নেপালে রপ্তানির জন্য কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ১০৯ কোটি ৭৪ লাখ ৪৭ হাজার ৮১২ টাকা ব্যয়ে ৫০ হাজার টন গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনায় অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
বুধবার অনলাইনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সভা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে সংবাদিকদের এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী।
তিনি জানান, সভায় অনুমোদনের জন্য ৫টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের ২টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ১টি প্রস্তাবনা। ৫টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ৪৩৮ কোটি ৯৬ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪৯ টাকা।
তবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কুমিল্লায় পুলিশের আবাসান প্রকল্প প্রস্তাবটি ফেরত দেয়া হয়েছে। কারণ প্রকল্পটির মেয়াদ রয়েছে মাত্র ৪ থেকে ৫ মাস। তাই আজকের বৈঠকে ৪টি প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭২ কোটি ৫১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, নেপাল সরকারকে ফেরতযোগ্য ঋণ সহায়তা দেয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) কাফকো থেকে ৫০ হাজার টন গ্র্যানুলার ইউরিয়া ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১০৯ কোটি ৭৪ লাখ ৪৭ হাজার ৮১২ টাকা।
নেপালে সার রপ্তানি করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কাফকো থেকে সার নিয়ে নেপালকে দিচ্ছি। এটা আমাদের প্রথম ট্রেড (ব্যবসা)। আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিশেষ করে নেপালের সঙ্গে এটা আমরা করলাম। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে আমাদের ভাবমূর্তি আরও ভালো হবে।
বাংলাদেশ সার আমদানি করে চাহিদা মিটিয়ে থাকে। এখন আমদানি করে আবার রপ্তানি করা হবে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমদানি করেও রপ্তানি করা যায়। সিঙ্গাপুরও আমদানি করে রপ্তানি করে। তারা নিজেরা কিছু তৈরি করতো না। আমরাও সেটা করলাম।
দেশের অর্থনীতি নিয়ে আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা ভালো অবস্থানে আছি, তাই ঘাবড়ানো বা নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। আমরা ঠিক জায়গায় আছি। অর্থনীতি ঠিক জায়গায় আছে, ভালো অবস্থানে আছে। অনেক অনেক বেশি ভালো অবস্থানে আছে। যেটা কেউ চিন্তা করতে পারেননি তার থেকেও ভালো অবস্থানে আছে। আশা করি এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’
“সারা বিশ্বে কোথাও প্রবৃদ্ধি হয়নি। কিন্তু আমরা এখনও সব সূচকে প্রবৃদ্ধি রক্ষা করছি। সুতরাং এটা আল্লাহর অশেষ রহমত এদেশের মানুষের প্রতি।”
সভা শেষে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু সালেহ মোস্তফা কামাল ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২৫৭ দশমিক ৩৭ ডলার প্রতি টন ৪০ হাজার টন বাল্ক, বাকি ১০ হাজার টন ব্যাগড ২৬২ দশমিক ৩৭ ডলার মূল্যে এ সার দেয়া হচ্ছে। এটি লোন হিসেবে ধরা হচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৈঠকে অনুমোদিত অন্যান্য প্রস্তাবগুলো
স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন ঢাকা ওয়াসার ‘সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প (ফেজ-৩)’ প্রকল্পের কমপোনেন্ট-২ বাস্তবায়নের ডেনমার্কের র্যামবোল, বাংলাদেশের বেস্ট কনসালটিং সার্ভিস, ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং এবং দেভ কনসালটেশনকে যৌথভাবে ১০২ কোটি ৬৫ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৫ টাকায় ডিজাইন অ্যান্ড সুপারভাইজার অন কনসালটেন্ট হিসেবে চুক্তি সইয়ের অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠকে ‘সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্পের (ফেজ-৩)’ কমপোনেন্ট-১ ও ২ বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেনমার্কের র্যামবোল, ফান্সের ইজিসইউ, বাংলাদেশের বেস্ট কনসালন্টিং সার্ভিস, ইনস্টিউটিউট অফ ওয়াটার মডেলিং এবং দেভ কনসালটেশনকে যৌথভাবে ১৫৯ কোটি ৪৫ লাখ ৩৮ হাজার ৭১০ টাকায় প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োগের চুক্তি সই অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ২০২১ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন), ইবতেদায়ি, দাখিল, এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল এবং কারিগরি (ট্রেড বই) স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য অতিরিক্ত ৩ লাখ ২৮ হাজার ৮১৭টি পাঠ্যপুস্তক ৬৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকায় ক্রয়ের সংশোধিত চুক্তি সম্পাদনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।