গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন: নতুন ঢাকায় একেবারে অনিয়মের বিল্ডিংগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। যেটাকে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে টিকিয়ে রাখা যায়, সেই বিল্ডিংকে সেভাবে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। একেবারে অনিয়মের বিল্ডিং ভাঙা না হলে সিলগালা করে দেয়া হবে।
শুক্রবার সকালে ঢাকার সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মিট দ্যা রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন: ‘আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বনানীর এফ আর টাওয়ারের তদন্ত আলোর মুখ দেখবে, আমি আনন্দিত, তদন্ত রিপোর্ট সাংবাদিকদের সামনে আমি নিয়ে এসেছি এবং ৬২জন কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করে রিপোর্ট দেয়া সম্ভব হয়েছে। আমার মনে হয় বাংলাদেশের আটচল্লিশ বছরের ইতিহাসে এমন কোনো রেকর্ড নাই যে নিজ সংস্থার ৬২ জনকে দায়ী করে মন্ত্রী প্রেস ব্রিফ্রিং করে সবার হাতে রিপোর্ট তুলে দেন। দুর্নীতির ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্সের প্রশ্নে ৬২ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজউককে আমরা লিখিত নির্দেশ দিয়েছি’।
নিজের অবস্থান আবারও পরিষ্কার করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন: আমি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছি উপরে আল্লাহ নিচে শেখ হাসিনা, মাঝখানে আমার কোনো তদবির নাই। আমি আমার এ অবস্থান আবারও পুনর্ব্যক্ত করছি। সবার সহায়তায় আমরা পরিবেশবান্ধব আবাসন সারা বাংলাদেশে করতে চাই।
মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকার বহুতল ভবনে রাজউক এর ২৪টি পরিদর্শন দল ১৮১৮টি বাড়িতে অনিয়ম পেয়েছে। এ বাড়ির মালিকেরা অনেকেই ক্ষমতায়, রাজনীতিতে ও অর্থে প্রভাবশালী, তাদের ব্যাপারে রিপোর্ট করা হবে, এটা অনেকেই ভাবেননি। আমি রিপোর্ট সংগ্রহ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজউককে নির্দেশ দিয়েছি। রাষ্ট্রের সংবিধান সুযোগ দেয়নি, একেক জনের জন্য একেকটি আইন হবে। আইনের সমব্যবস্থা সকলের জন্য হবে। একটি বাড়িকেও আমরা আইনের বাইরে রাখতে চাই না। পুরনো ঢাকার জন্য আমরা রিডেভেলপমেন্ট প্রস্তাব দিয়েছি। একেবারে অনিয়মের বিল্ডিং ভাঙা না হলে সিলগালা করে দেয়া হবে। রাজউক এর সংশ্লিষ্ট অফিসার যথাযথ কাজ না করলে তাদের ধরার দায়িত্ব যেমন আমার, তেমনি সকল নাগরিকেরও দায়িত্ব রয়েছে’।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে যে অনিয়ম দেখেন তার নিউজ হওয়া উচিত। নিউজ হলে আমি অনেক সহায়ক কাজ করতে পারি। পত্রিকার নিউজের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত করবো। ইতোমধ্যে মিডিয়ার নিউজের উপর ভর করে ১২টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি’।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই একটি পরিচ্ছন্ন, জবাবদিহিপূর্ণ প্রশাসন আসুক। আমার মন্ত্রণালয়কে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চাই। নকশা অনুমোদনে ১৬টি দপ্তরের অনুমোদন প্রক্রিয়া পরিবর্তন করে আমার নির্বাহী ক্ষমতাবলে ১২টি দপ্তরের অনুমোদনের ধাপ বাদ দিয়েছি। আমরা আইন করে দিয়েছি ৫৩ দিনের ভেতরে নকশা অনুমোদন হতে হবে, ভূমির ছাড়পত্র, নামপত্তন ৭ দিনের মধ্যে হতে হবে। অটোমেশন চালু করে দিয়েছি যাতে বাসায় বসে নকশার আবেদন করা যায়। সকল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে একই নিয়ম চালু করেছ’।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তরে সিন্ডিকেট ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করতে না পারলেও আমি কমিয়ে আনতে পেরেছি। অনেক চূড়ান্ত টেন্ডারকে আমি বাতিল করে নতুন টেন্ডার করিয়েছি। আমার জায়গা আমি যতটা পারি পরিষ্কার রাখতে চাই’।
বিজিএমইএ ভবন ভাঙা এবং জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অনিয়ম সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘বিজিএমইএ ভবন ভাঙার জন্য টেন্ডার আহ্বান করে আমরা সর্বোচ্চ দরদাতাকে নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের সাথে চুক্তি করা হবে এবং চুক্তির শর্তে কোনভাবেই জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় ভবন ভাঙতে দেয়া হবে না। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অনিয়মের ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নেবো’।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘গেন্ডারিয়ায় রাজউক এর জায়গা দখল করে সুপ্রীম কোর্টের একটি রায় নেয়া হয়েছে। এরপরও অ্যাটর্নী জেনারেলকে চিঠি দিয়ে এটা রিভিউ করার অনুরোধ জানিয়েছি। প্রয়োজনে নতুন করে মামলা করা হবে। গেন্ডারিয়ায় পুকুরসহ বিশাল এলাকা দখল করে মার্কেট করতে দেয়া হবে না, আমি আশ্বস্ত করতে পারি’।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খানের সঞ্চালনায় মিট দ্যা রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন।