তাকে অনুসরণ করা হচ্ছে জানিয়ে ১৫ মে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন নির্মম হত্যার শিকার হওয়া ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয়। ওই পোস্টে তিনি আরো বলেছিলেন, থানায় জিডি না নেওয়ার পাশাপাশি পুলিশের কাছ থেকে দেশ ছাড়ার পরামর্শ পাওয়ার কথাও।
এরপরের দিনই (১৬ মে) সন্ধ্যা ৬টার দিকে জাপানে থাকা তার ঘনিষ্ঠ এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ইমেইল করে বিস্তারিত জানান তিনি।
ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে ভাইয়া বলে সম্বোধন করে নিলয় লিখেন, ১৩ মে সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা অনুসরণ করছে এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পরের দিন (১৪ মে) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে খিলগাঁও থানায় জিডি করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু জিডি না নিয়ে ওই থানার কর্মকর্তা আমাকে দেশ ছাড়ে যেতে বলেন।
ইমেইলে তিনি আরো লিখেছেন, ‘ফেসবুক পোস্টে আমাকে অনুসরণ করার স্পেসিফিক জায়গার নাম উল্লেখ করিনি। এখানে করছি। খিলগাঁও থানায় যাই। সবশুনে আমাকে বলা হয়; ঘটনার শেষ স্পট আমতলা। যা শাহজাহানপুর থানায় পড়েছে। ওখানে যেয়ে চেষ্টা করে দেখতে পারেন’।
নিলয় ইমেলের আরেক জায়গায় লেখেন, ‘মুক্তচিন্তার মানুষগুলোর ওপর মৌলবাদীদের হামলায় আমি এখন আমার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এমন অবস্থায় আমি কি করতে পারি?’
পুলিশ এই ইমেইলের বিষয়টা অস্বীকার করলেও প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশের তদন্তেই নিলয়ের দাবির সত্যতা পেয়েছে। তার ফোনের অবস্থান থেকে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে ওইদিন নিলয় খিলগাঁও থানাতেই ছিলেন।
ফেসবুক পোস্ট: ১৫ মে বেলা ১১টা ২৬ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজে নিলয় উল্লেখ করেন, ‘আমাকে দুজন মানুষ অনুসরণ করেছে গতপরশু। ‘অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার’ প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে যোগদান শেষে আমার গন্তব্যে আসার পথে এই অনুসরণটা করা হয়। প্রথমে পাবলিক বাসে চড়ে একটা নির্ধারিত স্থানে আসলে তারাও আমার সঙ্গে একই বাসে আসে’।’
‘এরপর আমি লেগুনায় উঠে আমার গন্তব্যস্থলে যাওয়া শুরু করলে তাদের মধ্যে একজন আমার সঙ্গে লেগুনায় উঠে। লেগুনায় বসে আমার মনে পড়ে বাসে তো এই ব্যক্তিই ছিল। আবার ভাবি, কিন্তু তারা তো দু’জন ছিল। মনে মনে ভাবি হতেই পারে, একজনের গন্তব্য অন্যদিক তাই সে চলে গেছে।’
‘এ পর্যন্ত ব্যপারটা স্বাভাবিক ছিল কিন্তু পরবর্তীতে লেগুনায় বসে সেই যুবক ক্রমাগত মোবাইলে টেক্সট করছিল যা দেখে আমার সন্দেহ হয়। আমি আমার নির্ধারিত গন্তব্যস্থলের আগেই নেমে গেলে আমার সঙ্গে সেই তরুণও নেমে পড়ে। আমি বেশ ভয় পেয়ে সেখানের একটি অপরিচিত গলিতে ঢুকে যাই। পরে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি ওই তরুণের সঙ্গে বাসে থাকা সেই তরুণ এসে যোগ দিয়েছে এবং তারা গলির মুখেই দাঁড়িয়ে আছে। তখন আমি নিশ্চিত হই আমাকে অনুসরণ করা হচ্ছে। কারণ তাদের দু’জনের গন্তব্য একই জায়গায় হলেও তারা ভিন্নভাবে এসেছিল এবং আমাকেই অনুসরণ করেছিল।’
নিলয় তার পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘আমি ভয় পেয়ে গলির আরও অনেক ভেতরে গিয়ে রিকশা নিয়ে হুড তুলে আমার গন্তব্যস্থলে যাই এবং পরে কাছের এক বন্ধুর সহযোগিতায় নিরাপদেই পৌঁছাই।’
তিনি লিখেছেন, ‘এ ঘটনায় থানায় জিডি করতে গিয়ে উদ্ভট পরিস্থিতির সম্মুখীন হই। প্রথমেই এক পুলিশ অফিসার ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছিল যে, এ ধরনের জিডি পুলিশ নিতে চায় না। কারণ ব্যক্তির নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে যে কর্মকর্তা জিডি গ্রহণ করবে তার অ্যাকাউন্টেবেলিটি থাকবে সেই ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। আর যদি ওই ব্যক্তির কোনো সমস্যা হয়, সেক্ষেত্রে ওই পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার জন্য চাকরি পর্যন্ত চলে যেতে পারে।
নিলয় লিখেছেন, ‘থানায় জিডি করতে গিয়ে একই চিত্র দেখলাম, অনুসরণকালে অনেকগুলো থানা অতিক্রম করার জন্য ঘটনাস্থলের আওতায় থাকা একেকটি থানায় গেলেও তারা কেউ জিডি নিলেন না। তারা বললেন, আমাদের থানার অধীনে না, এটা অমুক থানার অধীনে পড়েছে ওখানে যেয়ে যোগাযোগ করুন, আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশ ছেড়ে চলে যান।’
এর পর তিনি জিডি না করেই ফিরে আসেন।