নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দিন দিন এগিয়ে গেলেও শঙ্কার খবর উঠে এসেছে অ্যাকশন এইডের একটি গবেষণায়। তারা বলছে, সঠিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত নয় বলে বাংলাদেশে নির্যাতনের শিকার অধিকাংশ নারী বিচার পায় না। আবার অল্পকিছু অভিযোগ আদালতে গেলেও মাত্র ৩ শতাংশ নারী বিচার পান।
অ্যাকশন এইড পরিচালিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: ‘নির্যাতনের শিকার নারীদের অধিকাংশই তাদের অভিযোগ বিচারক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়: বাংলাদেশের ৬৬ শতাংশ নারী পারিবারিকভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। এ নিয়ে যতগুলো মামলা হয়, তার প্রতি পাঁচটির মধ্যে চারটিই আদালতে উঠতে দুই বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। নির্যাতনের শিকারদের মধ্যে ৩ দশমিক ১ শতাংশ নারী নিজেদের পক্ষে বিচার পান। বাকি ৯৬ দশমিক ৯ শতাংশ ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আদালতে শুনানির পর্যায়ে যায় না বা গেলেও তা বাতিল হয়ে যায়।
একই অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত আরেকটি গবেষণাপত্রে বলা হয়: দেশের ৮৪ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সংক্রান্ত কোনো কমিটির কথা জানে না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৪ জন উত্তরদাতাদের মাঝে ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না, অন্যদিকে ১৪ শতাংশ উত্তরদাতা এ সম্পর্কে জানলেও তাদের পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই।
দেশের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি নারী উন্নয়ন সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা। দেশের অগ্রগতির সঙ্গে নারীর অগ্রগতি নিয়ে ব্যাপক কথা শোনা গেলেও বাস্তবে বাংলাদেশের নারীরা ঘরে-বাইরে নির্যাতনের শিকার হন। কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও একই চিত্র।
আমরা মনে করি, নারীদের এই নির্যাতনের বিচার না হওয়া খুবই হতাশার। এই গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য আমাদের সামনে নারী নির্যাতনের ভয়াবহ দিক নতুন করে তুলে ধরেছে। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ের নজরদারি বাড়াতে হবে।
নারী নির্যাতন শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে আইনি জটিলতাসহ নানা সীমাবদ্ধতা দূর করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এর পাশাপাশি এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে।
নারী নির্যাতন বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদেরসহ সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসা এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।