ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় আরো ছয় জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৪৭ জনের জবানবন্দী গ্রহণ করা হল।
মঙ্গলবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক(জেলা ও দায়রা জজ) মামুনুর রশিদের আদালতে মামলার সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।
আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে জেলা জজ আদালতের সরকারী কৌসুলি (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ বলেন, বুধবার আদালতে সোনাগাজী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী, স্থানীয় অধিবাসী ও সাবেক ইমাম হাফেজ মোবারক হোসেন, রং মিস্ত্রী মো. ইব্রাহিম, সোনাগাজী সরকারী কলেজের উপাধ্যক্ষ রেজা মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, স্থানীয় অধিবাসী ও ভূঁঞা বাজার টেইলার দোকানী মো. নুর উদ্দিন ও ভূঁঞা বাজার বণিক সমিতির সেক্রেটারি আকরাম হোসেনের সাক্ষ্য ও জেরা করা হয়।
আদালত সূত্র জানায়, সাক্ষ্য দিতে গিয়ে সোনাগাজী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, গত ২০ এপ্রিল সোয়া ১১টার সময় পিবিআই টিম নুসরাতের গায়ে আগুন লাগানোর ঘটনার সময় আসামি জোবায়েরের ব্যবহৃত বোরখাটি উদ্ধারের জন্য নুসরাত হত্যা মামলার আসামি সাইফুল ইসলাম মোহাম্মদ জোবায়েরকে নিয়ে সোনাগাজী সরকারি কলেজের দক্ষিণে ডাঙ্গি খালের নিকট আসেন। খবর শুনে আমি ও উপাধ্যক্ষ রেজা মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী সেখানে যাই। তখন পিবিআই টিম জোবায়েরের দেখানো মতে ডাঙ্গি খালে স্থানীয় লোকজন দিয়ে তল্লাশী চালায়। এক পর্যায়ে সোনাগাজী-দাসের হাট সড়কের পাশে ডাঙ্গি খালের ভিতর হতে লোকজন একটি কালো বোরখা উদ্ধার করেন। আসামি সাইফুল ইসলাম মোহাম্মদ জোবায়ের নুসরাতের গায়ে আগুন লাগানোর সময় উক্ত কালো বোরখাটি পরেছিল, নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য। নুসরাতের শরীরে আগুন দিয়ে পালানোর সময় সে বোরখাটি ওই স্থানে ফেলে যায়। এ সময় কর্মকর্তারা জব্দ তালিকা প্রস্তুত করে দিলে আমি তাতে স্বাক্ষর দিই। অপর সাক্ষী সোনাগাজী সরকারী কলেজের উপাধ্যক্ষ রেজা মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরীও একই বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
অপর সাক্ষী সোনাগাজী থানার ৮নং ওয়ার্ডের দিনমজুর মো. ইব্রাহীম বলেন, আমি একজন দিনমুজুর। গত ২০ এপ্রিল বোরখা উদ্ধারের সময় আমি কলেজের দক্ষিণ পাশে রাস্তার উপর ছিলাম। আমাকে পিবিআই টিম খালে নামতে বলেন। আমি ওই খালের ভিতর একটি কালো বোরখা পাই। সেখানে তখন সানাগাজী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষসহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় কর্মকর্তারা জব্দ তালিকা প্রস্তুত করে দিলে আমি তাতে সাক্ষর দেই।
অপর সাক্ষী সোনাগাজীর চর চান্দিয়া ভূঁঞা বাজারের টেইলার্স দোকানী বলেন, গত ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় পিবিআই টিম আসামী শাহাদাৎ হোসেন শামীমসহ ভূঁঞা বাজারে মুদী দোকানদার লিটনের দোকানে আসেন এবং শামীমের দেখানো ও সনাক্ত মতে ১টি প্লাস্টিকের চুঙ্গা, ১টি হাতলযুক্ত টিনের লিটার, ১টি কালো পলিথিন ব্যাগ, ১টি পুরাতন নীল রং এর প্লাস্টিকের ড্রাম উদ্ধার করেন। এ সময় কর্মকর্তারা জব্দ তালিকা প্রস্তুত করলে আমি তাতে সাক্ষর দেই। অপর সাক্ষী ভূঁঞা বাজার বণিক সমিতির সেক্রেটারি আকরাম হোসেন একই বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
সোনাগাজী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী’ তার জবানবন্দীতে বলেন, ‘আসামি জোবায়ের দেখানো মতে নুসরাতের গায়ে আগুন লাগানোর যে কালো বোরখাটি পরেছিল, তা কলেজের পাশে ডাঙ্গি খালের ভিতর হতে লোকজন উদ্ধার করেন।”
আদালত সূত্রে বলা হয়, সাক্ষ্য শেষে সাক্ষীদের জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। রাষ্ট্র ও বাদি পক্ষে ছিলেন পিপি হাফেজ আহাম্মদ, এপিপি এ কে এস ফরিদ আহাম্মদ হাজারী ও এম শাহজাহান সাজু। বুধবার শুনানি চলাকালে আলোচিত এ মামলার ১৬ আসামী আদালতে হাজির ছিলেন।
বৃহস্পতিবার মামলার সাক্ষী এমদাদ হোসেন পিংকেল, মো. শাহ জাহান, মো. আবুল কাশম ও মো. সেলিনুর রেজার সাক্ষ্য গ্রহণের কথা রয়েছে।