চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ফারুকী হত্যার ৩ বছর পর ‘ধারণা’ পাওয়ার কথা বলছে সিআইডি

হত্যার তিন বছর পরও চ্যানেল আইয়ের ইসলামিক অনুষ্ঠান ‘কাফেলা’ ও ‘শান্তির পথ’র উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশের একাধিক তদন্ত সংস্থা।

তদন্তের অগ্রগতি হিসেবে তিন বছরে শুধুমাত্র একটা ধারণা কথা বলছে মামলাটির তৃতীয় তদন্ত সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। তাদের ধারণা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ডে জড়িত জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের-জেএমবি স্লিপার সেল।

তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ায় বারবার সময় দিয়েও আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ শুরু করতে পারেনি বিচারিক আদালত। প্রতিবেদন পেতে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর নতুন করে দিন ধার্য করেছেন আদালত।

তিন বছর আগে ২০১৪ সালের ২৭ অক্টোবর রাতে রাজধানীর ১৭৪, পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাসায় মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই সময় বাসার দোতালায় তার স্ত্রী ও স্বজনদের আটকে রেখে হত্যার পর পালিয়ে যায় অজ্ঞাত কয়েকজন খুনি।

সেই হত্যাকাণ্ডের পর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় শেরে বাংলা নগর থানা। এরপর তাদের কাছ থেকে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ-ডিবি তদন্ত শুরু করে। সবশেষ তদন্ত কাজ করছে সিআইডি। এরই মধ্যে মোট তিন জন তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে, বর্তমানে চতুর্থ কর্মকর্তা হিসেবে তদন্ত করছেন সিআিইডির পরিদর্শক আরশাদ আলী মণ্ডল। কিন্তু তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই।

মামলাটি নিয়ে আরশাদ আলী মণ্ডল চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, মামলায় ধর্মীয় মতবাদ ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। গুরুত্ব সহকারে তদন্তও করা হচ্ছে, দ্রুতই মামলাটির ফলাফল পাওয়া যাবে।

মাওলানা ফারুকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই জন জামিনে। গ্রেফতারকৃতরা হলো তারিকুল ইসলাম ওরফে মিঠু, আলেক বেপারী, আব্দুল গাফফার, মোজাফফর বিন মহসিন, মিন্টু প্রধান, হাবুল ও মোস্তফা আহমেদ রাসেল।

মোজাফফর বিন মহসিন ছাড়া বাকি সবাই বাড্ডার কথিত পীর খিজির হায়াত খান হত্যা মামলারও আসামি।

২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর সন্ধ্যার পর রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় নিজের বাড়িতে গলাকেটে হত্যা করা হয় পিডিবির সাবেক প্রকৌশলী খিজির হায়াত খানকে। তার বাড়িটি রাহমানিয়া খানকা শরীফ হিসেবে পরিচিত ছিল। তাকে অনেকে পীর মানত।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ফারুকী হত্যার বিষয়ে কোনও স্বীকারোক্তি আদায় করা যায়নি। তারা অন্য হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করলেও ফারুকী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তারা জড়িত নয় বলে দাবি করেছে। তাদের ধারণা, মাওলানা ফারুকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জেএমবির অন্য কোনও স্লিপার সেল জড়িত থাকতে পারে।

ফারুকী হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া খুনিদের ধরতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানায় তদন্ত কর্মকর্তা।

গত ১০ আগস্ট মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকা মহানগর হাকিম এস এম মাসুদ জামান আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর নতুন তারিখ ধার্য করেন।

নুরুল ইসলাম ফারুকী ১৯৫৯ সালের ২৪শে নভেম্বর পঞ্চগড় জেলার নাউতারী নবাবগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা জামশেদ আলী। তিনি নীলফামারী জেলার ডোমার থানার অন্তর্গত চিলাহাটি জামিউল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে ১৯৭৫ সালে দাখিল ও পরে আলিম পাস করেন।

নিহত ফারুকী ১৯৮১ সালে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার জামে মসজিদের খতিব হিসেবে যোগ দেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন মসজিদে ৩৩ বছর ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন আলিয়া মাদরাসায় ১৫ বছর শিক্ষকতা, রেডিও, টেলিভিশনে ২৫ বছর ওয়াজ-নসিয়তের অনুষ্ঠানও করেছেন।

তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের খতিবের দায়িত্বও পালন করতেন।