চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

নিশান-ই পাকিস্তান বাংলাদেশে শিরোশ্ছেদ-ই জামাত

জামায়াতে ইসলামী ও তার মিত্র সংগঠনগুলো যে ভিনদেশী আদর্শ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তৎপর তা পরিষ্কার হয়ে গেলো পাকিস্তান কর্তৃক মতিউর রহমান নিজামীকে নিশান-ই পাকিস্তান খেতাব প্রদানের ঘোষণায়। ধর্মের আবরণে তাদের এই দেশদ্রোহী চেতনার স্বরূপ উন্মোচন করে দেয়ার জন্য পাকিস্তান ধন্যবাদ পেতে পারে।

যুদ্ধাপরাধী হিসাবে তার ফাঁসি কার্যকরের পরপরই এরকম একটি খেতাব সরকারের বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা হতে রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে। জামায়াতে ইসলামী যে বাংলাদেশের জন্মশত্রু, পাকিস্তানের অনুসারী তা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠল।

অথচ এই নিজামীই জাতীয় দিবসে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছে,পতাকাবাহী গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। মানুষ তার ভণ্ডামো বুঝতে না পেরে তাকে ভোট দিয়ে এমপিও বানিয়েছে। একজন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার দল দলীয় ক্ষমতা দখলের স্বার্থে তাকে জোটে ভিড়িয়ে জোট নেতা বানিয়েছে। পরবর্তীতে মন্ত্রীও বানিয়েছে।এগুলো আমাদের রাজনীতি চর্চার লজ্জাজনক দিক। তেল ও দুধের মাঝে যেমন আসলের পাশাপাশি ভেজাল তেল ও ভেজাল দুধ থাকে।

তেমনই আসল নেতা, নকল নেতা,আসল ধার্মিক,নকল ধার্মিক, আসল মুক্তিযোদ্ধা, নকল মুক্তিযোদ্ধা ও আসল বাংলাদেশী, নকল বাংলাদেশী থাকে। এরকম অবস্থানের সত্যতা দিনের পর দিন অধিকতর স্পষ্ট হয়ে উঠছে। মাঝে মাঝে বিভিন্ন হাট বাজারে আসল পণ্য রক্ষায় ভেজাল পণ্যবিরোধী মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। এতে ভেজালকারীদের জেল জরিমানাও হয়।ধর্ম, মুক্তিযোদ্ধা,রাজনৈতিক নেতা কর্মী ও নাগরিকদের ক্ষেত্রেও ভেজাল বিরোধী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অতীব জরুরি হয়ে গেছে।

বাংলাদেশে বসবাস করে যেমন ভিনদেশের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের কুটিল প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে তেমনই দলের ভেতরে থেকে দলের ক্ষতির কারণ হওয়ার ধূর্ত প্রক্রিয়াও চালু রয়েছে।সময়ে এসব ভণ্ডামোর স্বরূপ উন্মোচিত না হলে দেশ,জাতি ও জনগণের ভয়াবহ ক্ষতি সাধনের আশঙ্কা থাকে।

ভিনদেশী পতাকার আস্থাভাজন মতিউর রহমান নিজামী ও তার দল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জননিরাপত্তায় ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়েছে। অন্তরে নিশান-ই পাকিস্তানের চেতনা লুকিয়ে রেখে নিশান -ই বাংলাদেশ সেজে নিশ্চিন্ত মনে ভণ্ডামো করে গেছে নিজামী,তার অনুচর ও দল। তাদের এই ভণ্ডামোতে অনেক নিরাপরাধ শিশু কিশোর বিভ্রান্ত হয়েছে। রক্ত ঝরেছে কত শত মানুষের।

ধর্মের নামে শহীদ হওয়ার ভূঁয়া তত্ত্বকথায় নিষ্পাপ শিশু কিশোরদের আত্মঘাতী বোমা হামলায় উদ্বুদ্ধ করে খুনী বানিয়ে বেহেশত গমনের লোভ দেখিয়েছে তারা। টুপি, দাড়ির সম্মান নষ্ট করেছে এইসব ভণ্ডের দল। পাকিস্তান কর্তৃক নিশান-ই পাকিস্তান বাংলাদেশের জন্য শিরোশ্ছেদ -ই জামাত। এদেশে আর এই দেশদ্রোহী দলটির রাজনীতি করার অধিকার থাকার কথা নয়।

জামায়াত নিষিদ্ধ করতে হবে ও সেই সাথে প্রতি জেলা উপজেলায় জামায়াতের নেতাকর্মীদের বায়োডাটা সংগ্রহ করা উচিত। ইতোমধ্যেই তারা বিরূপ পরিস্থিতি বুঝতে পেরে অনেকেই সরকারি দলে যোগদান করছে। কিছু ক্ষেত্রে তার সন্তানদের যোগদান করাচ্ছে।

গ্রুপ চর্চায় নিমগ্ন ও আগামী দিনের নিজের মনোনয়ন সমর্থক গোষ্ঠী বাড়াতে অনেক এমপি প্রধানমন্ত্রীর নিষেধ স্বত্ত্বেও তাদের দলে ভিড়াচ্ছে। তারা দল, দেশ, রাজনীতি ও সামষ্ঠিক ভবিষ্যত নিয়ে মোটেও ভাবছেনা। কথা উঠছে বিএনপি, জামাতের সাথে আওয়ামী লীগ পার্থক্য হারাচ্ছে।

এর পরিণতি ভয়াবহ হতে বাধ্য। জামায়াত নির্বাচনে অযোগ্য কিন্তু তারা বিএনপি হয়ে ঠিকই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে চলেছে। তারা বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ রাজনীতিতেও আছে। দাঁড়িপাল্লা বাদ দিয়ে ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে চলছে তারা।

আর অপর দিকে চলছে সরকারী দলে যোগদান। অনেক জায়গায় যোগ দিচ্ছে জামায়াত কর্মী,  কিন্তু বলা হচ্ছে বিএনপি কর্মী। এই আত্মঘাতী প্রক্রিয়ার ভবিষ্যত কী। যোগদানে নেতৃত্বদানকারী এমপিরা রয়েছেন তাদের একচ্ছত্র নেতৃত্ব, কর্তৃত্বের ভিত মজবুত করা নিয়ে।

দল, দেশ,জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি,নেত্রীর নিরাপত্তাহীনতা এসব তাদের ভাবনায় নেই। রাজাকারের সন্তানদের নেতৃত্ব দখল, নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দখল এসব তারই নিদর্শন। বিএনপি জামায়াতের ক্ষমতাসীন আমলে যারা ১৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে লাঠিপেটা করেছে ও গুলি ছুঁড়েছে। অনেক জায়গায় দেখা গেছে তারাই এখন সরকার দলের নীতি নির্ধারক নেতা বনে গেছেন। আর যারা বিরোধী দলে থাকাকালে জেল, জুলুম, নির্যাতন ভোগ করেছে তারা নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব হারিয়ে ক্রমশ চুপসে যাচ্ছে। শত্রুর অবস্থান শত্রু শিবিরে থাকলে সেটা এত ভয়ের নয় যতোটা ভয়ের মিত্রবেশী বন্ধু শিবিরে অবস্থান করলে।

পাকিস্তান কর্তৃক দেয়া নিশান-ই পাকিস্তান বাংলাদেশের রাজনীতি হতে শিরোশ্ছেদ-ই জামায়াত ঘোষণায় সহায়ক হবে। সেটির চূড়ান্ত রূপ নেয়ার আগে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষীয় রাজনৈতিক দলে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগে দেশব্যাপী ভেজাল বিরোধী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা অতীব জরুরি। অনুপ্রবেশ শুরু হয়ে গেছে, জামায়াত নিষিদ্ধের পরে তা মারাত্মক আকার ধারণ করবে।

সুতরাং প্রয়োজন নিষিদ্ধের পূর্ব পরিকল্পনা ও পূর্বপ্রস্তুতি। রাজপথহারা হয়ে যে তারা কুটিল ষড়যন্ত্রের আঁকাবাঁকা পথ ধরবে সেটা খুবই বাস্তব। তাই শুধু জামায়াত নিষিদ্ধের শ্লোগান সর্বস্ব দাবী নয় চাই তা বাস্তবায়নে সুপরিকল্পিত ও বাস্তব অবস্থার বাস্তব বিশ্লেষন ধর্মী বুদ্ধিদীপ্ত পন্থা।।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)