭ জুলাই হাইকোর্ট এক আদেশে মামলার প্রধান আসামি মল্লিক মাঝহারুল ইসলামকে আত্মসমর্পনের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে জেলা ও দায়রা জজ শেখ আব্দুল আহাদের বিচারিক ক্ষমতা কেন প্রত্যাহার করা হবেনা সে বিষয়ে তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
হাইকোর্টের এই আদেশের পর সংশ্লিষ্ট আসামি নড়াইল আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাকে জামিন দেন। তবে নড়াইল আদালতের দেওয়া এই জামিন কেন বাতিল করা হবে না তা, জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে সে রুলের শুনানি নিয়ে গত ২৯ আগষ্ট রায় ঘোষনা করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট তার রায়ে শেখ আব্দুল আহাদকে এক বছর ফৌজদারি মামলার বিচার কাজ পরিচালনা থেকে বিরত রাখার অভিমত দিয়ে আদেশ দেন।
সেই সঙ্গে এনামুল শেখ হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে দেয়া অব্যাহতির আদেশ বাতিল করেন। ২৯ আগষ্টের দেয়া সেই রায় আজ পূর্ণাঙ্গ রূপে প্রকাশিত হয়। যেখানে বিচারক শেখ আব্দুল আহাদের বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অভিমত দিয়েছেন হাইকোর্ট।