নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা নাটক। নিজেকে ক্ষমতায় দেখতে আদর্শ বিবেক এখন কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। বরং দল বদলের মাধ্যমে সংসদীয় আসনটা পেতে ব্যতিব্যস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তি, ব্যবসায়ী সহ সুশীল শ্রেণি।
তবে নির্বাচন কেমন হবে ভোট দিতে পারবে কিনা সে বিষয় জনমনে এখনো রয়েছে নানা প্রশ্ন। দলগুলো তাদের নির্বাচন ইশতেহার এখনো প্রকাশ করেনি। তবে আজকাল ইশতেহার দেখে জনগণ তেমন একটা ভোট দেয় না।
তারপরও একাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশের উন্নয়নের চলমান প্রক্রিয়াতে আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা যে একটু বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নির্বাচনকালীন সময়ে মানুষের চাওয়া পাওয়াকে জানার একটা আগ্রহ কাজ করে নিজের মাঝে প্রতিনিয়ত আমার। যার সূত্র ধরে ছোট একটা ঘটনা কিছু প্রশ্ন নিজের কাছে প্রশ্ন হয়ে আছে। সমাজের বিশেষ একটা শ্রেণি যেন চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে তারা বঞ্চিত। সরকার দিয়ে তাদের জীবন বদলে যায়নি বা যাবে না।
সমাজের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হিজাড়াদের ক্ষোভ তাদের অধিকার নিয়ে। তারা মনে করে, ভোট দিয়ে তাদের জীবনে পরির্বতন আসবে না।
রাস্তা ঘাটে হিজড়াদের নিয়ে বিড়ম্বনার শিকার ইদানিংকালে খুব বেশি। তেমনি এক পরিস্থিতি দেখছিলাম চট্রগ্রামের সমুদ্র সৈকতে। ৫/৬ জন করে কয়েকটি গ্রুপ হয়ে হিজাড়ারা সমুদ্র সৈকতে আসা মানুষদের থেকে টাকা তুলছে। আর কেউ দিতে না চাইলে সৃষ্টি করে নাজুক পরিবেশ। ভয়ে তটস্থ হয়ে প্রায় সবাই তাদের টাকা দিতে বাধ্য হয়।
হিজাড়াদের এসব কাণ্ড দেখে খুব ইচ্ছে হল জানতে তারা এখানে কেন এমন কাজ করছে। আর কাজ না করে এ ধরনের ভিক্ষাবৃত্তি কেন?
প্রথম কথায় তারা বলছে, সমুদ্র সৈকতের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তারা মানুষের কাছে থেকে টাকা নেয় সপ্তাহে একদিন। যা আবার সর্মথন করল সেখানকার খাবারের দোকানদাররা।
সাধারণত হিজড়াদের সাথে কথা বলতে গেলে সহজ উত্তর পাওয়া খুব কঠিন তাদের আচরণগত কারনে। তবে এরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তোয়াক্কা যে করে না বুঝা যাচ্ছিল ব্যবহার দেখে।
এরপর যখনই তাদের বলা হলো, তোমাদের জন্য সরকার বেশ কিছু সুবিধা দিয়েছে তা কি জানো না। এটা বলার সাথে সাথে কিছু অশ্রাব্য কথা দিয়ে শুরু হলো তাদের ক্ষোভ আক্ষেপের বয়ান।
সরকার খাতা কলমে বলছে তৃতীয় লিঙ্গ সমাজে তাদের ন্যায্য অধিকার পাবে। তাদের জন্য শিক্ষা কর্মসংস্থান সহ নানা বিষয়ে প্রকল্প রয়েছে। সরকারের প্রকল্প যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হতো তবে মানুষকে ভয় ভীতি দেখিয়ে তাদের টাকা আদায় করার কথা নয়।
সরকারের কথার রেশ ধরেই সমুদ্র সৈকতের হিজড়ার উল্টো প্রশ্ন করে জানতে চাইল, ট্রাফিক পুলিশসহ অনেক জায়গাতে তাদের চাকরি দেয়ার কথা। কিন্তু কোন এমন কোনো ট্রাফিক কি আমাদের চোখে পড়ছে? তাদের কথা হলো, সরকারের কাছে লিখে লিখে কাগজের পাহাড় জমে গেছে। তাই সরকার দিয়ে তাদের কী হবে। বরং তাদের ব্যবহার করে আমরা সাধারণ মানুষরা ভালো আছি। তাই রং ঢং করে এ ভিক্ষার টাকা আমাদের কাছে তাদের দাবি। তাদের ভোটের কি দাম আছে সরকারের কাছে।
কিন্তু এ শ্রেণির ভোট একটি গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য প্রয়োজন। আবার উন্নয়নের পথে এদের কর্মক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে। সুতরাং শুধু মুখের বুলি দিয়ে সরকার তার দায়ভার এড়াতে পারবে না এটাই সত্য।
কথাগুলো শুনে এক ধরনের বিষাদের ছায়া নিজের মাঝে কাজ করছে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ তৃতীয় লিঙ্গের জন্য তার সরকার আমলে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও কেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা সমাজে বঞ্চিত শ্রেণি হিসেবে উপেক্ষিত? আর কেনই বা ভোটের সময় তারা গালি দিয়ে বলে, ‘সরকার তোদের তোরা আমাদের বেইচ্যা বড়লোক। ভোট হইলে আমাগো কি?’