ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স ও সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিতদের করা আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
এ বিষয়টি চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান।
এর আগে এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স ও দণ্ডিতদের আপিল সম্বলিত পেপারবুক সরকারি ছাপাখানা বিজি প্রেস থেকে প্রস্তুত হয়ে হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় আসে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক বিচারিক আদালতের দেওয়া কোন মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য মামলার রায়সহ নথি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে পাঠাতে হয়। সেই অনুযায়ী নুসরাত জাহান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) নথি এর আগে হাইকোর্টে আসে।
এর আগে গত বছরের ২৪ অক্টোবর নুসরাত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ। আলোচিত সে রায়ে মামলার প্রধান আসামি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। বিচারিক আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিলের পাশাপাশি দণ্ডিতদের পক্ষ থেকে পরবর্তিতে আপিল করা হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মো. রুহুল আমিন, ছাত্র নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম, পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মো. জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে শাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, শিক্ষক হাফেজ আবদুল কাদের, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, নুসরাতের সহপাঠী কামরুন নাহার মণি ও উম্মে সুলতানা পপি; আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মো. শামীম ও মহি উদ্দিন ওরফে শাকিল।
গত বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তার মা শিরিনা আক্তার সোনাগাজী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করলে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলা তুলে না নেওয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বোরকা পরা পাঁচজন। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে নুসরাতের মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে নুসরাত তার শরীরে অগ্নিসংযোগকারীদের নাম উল্লেখ করেন।
অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান (নোমান) সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। এরপর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এ মামলার তদন্ত শেষে মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত। পরবর্তীতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহন সহ সকল বিচারিক কার্যক্রম শেষে ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।
অন্যদিকে নুসরাতের জবানবন্দীর ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশের ঘটনায় ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের করা মামলায় সোনাগাজীর সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমকে আট বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা এই মামলায় ওসি মোয়াজ্জেমকে ১০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়।