সিলেট থেকে: ব্যাটিং অনুশীলনে সবসময়ই চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন তামিম ইকবাল। নেট সেশনে বোলারদের সঙ্গে চলে তার ভীষণ লড়াই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অফস্পিনার নাঈম হাসানের সঙ্গে বাঁহাতি ওপেনার আমুদে বিতর্ক, খুনসুটিতে সেরেছেন ম্যাচে নামার প্রস্তুতি।
ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচের স্কোয়াডে নেই নাঈম। তবুও তাকে উড়িয়ে আনা হয়েছে সিলেটে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে দুই ইনিংসে ৯ উইকেট নেয়া এ স্পিনার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডের দলে বিবেচনায় আসবেন কিনা সেটি নির্বাচকরাই ভালো জানেন। নেটে সাদা বলেও যেভাবে টাইগার ব্যাটসম্যানদের উপর ছড়ি ঘোরাচ্ছেন, তাতে ওয়ানডে ক্যাপ পরতে হয়ত খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না ১৯ বছরের তরুণকে।
মাঠের পূর্বদিকে পাশাপাশি তিনটি নেটে ব্যাটিং করছিলেন তামিম ইকবাল, আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদী হাসান মিরাজ। আফিফ ও মিরাজকে বোলিং করছিলেন পেসাররা। প্রথমবার ওয়ানডে দলে ডাক পাওয়া আফিফ শান্ত থেকে করেছেন ব্যাটিং। ওয়ানডে দলে থিতু হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে সিলেট আসা মিরাজও ছিলেন চুপচাপ। তামিম যে নেটে ব্যাট করছিলেন, সেটিতে ছিল একদমই ভিন্ন আবহ।
নাঈমের সব ডেলিভারি থেকে কত রান আদায় করে নিতে পারেন সেটি ছিল তামিমের চ্যালেঞ্জ। নাঈম চেষ্টা করেছেন বল যত ডট দেয়া যায়। প্রথম ১০ বলে কোনো রানই নিতে পারেননি তামিম। পরে অবশ্য পুষিয়ে দিয়েছেন। মোট ২১ বল খেলে নেন ১৫ রান।
তামিমকে বোতলবন্দী করে রাখতে পারায় চ্যালেঞ্জে জয়ী মূলত নাঈমই। তামিম অবশ্য নিজেকে ব্যর্থ মানতে নারাজ। নাঈমকে বলছিলেন, শেষ ১১ বলে ১৫ নিলাম, একশর উপরে স্ট্রাইকরেট। মন্দ কী! তামিমের কথা শুনে স্বল্পভাষী নাঈম শুধুই হাসেন।
কিছুক্ষণ পরই বোলিংয়ে বিরতি নাঈমের। খানিকসময় বিশ্রাম নিয়ে তামিম চলে যান মাঝখানের নেটে। ভেট্টরির থ্রোয়ার থেকে ছুটে আসা দ্রুতগতির বলে খেলতে থাকেন দারুণ।
তামিম শুরুতে খেলেছেন চার স্পিনারকে। ম্যাচে আম্পায়ার যেখানে দাঁড়ান সেখানে ছিলেন স্পিন কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টরি। আর নেটের পেছনে পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসন। নাঈম ছাড়াও ওই নেটে ছিলেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম, মোহাম্মদ মিঠুন ও একজন নেট বোলার।
মিঠুনের কাজটা ব্যাটিং হলেও অফস্পিনে খুব খারাপ করেননি। একাদশে থাকতে হলে তার লড়াই করতে হবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে। যেখানে মাহমুদউল্লাহকে টেক্কা দিতে হলে মিঠুনকেও হয়ে উঠতে হবে অলরাউন্ডার!
নেটে তামিমের লড়াইটা নাঈমের সঙ্গে হলেও সেখানে কথার লড়াইয়ে যোগ দিয়েছিলেন তাইজুলও। এ বাঁহাতি স্পিনারের বলে বেশ কয়েকটি বড় শট খেলেন তামিম। ব্যাটসম্যানকে খ্যাপাতে সেগুলোকে ‘আউট’ বলে দাবি করেন তাইজুল। তর্ক জমার আগেই গিবসন পেছন থেকে জানিয়ে দেন, এটা ছয়। তামিমকে খ্যাপাতে এমন চেষ্টা তাইজুল করলেন আরও কয়েকবার।
আফিফের নেটে দাঁড়িয়ে থাকা ভেট্টরিকে জানিয়ে হঠাৎ করেই নেট ছাড়েন তামিম। অনুশীলনে প্রথম ধাপটা শেষ করেছেন সন্তুষ্টি নিয়েই। পরে গতিময় বলের সামনে দেখান আগ্রাসী মেজাজ। রোববার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে এমন তামিমকেই দেখতে চাইবে বাংলাদেশ।
তামিম খেলার ধরণ বদলেছেন অনেকদিন হল। শুরুতে নেমে শেষপর্যন্ত টিকে থাকার লক্ষ্য থাকে এ ব্যাটসম্যানের। যতবেশি ওভার ক্রিজে থাকা যায় সেটি তার কাছে দলেরও চাওয়া। যদিও তার স্ট্রাইকরেট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থামেনি। শুরুতে দেখেশুনে খেললেও খুববেশি সমস্যা হচ্ছে না দলের। তামিমের ইনিংস বড় হওয়া দিয়েই কথা। তিনি লম্বা সময় ক্রিজে থাকলে বাংলাদেশের সংগ্রহটাও যে বড় হয়ে ওঠে বেশিরভাগ সময়ই।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দারুণ এক কীর্তির সামনে রয়েছেন তামিম। নামের পাশে ১০৮ রান যোগ করতে পারলে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে পৌঁছে যাবেন ৭ হাজার রানের মাইলফলকে। একযুগের ক্যারিয়ারে ২০৪ ওয়ানডে খেলা ওপেনার করেছেন ৬,৮৯২ রান। ৬ হাজার রানও সবার আগে ছুঁয়েছিলেন তামিম।। পরে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম পৌঁছান একই মাইলফলকে।